মৃত ভেবে উদ্ধার করতে গিয়ে পুলিশি পদক্ষেপে প্রাণ বাঁচলো কিশোরের
রাস্তার পাশে পড়ে থাকা এক কিশোরের মৃতদেহ ভেবে উদ্ধার করতে যাওয়ার পর দেখা গেলো এখনো প্রাণের স্পন্দন রয়েছে। ত্বরিৎ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসকদের প্রচেষ্টায় অবশেষে ১২ ঘণ্টা পর ওই কিশোর জ্ঞান ফিরে পেলো। শনিবার রাতে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ এই উদ্ধার অভিযান করে।
জানা গেছে, ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকার কালীরবাজার চৌরাস্তায় চাঁদপুর-লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে একটি ঝোঁপের মধ্যে এক কিশোরের মৃতদেহ পড়ে আছে-শনিবার গভীর রাতে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ মুঠোফোনে এ রকম সংবাদ পায়। সংবাদ পাওয়ার পর এএসআই গোলাম রসুল ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পান, এক কিশোর সড়কের পাশে ঝোঁপের মধ্যে পড়ে আছে। এই সময়ে ওই পুলিশ কর্মকর্তা কিশোরটিকে নেড়েচেড়ে দেখার সময় তার প্রাণের স্পন্দন লক্ষ্য করেন। দ্রুত তাকে উদ্ধার করে ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করান। এরপর কিশোরটির পরিচয় উদ্ঘাটনের জন্যে কিশোরের ছবিসহ তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেন। পোস্টটি ভাইরাল হওয়ার পরপরই মাঈন উদ্দিন মিজি নামে এক ব্যক্তি ওই কিশোরের মামার নাম ও মুঠোফোন নাম্বার দেন। পরে মামার সাথে মুঠোফোনে কথা বলার পর কিশোরের পরিচয় শনাক্ত হয়। পরে জানা গেছে, উদ্ধারকৃত কিশোরটির নাম হাবিবুর রহমান। সে বালিথুবা পশ্চিম ইউনিয়নের মানিকরাজ গ্রামের পাটওয়ারী বাড়ির মনির হোসেন পাটওয়ারীর ছেলে। এদিকে ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তির পর নিবিড় পরিচর্যার ফলে গতকাল রোববার দুপুরে কিশোরটির জ্ঞান ফিরে।
মুঠোফোনে কিশোর হাবিবের মা নাসিমা বেগম জানান, শনিবার দুপুরে সে তার খালার বাড়ি দক্ষিণ চরবড়ালি গ্রামের বরকন্দাজ বাড়িতে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়। এরপর গভীর রাতে তার ভাই কামাল হোসেন ফোনে তাকে ঘটনার বর্ণনা দেন। বর্তমানে কিশোরটি ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।
তিনি আরও জানান, স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় ১০ম শ্রেণিতে পড়ার পর সে লেখাপড়া করতে অনাগ্রহ প্রকাশ করে। এক পর্যায়ে সে নিজেই রাজমিস্ত্রির সহকারীর কাজ নেয়। প্রায় মাসখানেক পূর্বে একটি নির্মিতব্য ভবনের ছাদ থেকে পড়ে সে আহত হয়েছিলো। তারপর ২০/২২ দিন আড়াইশ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার পর সে সুস্থ হয়। শনিবার দুপুরের পর সে তার খালার বাড়িতে যাওয়ার কথা বলে বের হওয়ার পর কীভাবে ওখানে গেলো বা কীভাবে ওখানে পড়ে রইলো তা বলতে পারবো না। ছেলেটির জন্যে সকলের কাছে দোয়া কামনা করে তিনি বলেন, ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে আমি চির কৃতজ্ঞ থাকবো। এদিকে উদ্ধারকৃত কিশোরটির ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করার পর অজ¯্র মানুষ পুলিশকে সাধুবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাতে দেখা গেছে।
এ ব্যাপারে ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুর রকিব জানান, একটি শিশুর লাশ রাস্তায় পড়ে আছে এমন তথ্য পাওয়ার সাথে সাথেই এএসআই গোলাম রসুলকে ঘটনাস্থলে পাঠানোর পর তার প্রাণের স্পন্দন দেখলে সাথে সাথে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে বলি। আর শিশুটির পরিচয় ও অভিভাবককে খুঁজে বের করার কথা বলি।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আশরাফ আহমেদ চৌধুরী জানান, কিশোরটির জ্ঞান ফিরে এসেছে। অবস্থা পূর্বের তুলনায় এখন কিছুটা ভালো। নাম ধরে ডাকলে সে সাড়া দিচ্ছে। পুরোপুরি সুস্থ হতে কিছু সময় লাগবে।