সাবেক প্রধানমন্ত্রী মিজানুর রহমান চৌধুরীর আজ পঞ্চদশ মৃত্যুবার্ষিকী
আজ ২ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, প্রথিতযশা পার্লামেন্টারিয়ান, চাঁদপুরের কৃতী সন্তান মিজানুর রহমান চৌধুরীর পঞ্চদশ (১৫তম) মৃত্যুবার্ষিকী। একই দিনে তাঁর বড় ছেলে আব্দুল্লাহ মিজানের দ্বাদশ (১২তম) মৃত্যুবার্ষিকী। এ উপলক্ষে পরিবারের পক্ষ থেকে চাঁদপুর ও ঢাকার নিজ বাড়িতে এবং বিভিন্ন মসজিদ মাদ্রাসায় দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার বাদ আছর চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজার চৌধুরী বাড়ি জামে মসজিদ এবং বাইতুল হাফিজ জামে মসজিদে মিজানুর রহমান চৌধুরী, তাঁর স্ত্রী সাজেদা মিজান ও জ্যেষ্ঠ পুত্র দীপু চৌধুরীর রুহের মাগফেরাত কামনায় মিলাদ ও দোয়া অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া একই সময় মরহুমের প্রতিষ্ঠিত মেসার্স ময়নামতি অটো রাইস মিলে দোয়া ও মিলাদ অনুষ্ঠিত হবে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী মিজানুর রহমান চৌধুরী ১৯২৮ সালের ১৯ অক্টোবর চাঁদপুর জেলার পুরাণবাজারস্থ পূর্ব শ্রীরামদী গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম মোঃ হাফিজ চৌধুরী এবং মাতা মরহুমা মোসাম্মৎ মাহমুদা বেগম। কলেজ জীবনে তিনি ছাত্র রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন। ১৯৬২ সালে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৬২ থেকে ১৯৬৯ পর্যন্ত তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য ছিলেন। যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ কারাগারে ছিলেন তখন তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলন বাস্তবায়নের অন্যতম রূপকার ছিলেন মিজানুর রহমান চৌধুরী। ওই আন্দোলন চলাকালীন সময় ২৩ জুন তৎকালীন পাকিস্তান সরকার তাকে গ্রেফতার করে। তখন পাকিস্তানে কারাবন্দী থাকা অবস্থায় তিনি নির্বাচিত হন।
১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানের সময় আবারও তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময় তিনি সম্মিলিত বিরোধী দলের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭০-এর নির্বাচনে তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭২ সনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মন্ত্রিসভায় তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম তথ্যমন্ত্রী হন। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৩-এর সংসদেও তিনি সংসদ সদস্য ছিলেন।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হলে আবদুল মালেক উকিল এবং মিজানুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের দুটি পৃথক ধারার সৃষ্টি হয়। আশির দশকের শুরুর দিকে মিজানুর রহমান চৌধুরী হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সামরিক সরকারকে সমর্থন দেন এবং ১৯৮৪ সালে তিনি জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। এরশাদের আমলে ১৯৮৬ সালের ৯ জুলাই থেকে ১৯৮৮ সালের ২৭ মার্চ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৮ সালের মার্চ মাসের শেষের দিকে মওদুদ আহমেদ তাঁর স্থলে প্রধানমন্ত্রী হন। ১৯৯০ সালে এরশাদ ক্ষমতা ছেড়ে দিলে তাঁকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়। এরশাদ জেলে থাকাকালীন মিজানুর রহমান চৌধুরী জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালে মিজানুর রহমান চৌধুরী পুনরায় আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ছিলেন। ২০০৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।