• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

একুশে পদক গ্রহণ করলেন ড. সমীর কুমার সাহা

প্রকাশ:  ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৮:০৭
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

বিভিন্ন ক্ষেত্রে 'গৌরবদীপ্ত অবদানের' স্বীকৃতি হিসেবে এবার একুশে পদক পেয়েছেন ২১জন বিশিষ্ট নাগরিক। পদকপ্রাপ্তদের অন্যতম চাঁদপুরের কৃতীসন্তান, বিশ্ববিখ্যাত অণুজীববিজ্ঞানী ড. সমীর কুমার সাহা। গবেষণায় বিশেষ অবদানের জন্যে তিনি এ পদকে ভূষিত হন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল শনিবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ওসমানি স্মৃতি মিলনায়তনে একুশে পদক-২০২১ বিতরণ অনুষ্ঠানে যোগ দেন। তাঁর পক্ষে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক ড. সমীর কুমার সাহা-সহ ২১ বিশিষ্ট নাগরিক ও তাঁদের প্রতিনিধিদের হাতে পদক তুলে দেন।

সংস্কৃৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় গত ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ সালের একুশে পদকের জন্য মনোনীতদের নাম ঘোষণা করে। পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রত্যেককে ৩৫ গ্রাম ওজনের একটি স্বর্ণপদক, এককালীন চার লাখ টাকা ও একটি সম্মাননাপত্র দেয়া হয়।

ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, শিল্পকলা, সাংবাদিকতা, সাহিত্য, শিক্ষা, অর্থনীতিসহ নানা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য একুশে পদক দেয়া হয়। ভাষা আন্দোলনে এ বছর মরণোত্তর একুশে পদক পান তিনজন। তারা হলেন- মোতাহের হোসেন তালুকদার (মোতাহার মাস্টার), শামছুল হক ও আফসার উদ্দীন আহমেদ।

মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য পদক পান সৈয়দা ইসাবেলা (মরণোত্তর), গোলাম হাসনায়েন ও ফজলুর রহমান খান ফারুক। সংগীতে পাপিয়া সারোয়ার, অভিনয়ে রাইসুল ইসলাম আসাদ ও সুজাতা আজিম, নাটকে আহমেদ ইকবাল হায়দার, চলচ্চিত্রে সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী, আবৃত্তিতে ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় এবার একুশে পদক পেয়েছেন।

সাংবাদিকতায় অজয় দাশগুপ্ত, আলোকচিত্রে পাভেল রহমান, গবেষণায় সমীর কুমার সাহা, শিক্ষায় মাহফুজা খানম, অর্থনীতিতে মির্জা আব্দুল জলিল, সমাজসেবায় অধ্যাপক কাজী কামরুজ্জামানকেও পদক দেয়া হয়েছে। এছাড়া ভাষা ও সাহিত্যে কবি কাজী রোজী ও লেখক-গবেষক গোলাম মুরশিদের পাশাপাশি বুলবুল চৌধুরীও একুশে পদক পান।

ওসমানি স্মৃতি মিলনায়তন প্রান্ত থেকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, বিশিষ্ট নাগরিকদের পাশপাশি সংস্কৃৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ, মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ বদরুল আরেফীনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, ড. সমীর কুমার সাহা ১৯৫৫ সালে বাবা চন্দ্রকান্ত সাহা ও মা দুলালী প্রভা সাহার ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা চন্দ্রকান্ত সাহা ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। ব্যবসায়িক কারণে চন্দ্রকান্ত সাহাকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকতে হতো। সেই সুবাদে ড. সমীর কুমার সাহার শৈশব ও স্কুলজীবন শুরু কেটেছে রাজশাহীতে। রাজশাহীর চারঘাট থানার আড়ানী গ্রামের মনমোহিনী হাইস্কুলে স্কুলজীবন শুরু করেন। এরপর চৌমুহনীর মদনমোহন হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। চন্দ্রকান্ত সাহা সপরিবারে চাঁদপুর চলে এলে ড. সমীর কুমার সাহা চাঁদপুর সরকারি কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। কলেজে পড়াকালীন তিনি রামকৃষ্ণ আশ্রমে থাকতেন। ১৯৭৫ সালে এইচএসসি শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৮৩ সালে উদ্ভিদবিজ্ঞানে স্নাতক করার পর মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। এরপর তিনি ঢাকা শিশু হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজিতে যোগ দেন। ১৯৮৯ সালে ভারতের বানারসে ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্স থেকে মেডিক্যাল মাইক্রোবায়োলজি বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি নিয়ে আবার ঢাকা শিশু হাসপাতালে ফিরে আসেন। এখানে এসে খুবই সীমিত পরিসরে গবেষণার জন্যে দল গঠন করেন। শুরুতেই একটা টেবিল ও একটি অণুবীক্ষণ যন্ত্র ছিলো। সেই সময়ে শিশুরা ডায়রিয়ার থেকে বেশি মারা যেতো নিউমোনিয়া, টাইফয়েড ও মেনিনজাইটিসে আক্রান্ত হয়ে। তখন তিনি নিউমোনিয়ার নির্দিষ্ট দুটি জীবাণু নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। শিশু হাসপাতালের গবেষণাগারের পাশাপাশি টাঙ্গাইলে মির্জাপুরের কুমুদিনী হাসপাতাল, রাজধানীর মিরপুরের শিশু স্বাস্থ্য হাসপাতাল, চট্টগ্রামের মা ও শিশু হাসপাতাল এবং সিলেটের বালুচরের গবেষণাগার থেকেও তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করেন। তাঁর গবেষণার তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে সরকার শিশু মৃত্যু হার কমানোর জন্যে বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচিতে ভ্যাকসিন 'হিব পেন্টাভ্যালেন্ট' ও 'নিউমোকক্কাস' অন্তর্ভুক্ত করেছে। শিশু মৃত্যুহার কমানোর স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৭ সালে তিনি ইউনেস্কোর পক্ষ থেকে জে. ফিনলে পুরস্কার অর্জন করেন, যা এশিয়ার মধ্যে প্রথম এবং আমেরিকার বাইরে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে আমেরিকান সোসাইটি অব মাইক্রোবায়োলজির পক্ষ থেকে তিনি সম্মানসূচক পুরস্কার পান। তাঁর দীর্ঘ গবেষণাজীবনের প্রায় একশ পঞ্চাশটির বেশি বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত হয়।

ড. সমীর কুমার সাহা বর্তমানে ঢাকা শিশু হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলোজি বিভাগের প্রধান, চাইল্ড হেল্থ রিসার্চ ফাউন্ডেশন (সিএইচআরএফ)-এর নির্বাহী পরিচালক, কোয়ালিশন অ্যাগেইনস্ট টাইফয়েডের (সিএটি) স্টিয়ারিং কমিটির প্রধান, নিউমোকক্কাল অ্যাওয়ারনেস কাউন্সিল এক্সপার্টসের সদস্য এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইনভেসিভ ব্যাক্টেরিয়াল ডিজিজ সার্ভিলেন্সের কারিগরি উপদেষ্টা। এছাড়াও ড. সমীর কুমার সাহা বর্তমানে বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়ন কর্মকা-ের সাথে নিজেকে জড়িত রাখেন। চাঁদপুরের স্বনামধন্য সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান সংগীত নিকেতনের নিজস্ব ভবন নির্মাণ কাজে তিনি পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। সেখানে তাঁর বাবার নামে চন্দ্রকান্ত সাহা মিলনায়তন প্রতিষ্ঠিত হয়।

বর্তমান করোনা মহামারিকালে ড. সমীর কুমার সাহা এবং তাঁর কন্যা ড. সেঁজুতি সাহা করোনার জিন নকশা উন্মোচন করে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেন।

সর্বাধিক পঠিত