সাবেক গণ পরিষদ সদস্য আঃ করিম পাটোয়ারীর আজ ঊনবিংশ মৃত্যুবার্ষিকী
আজ ২১ জানুয়ারি চাঁদপুরের সর্বজনশ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব, সাবেক গণপরিষদ সদস্য ও চাঁদপুর পৌরসভার দু’বারের সফল চেয়ারম্যান মরহুম আবদুল করিম পাটোয়ারীর ঊনবিংশ মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি চাঁদপুরের বৃহত্তর আওয়ামী পরিবারের একজন নির্মোহ ও নিরহঙ্কার অভিভাবক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাঁকে নামেই চিনতেন।
২০০০ সালের এইদিনে ভোর ৬টা ৩৫ মিনিটে আবদুল করিম পাটোয়ারী চাঁদপুর শহরের তালতলাস্থ নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সেদিন বিকেল ৫টায় চাঁদপুর সরকারি কলেজ মাঠে মরহুমের জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। চাঁদপুরে স্মরণাতীতকালের এ বিশাল নামাজে জানাজা শেষে তাঁর বাড়ির সামনে পাটোয়ারী বাড়ি জামে মসজিদের দক্ষিণ পাশে পারিবারিক কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁকে দাফন করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মরহুম আবদুল করিম পাটোয়ারী সকল রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী এবং চাঁদপুরবাসীর কাছে ছিলেন অত্যন্ত শ্রদ্ধার এবং সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব। তাঁর মৃত্যুর সংবাদ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে হাজার হাজার মানুষ এই মহান নেতাকে শ্রদ্ধা জানাতে তাঁর বাড়িতে ভিড় করে। সর্বত্র নেমে আসে শোকের ছায়া। আবদুল করিম পাটোয়ারী শুধু একজন রাজনীতিবিদই ছিলেন না, তিনি ছিলেন শান্তিপ্রিয় ব্যক্তিত্বসম্পন্ন একজন মানুষ এবং নির্ভীক সমাজসেবক। চাঁদপুর পৌরসভাকে আধুনিকায়ন করতে তাঁর চিন্তা-চেতনা ও পরিকল্পনা ছিলো অতুলনীয়। সেজন্যে চাঁদপুরবাসী এখনো তাঁকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে আসছে। তিনি মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগেও সুস্পষ্টভাবে তাঁর ছেলেদের বলে গেছেন, ‘কষ্ট হলেও সৎ থাকার চেষ্টা করো।’ যা তাঁর কবরের পাশে লাগানো নামফলকে এখনো লিপিবদ্ধ রয়েছে।
পারিবারিক কর্মসূচি :
আজ ২১ জানুয়ারি সোমবার মরহুম আবদুল করিম পাটোয়ারীর ঊনবিংশ মৃত্যুবার্ষিকী এবং মরহুমের সহধর্মিণী মরহুমা ফাতেমা বেগমের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তালতলাস্থ পাটোয়ারী বাড়িতে পারিবারিকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে : সকাল থেকে কোরআন খতম, বাদ আছর পাটোয়ারী বাড়ি জামে মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল, কবর জিয়ারত। দোয়া মাহফিলে দলীয় নেতা-কর্মী-সমর্থক এবং সর্বস্তরের মানুষজনকে উপস্থিত থাকার জন্যে অনুরোধ জানিয়েছেন মরহুমের জ্যেষ্ঠ পুত্র চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু নঈম দুলাল পাটোয়ারী।
জীবনবৃত্তান্ত :
মরহুম আবদুল করিম পাটোয়ারী, পিতার নাম মরহুম রৌশন আলী পাটোয়ারী, নিবাস-তালতলা পাটোয়ারী বাড়ি, চাঁদপুর। জন্ম-১৯২৫ খ্রিঃ, মৃত্যু-২১ জানুয়ারি ২০০০ খ্রিঃ, মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিলো ৭৫ বছর। পাকিস্তান শাসনামলে তিনি ছিলেন বিডি মেম্বার ও এমপিএ। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধকালীন সংগ্রাম পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ছিলেন। বাংলাদেশকালীন দায়িত্ব : স্বাধীনতা উত্তর চাঁদপুর মহকুমার অস্থায়ী প্রশাসক ও প্রধান বিচারক, এমসিএ, তৎকালীন মহকুমা রিলিফ ও ফুড কমিটির সভাপতি, কৃষি উন্নয়ন কমিটির সভাপতি ও চাঁদপুর পৌরসভার দু’বারে নির্বাচিত চেয়ারম্যান (১৯৭৩-১৯৮২) ছিলেন। সামাজিক প্রতিনিধিত্ব : সাবেক চাঁদপুর মহকুমা রেডক্রস সোসাইটির ভাইস প্রেসিডেন্ট, পরবর্তীতে চাঁদপুর জেলা রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির আজীবন সদস্য ও কার্যকরী কমিটির সদস্য, ডায়াবেটিক সমিতির উপদেষ্টা কমিটির সদস্য, মাজহারুল হক বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য, চাঁদপুর ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য, ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের চীফ ওয়ার্ডেন, চাঁদপুর জেলা কারাগারের অস্থায়ী পরিদর্শক, চাঁদপুর রোটারী ক্লাবের সদস্য এবং কচি-কাঁচার মেলা চাঁদপুর-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিনিধিত্ব : বিষ্ণুদী আজিমিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি, পাটোয়ারী বাড়ি জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি, বাসস্ট্যান্ডস্থ মসজিদে গোর-এ গরিবা-এর প্রতিষ্ঠাতা এবং পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি ও আঞ্জুমানে খাদেমুল ইনসান, চাঁদপুর-এর প্রতিষ্ঠাতা (১৯৬৮ খ্রিঃ)। রাজনৈতিক : ১৯৪৬ সালে মুসলিম লীগের একজন কর্মী হিসেবে রাজনীতিতে যোগদান। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হলে আওয়ামী লীগে যোগদান এবং দীর্ঘদিন চাঁদপুর মহকুমা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও পরবর্তীতে চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ভাষা আন্দোলনে চাঁদপুরে সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক ছিলেন।