• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

সদ্য নির্বাচিত চাঁদপুর পৌর পরিষদের মেয়াদ তিন মাস পূর্ণ হওয়ার প্রাক্কালে প্রেস ব্রিফিং

৮২ দিনে কাজের চিত্র এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরলেন মেয়র জুয়েল

আমার লক্ষ্য তিন কোটি টাকা আয় বাড়বে, এক কোটি টাকা ব্যয় কমবে'

প্রকাশ:  ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১২:৫৮
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র অ্যাডঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল মাত্র ৮২ দিনে এমন কিছু কাজ করেছেন, যা অনেকটা অবিশ্বাস্য। তবে হ্যাঁ, যদি সদিচ্ছা থাকে, নিজেকে নির্মোহ রাখা যায় এবং জনগণকে দেয়া প্রতিশ্রুতি তথা নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে সচেষ্ট থাকেন, তাহলে তা সম্ভব। এই ৮২ দিনে তাঁর কাজের সংক্ষিপ্ত বিবরণ শুনে উপস্থিত সাংবাদিকদের মন্তব্য হচ্ছে, 'আর কথার ফুলঝুরি নয়, সস্তা বাহ্বা নিতে প্রতিশ্রুতি দেয়ার জন্য দেয়া নয়, এবার সত্যিকারের নান্দনিক ও জঞ্জালমুক্ত চাঁদপুর শহর পাচ্ছে চাঁদপুর পৌরবাসী। একইসাথে দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনাবিহীন কাজ ইত্যাদি নেতিবাচক দিক থেকেও মুক্ত হতে যাচ্ছে চাঁদপুর পৌরসভা।'


এককালের মেধাবী এবং চৌকষ ছাত্রনেতা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এবং বর্তমান চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল গত ১০ অক্টোবর ২০২০ তারিখে অনুষ্ঠিত চাঁদপুর পৌরসভা নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। তিনিসহ তাঁর পরিষদের শপথগ্রহণ হয় ২৪ অক্টোবর। বিদায়ী মেয়র নবনির্বাচিত মেয়রকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন ২৫ অক্টোবর। এরপর মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েলের নেতৃত্বাধীন পৌর পরিষদের প্রথম সভা হয় ৯ নভেম্বর। মূলত এদিন থেকেই পরিষদের মেয়াদকাল শুরু।

 


মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল তাঁর পরিষদের মেয়াদ তিন মাস পূর্ণ হওয়ার প্রাক্কালে এই ক'দিনে তিনি তথা তাঁর পরিষদ কী কী কাজ করেছে এবং ভবিষ্যতে পরিকল্পনা বিষয়ে জানান দেয়ার জন্যে গতকাল সোমবার প্রেস ব্রিফিং করেছেন। চাঁদপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে গতকাল সকালে এ প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়। চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটওয়ারীর সভাপ্রধানে অনুষ্ঠিত এ প্রেস ব্রিফিংয়ের শুরুতে মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল তাঁর কাজের বিবরণ তুলে ধরেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, পৌরসভার অভ্যন্তরীণ গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে সংস্কার, অফিসিয়াল নানা অব্যবস্থাপনার কিছু দূর করা এবং অন্যগুলো দূর করার উদ্যোগ নেয়া, অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ের খাতগুলো একেবারেই বন্ধ করে দেয়া, ব্যয় সঙ্কুচিত করা, পুরো অফিসের কাজ অটোমেশনে নিয়ে আসার উদ্যোগ গ্রহণ, দুর্নীতি হতে পারে এমন খাত এবং সুযোগ চিরতরে বন্ধ করে দেয়া ইত্যাদি।

 


মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল তাঁর বক্তব্যের শুরুতে বলেন, ৫৮ কোটি টাকা দেনা নিয়ে আমাদের পরিষদের যাত্রা শুরু হয়। এরপরও আমরা পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এই তিন মাসের বেতন পুরো পরিশোধ করতে পেরেছি, এক টাকাও বেতন বকেয়া রাখিনি। চলমান বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে যাচ্ছি এবং বকেয়া বিল থেকে অর্ধকোটি টাকা পরিশোধ করেছি। আর আমিসহ আমার পরিষদ তথা কাউন্সিলরগণ বেতন ভাতা নিচ্ছি না যতক্ষণ পর্যন্ত পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বকেয়া বেতন পরিশোধ না হবে। মেয়র বলেন, ১২৫ বছরের এতো পুরানো পৌরসভায় কোনো কনফারেন্স রুম নেই। যা খুবই লজ্জার বিষয়। আমি দায়িত্ব নেয়ার এই কদিনে যেসব উন্নয়ন কাজ করেছি তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে একটি আধুনিক মানের কনফারেন্স রুম করা। আর এটি করতে যা ব্যয় হয়েছে তার সম্পূর্ণটা আমি যোগান দিয়েছি। পৌরসভার ফান্ড থেকে এক টাকাও এখানে ব্যয় করা হয়নি।

 


মেয়র জুয়েল বলেন, চাঁদপুর পৌরসভা ইউজিআইআইপি-৩-এর অন্তর্ভুক্ত। তবে এই প্রকল্পের অর্থ পেতে নানা শর্তের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা এবং বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রাখা যাবে না। অথচ এই খাতে আমাদের পৌরসভা অনেক বড় দেনাগ্রস্ত। আর এ কারণে গত অর্থবছরে আমরা পেয়েছি মাত্র ১০ কোটি টাকা, আর একই শ্রেণীর এবং একই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত পৌরসভা লাকসাম পৌরসভা পেয়েছে ২শ' কোটি টাকা। মেয়র জানান, এই পৌরসভার মোট ৮০টি মিটার ছিলো। সবগুলোই পোস্টপেইড। সবগুলোতেই বকেয়া বিল ছিলো। অনেক মিটার ব্যবহারও হতো না। আমি দায়িত্ব নেয়ার পর ৮০টির মধ্যে অপ্রয়োজনীয় ৪২টি মিটারের বকেয়া পরিশোধসহ মিটারগুলো বন্ধ করে দিয়েছি।

মেয়র বলেন, আমরা ব্যয় কমানো, আয় বাড়ানো নীতিতে কাজ করছি। আমার লক্ষ্য হচ্ছে, তিন কোটি টাকা আয় বাড়বে, এক কোটি টাকা ব্যয় কমবে। এ লক্ষ্যে অতিরিক্ত, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানোর কাজে হাত দিয়েছি। ইতিমধ্যে এমন কয়েকটি কাজও আমরা করে ফেলেছি। যেমন জ্বালানি তেলের খরচ কমানো। এ খাতে পৌরসভার নীতিমালা অনুযায়ী জ্বালানি বাবদ যতটুকু খরচ করার নিয়ম রয়েছে, এর অতিরিক্ত একটি টাকাও খরচ করা হবে না। এতে দেখা গেলো যে, প্রতি মাসে তেল খরচ ২ লাখ টাকা কমে এসেছে। পানি শাখার রিপেয়ারিং কাজ অতীতে ঠিকাদার দিয়ে করা হতো। এতে অনেক টাকা আমাদের ভর্তুকি দিতে হতো। সেজন্যে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি রিপেয়ারিং কাজ আমরা নিজেরাই করবো। বাইরের ঠিকাদার দিয়ে করাবো না। এখানেও আমাদের ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকা সাশ্রয় হবে। মেয়র জানান, দেশের অধিকাংশ পৌরসভায় পানি শাখা অন্যতম আয়ের উৎস। কিন্তু চাঁদপুর পৌরসভা ব্যতিক্রম। পানি শাখায় বছরে প্রায় আড়াই কোটি টাকা পৌরসভার ফান্ড থেকে চলে যায়। এর কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে প্রথমে খুঁজে পেলাম অবৈধ গ্রাহক। এই স্বল্প সময়ে আমাদের অনুসন্ধানে ধরা পড়ে ৭৮৬টি অবৈধ সংযোগ। আর এই অবৈধ সংযোগ থেকে ২৬৪০টি পরিবার প্রতিদিন পানি সরবরাহ পাচ্ছে। তিনি জানান, নাগরিক সনদ আমরা ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিয়ে এসেছি। আর কোনো ধরনের মিথ্যা তথ্য দিয়ে বা ভুয়া নাগরিকত্ব সনদ যেনো কেউ না নিতে পারে সেজন্যে জাতীয় পরিচয়পত্রের সাথে মিলিয়ে নাগরিক সনদ দেয়া হবে। ওয়ারিশান সনদে স্বচ্ছতা আনা হবে।

মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল আক্ষেপ করে বলেন, এই শহরে যতো ভবন বা বহুতল ভবন করা হয়েছে, তার অধিকাংশই নকশা অনুযায়ী করা হয়নি। আর এটি যে পৌরসভা থেকে মনিটরিং করার কথা, তা করা হয়নি। সেজন্য আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এ ক্ষেত্রে আমরা চরমভাবে কঠোর হবো। আপনাদের সাংবাদিকদের মাধ্যমে আমি আজ চাঁদপুর পৌরবাসীর কাছে দৃঢ় অঙ্গীকার করতে চাই, আমার মেয়াদকালে একটি ভবনও নকশার বাইরে করতে দেবো না। নকশার বাইরে এক ইঞ্চি কাজও যদি হয়, সেটা যদি বহুতল ভবনও হয়, সেটা আমি ভেঙ্গে ফেলবো। এই জায়গায় আমি বিন্দু পরিমাণ ছাড় দেবো না। মেয়র বলেন, একেকজনের কাজের ধরন একেক রকমের। আমার আভ্যন্তরীণ কাজের ধরন পরিবর্তন করেছি। আমার অফিস রুম সকলের জন্যে উন্মুক্ত রেখেছি। আমাদের পুরো অফিস অটোমেশনে চলে যাচ্ছি। এতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে। কঞ্জারভেন্সী তথা পরিচ্ছন্ন শাখা বিষয়ে মেয়র বলেন, পৌরসভার পরিচ্ছন্ন কর্মীদের সকলের জন্য পৃথক ব্যাংক একাউন্ট করে দিয়েছি। ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সাথে কথা হয়েছে, তারা বছরে সার্ভিস চার্জ হিসেবে এদের থেকে এক টাকাও নেবে না। স্বর্ণখোলা এলাকায় পরিচ্ছন্ন কর্মীদের জন্যে বহুতল ভবন হবে ২০টা। যেখানে তারা উন্নত জীবনযাপন করবে।

মেয়র আরো জানান, এই ৮২ দিনে আমরা প্রায় সাড়ে ৮ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজের টেন্ডার করেছি। অচিরেই সে কাজ শুরু হবে। মেয়র বলেন, আমার সময়ে নতুন কোনো বাজেট নেই। পূর্বের বাজেটেই চলতে হচ্ছে। যা করছি রাজস্ব আয় থেকে করছি। তিনি জানান, আমরা পর্যটনের জন্যেও চেষ্টা করছি। আপনারা হয়তো জেনেছেন, আমরা ইতিমধ্যে জাপানের একটি কোম্পানির সাথে কথা বলেছি, তাদের সাথে একাধিক বৈঠকও হয়েছে। আশা করছি আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন স্পট করতে পারবো। মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল তাঁর নির্বাচনী ইশতেহারকে ফলো করে কাজ করার চেষ্টা করছেন বলে সাংবাদিকদের অবহিত করেছেন। সবশেষে মেয়র বলেন, এই পৌরসভার জন্যে যদি ভালো কিছু করতে হয়, পৌরবাসীকেও দায়িত্বশীল হতে হবে। হোল্ডিং ট্যাক্স বকেয়া রাখা যাবে না। আর পানির বিলকেও আমরা ঢেলে সাজাবো। অর্থাৎ একটি টিনের ঘরের জন্যে যা পানির বিল, আর বহুতল ভবনের জন্যও একই পরিমাণ পানির বিল, তা কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়। এখানেও আমরা পরিবর্তন আনবো। আর এসব পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে মেয়র পৌরবাসীর আন্তরিক সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছেন।

চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রহিম বাদশার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কাজী শাহাদাত, অধ্যক্ষ জালাল চৌধুরী, শহীদ পাটোয়ারী, শরীফ চৌধুরী, সিনিয়র সহ-সভাপতি গিয়াসউদ্দিন মিলন, সহ-সভাপতি এএইচএম আহসান উল্লাহ, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আল ইমরান শোভন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আউয়াল রুবেল, রিয়াদ ফেরদৌস, সিনিয়র সদস্য মুনীর চৌধুরী, সাংস্কৃতিক সম্পাদক একে আজাদ, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক তালহা জোবায়ের, সাধারণ সদস্য জাকির হোসেন, ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কেএম মাসুদ, সাংবাদিক আশিক বিন রহিম প্রমুখ।

এ প্রেস ব্রিফিংয়ে মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েলকে প্রেসক্লাবের ২০২১ সালের কার্যনির্বাহী পরিষদের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছায় অভিনন্দন জানানো হয়।

সর্বাধিক পঠিত