• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

চাঁদপুর জেলা করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কমিটির সাথে সভায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব

লকডাউনে যা যা নির্দেশনা থাকবে তা সবাই মিলে বাস্তবায়ন করবেন

প্রকাশ:  ০৫ এপ্রিল ২০২১, ১৪:১২
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

চাঁদপুর জেলা করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কমিটির সাথে জুম অ্যাপের মাধ্যমে ভার্চুয়াল সভা করেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মোঃ মোহসীন। গতকাল ৪ এপ্রিল রোববার সকাল সাড়ে ৯টায় জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় অংশ নিয়ে আরো বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ বিপিএম (বার), চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মোঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল, সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহ, জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক খলিলুর রহান, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা প্রমুখ।
সভায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মোঃ মোহসীন বলেন, এই মহামারীতে রাষ্ট্রিয় ও সামাজিক দায়িত্বে আমরা যেনো কেউ পিছিয়ে না পড়ি। আমি যতটুকু জানি, দুর্যোগময় মুহূর্তে চাঁদপুরের মানুষদের ডাকলেই সবাই আসেন। আশাকরি এই মহামারীর দ্বিতীয় ধাপ মোকাবেলায় সরকার ও প্রশাসনের সাথে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সম্পৃক্ততা থাকবে। জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, চিকিৎসকসহ সকল শ্রেণী পেশার মানুষ বিশেষ ভূমিকা রাখবেন বলে প্রত্যাশা করি। তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে, দেশের সকল জেলার মধ্যে চাঁদপুরের গুরুত্ব অনেক। এই জেলা একটি ট্রানজিট অবস্থানে। যেখানে মানুষের ঘনত্ব বেশি। আর এই জেলাটিই এখন করোনার ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম। তাই আমাদের সবাইকে এর থেকে পরিত্রাণ পেতে কাজ করতে হবে। এই জেলার পাশাপাশি সমস্ত দেশেই আমাদের নেমে যেতে হবে একে প্রতিরোধ করতে। তিনি বলেন, সোমবার থেকে দেশে লকডাউন শুরু হচ্ছে। এই লকডাউনে যা যা নির্দেশনা থাকবে তা সবাই মিলে বাস্তবায়ন করবেন।
তিনি বলেন, আমি চাঁদপুরে একাধিকবার গিয়েছি। এখানে আমাদের মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি রয়েছেন। তিনি অত্যন্ত আন্তরিক। তিনি বলেন, সারাদেশের আক্রান্ত এবং মৃত্যুর হারে যেসব জেলা রয়েছে তার মধ্যে চাঁদপুরও রয়েছে। সেখান থেকে আপনাদের উত্তরণ করতে হবে। আমি জানতে পেরেছি এখানে আইসিইউ নেই। এটি আসলে ভাবনার বিষয়। এখানে আইসিইউর প্রয়োজন রয়েছে। আপনারা বিষয়টি মন্ত্রী মহোদয়কে অবহিত করবেন। অক্সিজেনের সঙ্কট কিংবা হাসপাতালে শয্যার সঙ্কট থাকলে আপনারা মন্ত্রী মহোদয়ের সাথে আলোচনা করে সমাধান করে নেবেন। আমাদের কাছ থেকে যা যা সহযোগিতা প্রয়োজন আমরা তাই করবো। তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্দেশ্যে বলেন, মসজিদসহ সকল ধর্মীয় উপাসনালয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। মসজিদে আসা মুসল্লিরা যেনো মুখে মাস্ক পরা থাকে, তারা যেনো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে সেটি আপনারা নিশ্চিত করবেন। এটি আপনারা দ্রুততার সাথে করবেন। সচিব বলেন, সামনে রমজান, মসজিদগুলোতে মুসল্লি বেড়ে যাবে। তাই আগে থেকেই স্বাস্থ্যবিধিসহ এসব বিষয়ে ইমাম সাহেবদের নিয়ে প্রচারণা চালাতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ তাঁর বক্তব্যে জেলায় গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো তুলে ধরেন। এর পাশাপাশি সরকারি ঊর্ধ্বতন নির্দেশনা পালনে তিনি কী কী ভূমিকা নিয়েছেন তা তুলে ধরেন। জেলা প্রশাসক বলেন, চাঁদপুর একটি নদী সিকস্তি এলাকা। এখানে নি¤œ আয়ের মানুষের সংখ্যা বেশি। চর এলাকা বেশি। তাই আমাদের মানবিক সহায়তা বেশি প্রয়োজন হয়। বর্তমানে এই প্রয়োজন অপ্রতুল। তিনি এই দুর্যোগে সাহায্য-সহযোগিতা বাড়িয়ে দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, এই সময়ে সহযোগিতা বাড়িয়ে না দিলে আমরা সমস্যায় পড়ে যাবো। তার উত্তরে সচিব মোঃ মোহসীন বলেন, এটি জাতীয় সমস্যা। এই সমস্যা মোকাবেলায় যতটুকু সহযোগিতা করার আমরা করার চেষ্টা করবো। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সারাদেশ নিয়ে চিন্তা ভাবনা করছেন। তবে তিনি বলেন, প্রত্যেক ইউএনওকে সবদিক সতর্ক দৃষ্টি রাখতে বলবে।
পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ তাঁর বক্তব্যে বলেন, আমরা সারা জেলাতেই ঘুরে ঘুরে কাজ করছি। এ পর্যন্ত আমরা প্রায় ১০ হাজার মাস্ক বিতরণ করেছি। করোনার দ্¦িতীয় ঢেউয়ে আমাদের তিনজন পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হয়েছে। আমরা জেলা পুলিশ, নৌ-পুলিশ ও কমিউনিটি পুলিশসহ একসাথে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকেও আইজি স্যারের নির্দেশনা রয়েছে। আমরা এই করোনাকালে মাঠে আছি এবং মাঠে থাকবো।
চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মোঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল বলেন, এই দুর্যোগ মোকাবেলায় আমরাও আপনাদের সাথে আছি এবং থাকবো। সরকারের যে কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আমরা সর্বোচ্চ সচেষ্ট থাকবো।  
সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহ তাঁর বক্তব্যে চাঁদপুরের করোনার দ্বিতীয় ঢেউসহ গত বছরের আক্রান্ত রোগী এবং মৃত্যুর সংখ্যা তুলে ধরেন। এছাড়াও আইসিইউ নেই এবং এর গুরুত্ব তুলে ধরে জরুরি ভিক্তিতে আইসিইউ স্থাপনে সচিবের কাছে অনুরোধ জানান। পাশাপাশি চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা বাড়ানোর কথাও তুলে ধরেন। সিভিল সার্জন আরো বলেন, আমাদের স্টাফ, নার্সিংয়ে সঙ্কট রয়েছে। সেগুলো কাটানো জরুরি।
চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী বলেন, লকডাউন শুরু হলে এখানের শ্রমজীবী মানুষই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। গত বছরে করোনার শুরুতে ’ত্রাণ যাবে বাড়ি’ এমন একটি কর্মসূচি নেয়া হয়েছিলো। যার ফলে নি¤œবিত্ত বা মধ্যবিত্ত সবাই উপকৃত হয়েছিলো। এবার সে ধরনের কোনো কর্মসূচি থাকবে কি না। থাকলে মানুষ উপকৃত হবে। এ পর্যায়ে সচিব মোঃ মহোসীন বলেন, আপনারা সাংবাদিকরা সমাজের দর্পণ। আপনারা সচেতনতা সৃষ্টিতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারেন এবং রাখছেনও। আপনি যে প্রস্তাবটি রেখেছেন, সে বিষয়ে আমরা আলোচনা করবো। মানুষ যেনো লকডাউনের নিয়মগুলো পালন করে সে বিষয়ে আপনারা দৃষ্টি রাখবেন। আমরা সবাই মিলে কাজ করতে চাই।
সভায় জেলা করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কমিটির অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

 

সর্বাধিক পঠিত