আস্থা ও নির্ভরতার প্রতীক ডাঃ দীপু মনি
পৃথিবীতে আল্লাহরতায়ালার সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে সেরা সৃষ্টি হচ্ছে মানবজাতি। পৃথিবীতে কয়েকশ’ বছর পেরিয়ে গেছে মানুষের আনাগোনায়। হাজার হাজার কোটি মানুষকে মনে রাখা অসম্ভব। তবুও কিছু মানুষ রয়ে যায় যাঁরা চিরদিনই পৃথিবীর ইতিহাসে উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো আলো দিতে থাকে। হাজার হাজার কোটি মানুষের মাঝেও কর্ম, মেধা, সততা, মানবতা, উদারতা, দক্ষতার কারণেই কিছু মানব হয়ে উঠেন মহামানব বা মহামানবী।
ডাঃ দীপু মনি যিনি মানবীর মাঝেই এক মহামানবী। জন্ম থেকে শুরু করে তাঁর প্রতিটি মুহূর্তই কেটেছে বর্ণাঢ্যভাবে। তিনি একজন মহামানবী তার দৃষ্টান্ত ছোটবেলা থেকেই। এখন তিনি বড়, অনেক বড়, কিন্তু ভুলেননি শিকড়কে। তিনি প্রতিটি মূহূর্তই ব্যয় করেন মানুষের কল্যাণে।
সদা হাস্যোজ্জ্বল এ মানুষটিকে চিনেন না! এমন মানুষ সারাবিশে^ খুব কমই আছে। বিশ^াস হচ্ছে না! সারাবিশে^র জনপ্রিয় সার্চইঞ্জিন গুগলসহ যে কোনো সাইটেই আপনি ডাঃ দীপু মনি বাংলায় অথবা ইংরেজিতে লিখে সার্চ দেন। সেখানে শুধু একজন ব্যক্তিকেই দেখতে পাবেন। সারাবিশে^ দীপু মনি একজনই। ছবিতে দেখে তাঁকে একজন সাধারণ মানুষই মনে হবে। তবে সাধারণের মাঝেই তিনি অসাধারণ। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম মহিলা পররাষ্ট্রমন্ত্রী। পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকা অবস্থায় রেখে গেছেন এক অনন্য দৃষ্টান্ত। তিনি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পরপর ৩ বার নির্বাচিত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমানে চাঁদপুর-৩ আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
ডাঃ দীপু মনি শুধু ব্যক্তির নাম নয়, তিনি একটি প্রতিষ্ঠান। যে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত হতে পেরেছে। যে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্ত করার শপথ নিতে শিখেছে। যে প্রতিষ্ঠান শিখিয়েছে কীভাবে দেশের খেটে খাওয়া মানুষকে ভালোবাসতে শিখতে হয়। আর এ প্রতিষ্ঠান থেকে মানুষ ভালো কিছু শিখবেই বা না কেনো? কারণ এ প্রতিষ্ঠান যে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার কর্মাধ্যক্ষ ভাষাবীর ও একজন আদর্শবান পিতা এমএ ওয়াদুদ-এর যোগ্য উত্তরসূরী। যিনি তৈরি করেছেন হাজারো নেতা। যারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের অনুসারী।
ডাঃ দীপু মনি এমপির জন্ম ৮ ডিসেম্বর ১৯৬৫। যিনি একাধারে একজন রাজনীতিবীদ, ডাক্তার, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও একজন অ্যাডভোকেট। একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম ও রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম ডাঃ দীপু মনি এমপি’র।
বাবা ভাষাবীর এম এ ওয়াদুদ। যিনি ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র ও বিভিন্ন আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী ও পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং দৈনিক ইত্তেফাকের সাবেক কর্মাধ্যক্ষ ভাষাবীর এমএ ওয়াদুদ তিনি ১৯২৫ সালের ১ আগস্ট চাঁদপুর জেলার রাঢ়ির চর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি ছিলেন স্বাধীনচেতা একজন মানুষ। ছোটবেলা থেকেই ৃিতনি নানান যায়গায় গিয়ে জাইগির থেকে পড়াশোনা করেছেন। বাড়িতে আর্থিক অবস্থা ভাল ছিল কিন্তু তিনি ছিলেন স্বাধীনচেতা। তিনি খুব ভাল ছাত্র ছিলেন। মাদ্রাসায়ও পড়েছেন। তখনকার দিনে ম্যাট্রিকে প্রথম বিভাগ পাওয়া চাট্টিখানি কথা ছিল না। তিনি ম্যাট্রিকে ১ম বিভাগ পেয়েছেন। ঢাকা কলেজ থেকে আইয়ে পরীক্ষা দিয়েও ১ম বিভাগ পেয়েছেন। সেখান থেকে ভর্তি হয়েছিলেন ঢাকা ভার্সিটিতে। ঢাকা কলেজে থাকাকালীন তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। বঙ্গবন্ধু এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ছিলেন। তিনি ইত্তেফাকের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য। ’৫০ এর দশকে জেল খেটেছেন। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী এম এ ওয়াদুদ গণতান্ত্রিক যুবলীগ, পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ, কেন্দ্রীয় কচিকাঁচার মেলার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। ১৯৫৩-৫৪ সালে প্রাদেশিক ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি।
বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীকার আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা আন্দোলন, অধিকার আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করেছেন। স্বাধীনতা পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু একটি শিল্পাঞ্চলের শ্রমিক অসন্তোষ বন্ধ করার জন্যে দুটি কারখানা পরিচালনার দায়িত্ব দেন, সেই চাকরিটাও তিনি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু তখন বলে ছিলেন, এটাও দলের একটা কাজ। পরবর্তীতে তিনি দায়িত্ব নেন। ’৭৫ এ বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তাকে ওএসডি করে রাখা হয়। বারং বার মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলেও রাখা হয়। জিয়াউর রহমান তাকে মন্ত্রীসভায় অর্šÍভূক্ত করার অনুরোধ করলে, তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন এই সদস্য ইত্তেফাক প্রকাশনার শুরু থেকে এতে সম্পৃক্ত ছিলেন। ভাষা আন্দোলনে যুক্ত থাকার কারণে ১৯৪৮ সালে এবং ১৯৫২ সালে তাকে বন্দি করেছিল পাকিস্তান সরকার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকার কারণে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাঁকেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিলো। ১৯৭৮ সালে সামরিক সরকারে যোগ না দেয়ায় রাজনৈতিক নিপীড়নের শিকারও হয়েছিলেন ভাষাবীর এমএ ওয়াদুদ। । অবশেষে আমাদের কাঁদিয়ে ১৯৮২ সালে তিনি পরপারে চলে যান।
নিজের রত্মাগর্ভা মা সম্পর্কে ডাঃ দীপু মনি এমপি বলেন, সন্তানের কাছে প্রতিটি মা-ই অনন্যা। আমার কাছেও আমার মা অনন্যা। জানেন, উনি কখনো বিলাসিতা করতেন না। খুব সাদামাটা জীবন-যাপন করতেন। ব্যাক্তি জীবনে কোন চাওয়া পাওয়া ছিলো না। আমার মা আমার কারণে রতœগর্ভা এমনটা না। ভাই একজন এই উপমহাদেশে ডায়াবেটিক সার্জারীতে একমাত্র বিশেষজ্ঞ শল্য চিকিৎসক। এছাড়া তিনি রাজনীতিতেও জড়িত। আমার মায়ের মধ্যে কখনোই পরশ্রীকাতরতা ছিল না। কারো কিছু দেখলে যে এটা আমার পেতে হবে এমন কোন লোভ ছিল না। অন্যের সাফল্য দেখে ঈর্ষান্বিত হতেন না , বরং খুশি হতেন। আমরা মায়ের কাছ থেকে সে বিদ্যাটাই শিখেছি।
বর্ণাঢ্য শিক্ষাজীবনের কথা বিস্তারিত লিখতে গেলে মাসও লেগে যেতে পারে। তাই সংক্ষিপ্ত ভাবে তুলে ধরলাম। ডাঃ দীপু মনি এমপি হলিক্রস স্কুল ও কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেন। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস এবং বাংলাদেশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হতে এলএলবি পড়েন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্স হপকিন্স ইউনির্ভাসিটির স্কুল অব পাবলিক হেলথ থেকে এমপিএইচ ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে আইন বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রিও অর্জন করেন এবং বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের একজন আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে যোগদানের আগ পর্যন্ত ডাঃ দীপু মনি মানবাধিকার, নারী অধিকার, স্বাস্থ্য আইন, স্বাস্থ্য নীতি ও ব্যবস্থাপনা, স্বাস্থ্য অর্থায়ন, কৌশলগত পরিকল্পনা এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পররাষ্ট্রনীতি সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে কাজ করছিলেন।
ডাঃ দীপু মনি একাধারে লেখালেখি, শিক্ষকতা, পরামর্শদাতা, গবেষণা, এ্যাডভোকেসি কর্মসূচি পরিচালনা করেন এবং দক্ষ ও অভিজ্ঞ চিকিৎসকদল নিয়ে গঠিত ফ্রি স্বাস্থ্যসেবা ক্লিনিকের মাধ্যমে দুঃস্থ ও স্বাস্থ্যসুবিধা বঞ্চিত মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার কাজ করেন। তিনি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে আইন প্রণয়নে জনমত গড়ে তোলার কাজেও নিয়োজিত।
প্রতিনিধিত্বমূলক রাজনীতি ও রাজনৈতিক নীতি নির্ধারণী প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণের ব্যাপারে তিনি একজন একনিষ্ট প্রবক্তা। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের ঘনিষ্ঠ সহায়তায় তিনি আওয়ামী লীগের নারী কর্মীদের জন্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন।
ডাঃ দীপু মনি এমপি বাংলাদেশের প্রথম নারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী। মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আগে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক এবং পররাষ্ট্র বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ছিলেন।
ডাঃ দীপু মনি এমপির একমাত্র ভাই ডাঃ জেআর ওয়াদুদ টিপু। তিনি ডায়াবেটিক ফুট সার্জারিতে বাংলাদেশসহ উপ-মহাদেশের একজন বিখ্যাত শল্য চিকিৎসক এবং চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি।
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের অ্যাডভোকেট তৌফীক নাওয়াজ ডাঃ দীপু মনি এমপি’র স্বামী। তিনি আন্তর্জাতিক একটি ল’ফার্মের প্রধান। তিনি উপমহাদেশের দু হাজার বছরের ঐতিহ্যম-িত ধ্রুপদী সঙ্গীতের উৎস হিসেবে পরিচিত ‘আলাপ’ এর একজন শিল্পী। তাঁদের রয়েছে দু’ সন্তান। পুত্র তওকীর রাশাদ নাওয়াজ ও কন্যা তানি দীপাভলী নাওয়াজ।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভার সবচেয়ে বড় চমক ছিলেন তিনিই। মনে করা হতো, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা গড়ে পিটে বড় করেছেন তাঁকে। ২০০৭ সালে হাতে গোনা কয়েকজনের মধ্যে তিনি একজন, যিনি শেখ হাসিনার নেতৃত্বের পক্ষে অবিচল ছিলেন। এসময় দেশের ভেতরে যেমন, তেমনি আন্তর্জাতিক পরিসরেও নেত্রীর মুক্তির জন্যে প্রয়োজনীয় যোগাযোগ রেখেছেন, কাজ করেছেন। শেখ হাসিনার মুক্তির জন্যে কথা বলেছেন। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের বিপুল বিজয়ের পর সবাইকে চমকে দিয়ে দীপু মনি পররাষ্ট্র মন্ত্রী হন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছেন। ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বণ্টন এবং সমুদ্র বিরোধ নিষ্পত্তি তাঁর বড় অর্জন।
সামাজিক উন্নয়ন এবং প্রশাসনিক ক্ষেত্রে তাঁর অনন্য অবদানের জন্যে তিনি মাদার তেরেসা আন্তর্জাতিক পুরষ্কারে ভূষিত হন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীণ সময়ে তিনি কমনওয়েলথ মিনিস্টেরিয়াল অ্যাকশন গ্রুপ-এর প্রথম নারী এবং দক্ষিণ এশীয় চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হন। এছাড়া তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ সমুদ্র জয় করে। এতে করে বাংলাদেশ সরকার প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার এবং ভারতের সাথে প্রায় চার দশকের সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত অমীমাংসিত বিষয়টি আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় চূড়ান্ত ভাবে নিষ্পত্তির উদ্যোগ গ্রহণ করে । বর্তমানে চাঁদপুরে একটি মেডিকেল কলেজ বাস্তবায়নাধীন। সেটি তাঁরই অবদান। চাঁদপুর-৩ আসন তথা চাঁদপুর-হাইমচরে মেঘনা নদীর ভাঙ্গন বন্ধে প্রায় ১৯ কিলোমিটার স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ, ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ ও শতভাগ বিদ্যুতায়ন, লাকসাম-চাঁদপুর রেললাইন সংস্কার, ৩২৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ, ৫৩টি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাদরাসা ও কলেজের ভবন নির্মাণ, ২৩৭ কি. মি. রাস্তা পাকাকরণ, ১৫৯ টি সেতু/কালভার্ট নির্মাণ, ৩৮টি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ, ১১টি শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব ও কম্পিউটার ল্যাব নির্মাণ, ফিশারিজ ইন্সটিটিউট নির্মাণ, মেরিন একাডেমী নির্মাণ, কোস্টগার্ড স্টেশন নির্মাণ, পাসপোর্ট অফিস নির্মাণ, আধুনিক ২টি পানি শোধনাগার নির্মাণ, নার্সিং ইন্সটিটিউট নির্মাণ, ৩০টি আশ্রয়ন প্রকল্পে ৩৭৫০টি ঘর নির্মাণ, ১১টি ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন স্থাপনসহ অগণিত উন্নয়ন কর্মকা- সম্পন্ন করেছেন শুধুমাত্র চাঁদপুরবাসীর কথা চিন্তা করে।
উচ্চতার অনন্য শিখরে পৌঁছে যাওয়া এ মানুষটি সাধারণ মানুষসহ নেতা-কর্মীদের কাছে দীপু আপা নামেই পরিচিত। জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতি সচল রাখতে যিনি দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। শত ব্যস্ততা ও ক্লান্তির মাঝেও হাসিটুকু মুখে রেখেছেন ঠিকই। গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকার কারণে তাকে দেশের বাইরে যেতে হয়। আবার ঢাকাতেও বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকতে হয় সবসময়। অবাক বিষয় হলো, এতো ব্যস্ততার মাঝেও প্রতি মাসে কয়েকবারই ছুটে আসেন তার জন্মভূমি সংসদীয় এলাকা চাঁদপুর সদর-হাইমচরের মানুষের কাছে। শুনেন তাদের দুঃখ-দুর্দশার কথা। সমাধান দেন হাজারো সমস্যার। আমরা যারা ছাত্রলীগ করি, তাদেরকে আগলে রেখেছেন সন্তান¯েœহে। আবার কেউ অন্যায় করলে তাঁর সাথে কোনো আপোষ নেই। ঢাকায় বসে যদি কারো অসুস্থতার কথা শুনেন, সে কোনো দলের সেটা তাঁর কাছে মুখ্য বিষয় নয়। চাঁদপুরে পৌঁছে আগে ওই ব্যক্তির খবর নিবেন। প্রয়োজনে বাড়ি বা হাসপাতালে গিয়ে দেখা করবেন। এরকমও দেখা গেছে একটি অনুষ্ঠানের মাঝখানেও যদি কারো অসুস্থতা বা দুর্ঘটনার কথা শুনেন তাহলে সাথে সাথেই ওই ব্যক্তির কাছে গিয়ে হাজির।
দুর্নীতিমুক্ত এমপি ডাঃ দীপু মনি। ২০০৮ সাল থেকে যিনি সংসদ সদস্য। আজ পর্যন্ত তাঁর নামে একটি দুর্নীতির শব্দও খুঁজে পাওয়া যায়নি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা স্বয়ং নিজে বলেছেন, দীপু মনি দুর্নীতিমুক্ত। ডাঃ দীপু মনি চাঁদপুরবাসীসহ দেশবাসীকে দিয়ে যাচ্ছেন অনেক কিছুই। যার কাছে দেয়া ছাড়া নেয়া শব্দটি খুঁজে পাওয়া যায়নি।
চাঁদপুরবাসীর জন্যে দীপু আপার অভূতপূর্ব উন্নয়ন চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে। যদিও তিনি আমার মায়ের মতো। আমার মাই বলা চলে। তবুও তিনি ছাত্রলীগের দিকনির্দেশক। বাংলার মানুষের আপা। কারণ আপার ভালোবাসা ও শাসন দুটোই ছোটরা সাদরে গ্রহণ করে। মায়ের কাছে হয়তো কিছু কথা লুকায় কিন্তু আপার কাছে লুকায় না। তিনি যেখানেই কোনো বক্তব্য দেন, অবুঝ বালকের মতো সবাই সেটা মন দিয়ে শুনে। সবার কাছে কেমন জানিনা তবে আমার কাছে মনে হয় তাঁর কথায় মধু মিশানো থাকে। তিনি বকা দিলেও ভালো লাগে। দলকে, দেশকে, দেশের মানুষকে ও স্থানীয় সংসদ সদস্য হিসেবে চাঁদপুর সদর-হাইমচরবাসীর উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। চাঁদপুর সদর-হাইমচরের দরিদ্র মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ও চিকিৎসার সুব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। নিজেকে অনেক গর্বিত মনে করি শ্রদ্ধেয় দীপু আপাকে চাঁদপুরবাসীর উন্নয়নে পাশে পেয়ে। তিনি একজন ডায়মন্ড। যেখানেই যাবেন সেখানেই আলো ছড়াবেন। তবে আমরা চাঁদপুরের আপামর জনগণ চাই তিনি আমাদের পাশে থাকবেন সবসময়। আমরা গর্বিত আমাদের একজন দীপু মনি আছে।
নারীদের প্রতিবন্ধকতার বিষয়ে তিনি বলেন, নারীদের প্রথম প্রতিবন্ধকতা আসে নিজের ভেতর থেকে। কারণ জন্মের পর থেকে আমরা যে সামাজিক পরিবেশের মধ্যে দিয়ে বড় হই সেখানে শেখানো হয়, এটা করবে না, ওটা করবে না! মেয়েরা এটা করে না, সেটা করে না নানান কথা। আমাদের চারপাশেই শুধু না, না, না শুনতে হয়। এতে করে আমাদের মনের চারপাশে একটা দেয়াল তৈরি হয়ে যায়। সেই দেয়াল থেকে ভেঙে বের হওয়াই প্রথম যুদ্ধ। তিনি মনে করেন, সে দেয়াল ভেঙে যে মেয়ে বের হতে পারে তাকে আর দমিয়ে রাখা যায় না। তাঁর সামনে তেমন কোনো প্রতিবন্ধকতাই আসেনি। বাবার সুনামের কারণে এবং আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অশেষ ¯েœহধন্য হওয়ার কারণেই তেমন কোনো প্রতিবন্ধকতা ফেস করতে হয়নি। তবে কিছু প্রতিযোগিতা তো থাকবেই। এতো কোটি মানুষের দেশ, সেখানে আওয়ামী লীগের মতো একটি দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে, যেখানে মাত্র ৮৭ জন সদস্য, মহান সংসদে ৩৫০টি আসন। প্রতিযোগিতা থাকলেও কখনই প্রতিহিংসার শিকার হননি।
নারীদের এগিয়ে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটা ক্ষেত্রেই নারীরা এখন এগিয়ে যাচ্ছে। একটা সময় ছিলো ধরেন শিক্ষকতা, বলা হতো যে ঠিক আছে মেয়েরা শিক্ষকতা করতে পারবে, চিকিৎসক হওয়ার ক্ষেত্রেও ঠিক ছিলো। কিন্তু বাকি পেশাগুলোতে, ধরেন নার্সিং পেশাটিকে সাধারণ মেয়েরা যেতে চাইতো না। মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত ঘরের মেয়েরা তো মোটেও না। নিন্মবিত্ত ঘরের মেয়েরা নার্সিং এ যেতো। পেশাটিকে সম্মানের চোখে দেখা হতো না। কিন্তু এ পেশাটিকে এখন সম্মানের চোখে দেখা হয়। অনেকেই এখন নার্সিং পেশাটিকে বেছে নিচ্ছে। আর এ সবই শেখ হাসিনার অবদান। কোথায় নারী নেই বলেন, আমরা সশস্ত্রবাহিনীতে নারী দেখছি, বৈমানিক, পাইলট, ফাইটার পাইলট, সর্বোচ্চ আদালত, রাষ্ট্রদূত, সচিব, এসপি, ডিসি, ইউএনও, কোথায় নারী নেই বলেন? সবখানেই নারীর জয়-জয়কার এবং এই অগ্রযাত্রার উৎস হচ্ছেন শেখ হাসিনা। কারণ আপনি ভেবে দেখুন, ’৯৬ সালের পূর্বে নারীর এমন জয়-জয়কার ছিলো না। এবং ’৯৬ সালে যখন প্রথম শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হলেন তারপরে ৯৭ সালে নারী উন্নয়ন নীতিমালা করলেন। তারমধ্যে দিয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে শতকরা ৩৩ ভাগ আসন নারীদের জন্যে বরাদ্দ করলেন তিনি। রাতারাতি আমরা সাড়ে বার হাজার নারী নির্বাচিত স্থানীয় পর্যায়ে পেয়ে গেলাম এবং তার হাত ধরেই প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী নারী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী নারী, স্পিকার নারী, কৃষিমন্ত্রী নারী পেয়েছি আমরা। এক কথায় বলতে হয়, নারীরা এখন আর পিছিয়ে নেই। তাকে আর আটকে রাখা যাবে না।
চাঁদপুর নিয়ে আগামীর পরিকল্পনা সম্পর্কে ডাঃ দীপু মনি বলেন, চাঁদপুরের আরো কয়েকটা জিনিস করার ইচ্ছে আছে। চাঁদপুরে অনেকগুলো খাল রয়েছে। কোথাও কোথাও সেগুলো দখল হয়েছে, নষ্ট হয়েছে এগুলো হলো বিদ্যাবতী খাল, রাজার খাল, এসবি খালসহ বেশ কিছু খাল। আমি চাই সেগুলোকে ঘিরে হাতিরঝিলের আদলে গড়ে তুলতে। আমার মনে হয় এজন্যেই চাঁদপুরে অনেক পর্যটকের মিলনমেলা ঘটবে। চাঁদপুরের পর্যটনে ব্যাপক উন্নতি হবে। আর বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে চাঁদপুরে বড় কিছু করার একটা ইচ্ছে আছে আমার। চাঁদপুরে খুব শীঘ্রই একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় হবে। পাঠাগারের কথা আপনারা বলেছেন সেটাও হবে ইনশাআল্লাহ। এছাড়া আমি একটি ভাসমান পাঠাগার করবো। আর একটি ভ্রাম্যমাণ হাসপাতাল করারও ইচ্ছে আছে। চাঁদপুর নদীমাতৃক দেশ। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে চর এলাকার মানুষের হাসপাতালে গিয়ে সেবা নেয়াটা খুবই কষ্টকর। তাই একটি ভাসমান হাসপাতাল হবে, যাতে এ ধরণের পরিস্থিতিতে শতভাগ চিকিৎসাসেবা মানুষের কাছে পৌঁছে। ইতিমধ্যেই চাঁদপুরে ডাঃ দীপু মনির উদ্যোগে গড়ে উঠছে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল। নির্মিত হচ্ছে আধুনিক নদীবন্দর।
তাঁর অন্যান্য পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে ১৯ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধের বরাবর কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভের মতো সুদৃশ্য রাস্তা নির্মাণ, ভাসমান মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর স্থাপন, আধুনিক খাদ্য গুদাম নির্মাণ, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প স্থাপন, হিমাগার নির্মাণ, শিশুপার্ক নির্মাণ, প্রবীণ কেন্দ্র স্থাপন, হাইটেক পার্ক স্থাপন, ইনডোর স্টেডিয়াম, সাংস্কৃতিক বলয়সহ আরো অনেক কিছু। তিনি আবারো নির্বাচিত হলে চাঁদপুরবাসীর জন্যে অপেক্ষা করছে উন্নতি, সমৃদ্ধ এক ভবিষ্যৎ।
পরিশেষে বলতে হয়, উন্নয়ন আর ডাঃ দীপু মনি একই সূত্রে গাঁথা। উন্নয়নের একটি মহাসমুদ্র তিনি। যিনি তাঁর পরিচয় দিয়েছেন কাজেই। বিগত দশ বছরের এই অভূতপূর্ব উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে ডাঃ দীপু মনির বিকল্প নেই। ডাঃ দীপু মনি উন্নয়ন করেছেন, মানুষের কাছাকাছি থেকেছেন, তাদের আনন্দ-বেদনার সাথী হয়েছেন। সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। কাউকে কখনো অসম্মান করেননি। তাঁর জন্যে কখনো তাঁর এলাকাবাসীর সুনাম ক্ষুণœ হয়নি। দেশের সফল পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও অন্যতম মুখপাত্র হিসেবে ডাঃ দীপু মনি সারাদেশে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সম্মান ও সুনাম অর্জন করেছেন। তাঁর জন্যে চাঁদপুরবাসী গর্বিত। চাঁদপুরের উন্নয়নে কয়েকবার নয়, বরং ডাঃ দীপু মনিকে বারংবারই দরকার।
লেখক : তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, সদর উপজেলা ছাত্রলীগ, চাঁদপুর; সহ-নাট্য বিষয়ক সম্পাদক, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক ফোরাম, চাঁদপুর।