শাহরাস্তির ৫ জয়িতার গল্প
জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ শীর্ষক কার্যক্রমের আওতায় ২০১৮ সালে পাঁচ ক্যাটাগরিতে শাহরাস্তিতে জয়িতা নির্বাচন করা হয়েছে। উপজেলা মহিলা বিষয়ক কার্যালয় সূত্রে জানা যায় :
অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী ক্যাটাগরিতে নিজ মেহার গ্রামের আমির হোসেনের স্ত্রী তাজুল বেগম নির্বাচিত হয়েছেন। হতদরিদ্র ঘরে জন্ম নেওয়া তাজুল বেগমের স্বামী একজন রিক্সাচালক ছিলেন। ব্র্যাকের সহযোগিতায় বুট-মুড়ির ব্যবসা শুরু করে বর্তমানে স্বাবলম্বী হয়েছেন। ঠাকুর বাজারে ৩টি দোকান পরিচালনা করছেন, বড় ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছেন।
শিক্ষা ও চাকুরি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী হিসেবে পৌরসভার সুয়াপাড়া গ্রামের মৃত আঃ ছাত্তারের স্ত্রী হাওয়া আক্তার নির্বাচিত হয়েছেন। ছোটবেলায় বাবাকে হারান, স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি সংসারের হাল ধরতে খাদ্য অধিদপ্তরে নৈশ প্রহরীর চাকুরি নেন। চাকুরির পাশাপাশি উন্মুক্ত বিশ^বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে এইচএসসি পাস করেন। একমাত্র ছেলে চাঁদপুুর সরকারি কলেজে অনার্সে ও একমাত্র মেয়ে একই কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক ২য় বর্ষে পড়ছেন।
সফল জননী নারী ক্যাটাগরিতে সূচীপাড়া উত্তর ইউনিয়নে ভড়–য়া গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী নাজমা বেগম নির্বাচিত হন। দরিদ্র ঘরে জন্ম নেওয়া নাজমা অন্যের ঘরে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। প্রাথমিকে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেলেও অর্থাভাবে আর পড়াশোনা হয়নি। অল্প বয়সে স্বামীর ঘরে গিয়ে সন্তানের লেখাপড়ার জন্য মাঠে কাজ করেছেন। স্বর্ণ (নাকের ফুল) বিক্রি করে সন্তানের পড়াশোনার খরচ জুগিয়েছেন। একমাত্র মেয়ে বিএ পাস করে গৃহিণী। ২ ছেলে বর্তমানে কলেজে স্নাতকে অধ্যয়নরত।
নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করেছেন যে নারী সে ক্যাটাগরিতে টামটা দক্ষিণ ইউনিয়নের ভাটুনিখোলা গ্রামের আমির হোসেনের স্ত্রী উম্মে কুলসুম নির্বাচিত হয়েছেন। হতদরিদ্র পঙ্গু বাবার সন্তান হওয়ায় কুলসুমকে বিবাহিত স্বামীর কাছে পাস্ত্রস্থ করা হয়। স্বামীর সংসারে নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় স্বামীর সংসার ত্যাগ করে নতুন করে জীবন চালাতে শুরু করেন। শুরুতে বেতের মোড়া বিক্রি করেন এবং স্কুলে ভর্তি হন। একদিকে কর্ম চালিয়ে অন্য দিকে পড়াশুনা চালিয়ে বিএ পাস করেন। বর্তমানে তিনি একজন প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন এবং সফল নারী হিসেবে সমাজে পরিচিত। ‘সমাজে উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছেন যে নারী’ এ ক্যাটাগরিতে টামটা উত্তর ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামের মৃত অহিদুর রহমানের স্ত্রী জাহানারা বেগম নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি একজন সমাজসেবী নারী। তিনি বাড়ি বাড়ি গিয়ে গর্ভবতী নারীদের প্রসব কাজে সহায়তা করেন ঔষধের ব্যবস্থা করেন, প্রয়োজনে হাসপাতালে পাঠান। নারীর ক্ষমতায়ন, বিয়ে সংক্রান্ত কাবিন রেজিস্ট্রিতে উৎসাহ প্রদান, যৌতুক ও বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে রাত-দিন কাজ করে যাচ্ছেন। বর্তমানে তিনি ৮০ শতাংশ জমির মালিক। ২ ছেলে অনার্সে অধ্যয়নরত।