• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

বড়কুল ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ

দলীয় মনোনয়ন না দিতে জোরালো দাবি

প্রকাশ:  ০৪ মার্চ ২০২১, ০৯:৩৪
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

হাজীগঞ্জের ৬নং বড়কুল পূর্ব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কবির হোসেন মিয়াজীর বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এসব কারণে তিনি ব্যাপকভাবে সমালোচিত। তার পুরো মেয়াদে তিনি তার ইউনিয়নের অসংখ্য মানুষ থেকে নানাভাবে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অনেকেই অভিযোগ করেন। অভিযোগ রয়েছে, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতাসহ এমন কোনো ভাতা নেই যে ভাতার কার্ডের বিপরীতে চেয়ারম্যান কবির হোসেন মিয়াজীকে টাকা দিতে হতো না। তাকে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে দেয়া লাগতো প্রতিটি কার্ডের জন্যে। তবে এই টাকা চেয়ারম্যান কবির সরাসরি নিতেন না। তার নিকটাত্মীয় কথিত তরুণ লীগ নেতা কাউছার হামিদ মিয়াজীই হচ্ছেন চেয়ারম্যানের সকল অবৈধ অর্থ আদায়সহ নানা অনৈতিক কাজের নিয়ন্ত্রক এবং যোগানদাতা। এই কাউছার হামিদ মিয়াজী হাজীগঞ্জের এন্নাতলী গ্রামের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নূরে আলম পাটওয়ারী হত্যা মামলার প্রধান আসামী। ২০১৯ সালের ২৭ মে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নূরে আলম পাটওয়ারী হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটে। পরদিন নিহত নূরে আলমের মা হোসনেয়ারা বাদী হয়ে কাউছার হামিদকে প্রধান আসামী করে পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে হাজীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। কাউছার এ ঘটনায় আটকও হয়। তবে কাউছার যাতে আটক না হয় তখন চেয়ারম্যান দলের প্রভাবশালী নেতাদের কাছে ধর্ণা ধরলেও কোনো কাজ হয়নি। কেউই তাকে প্রশ্রয় দেয়নি। এছাড়া টিআর, কাবিখা, ৪০ দিনের কর্মসূচিসহ সরকারি আরো নানা আর্থিক খাত থেকে চেয়ারম্যান কবির বিপুল পরিমাণ অর্থ অবৈধভাবে হাতিয়ে নেন। তবে চেয়ারম্যান এসব অভিযোগ খুব দৃঢ়তার সাথে অস্বীকার করেন।
চেয়ারম্যান কবির হোসেন মিয়াজীর বিরুদ্ধে শুধু ভাতার কার্ড থেকে অবৈধ বাণিজ্যই নয়, সরকারের নানা উন্নয়ন কাজেও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার তাকে মোটা অঙ্কের চাঁদা দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। ২০১৯ সালের ২৯ মার্চ হাজীগঞ্জের বিশিষ্ট ঠিকাদার ও আওয়ামী লীগ নেতা আহসান হাবীব অরুণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রজেক্ট ম্যানেজার মোঃ সাইফুল ইসলাম ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসেন মিয়াজীর বিরুদ্ধে থানায় চাঁদাবাজির অভিযোগ করেন।
অভিযোগ রয়েছে, এন্নাতলী গ্রামের জনগণ থেকে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্যে জনপ্রতি ২০-২৫ হাজার টাকা করে নেয়া হয়েছে। চেয়ারম্যানের নির্দেশে তার লোকজন এসব টাকা সংগ্রহ করেন। অথচ সরকারিভাবে খরচ যৎসামান্য।
চেয়ারম্যান তার চাঁদাবাজিসহ অবৈধ কাজগুলো সম্পন্ন করার জন্যে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এই সিন্ডিকেটের প্রধান হচ্ছেন কাউছার হামিদ মিয়াজী। এই সিন্ডিকেটের সদস্যরাই চেয়ারম্যানের সকল অনৈতিক কাজ বাস্তবায়ন করে থাকেন। তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচন করলেও পাস করার পর জামাত-বিএনপির লোকরাই তার কাছের লোক এবং আপনজন হয়ে যান। একই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জামাত নেতা মাওঃ আবু জাফর সিদ্দিকীর সাথে রয়েছে কবির চেয়ারম্যানের দারুণ সখ্যতা। জামাত ঘরানার বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে জামাত নেতা আবু জাফর সিদ্দিকীর সাথে চেয়ারম্যান কবির হোসেন মিয়াজীকে একই মঞ্চে বিভিন্ন সময় দেখা গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, কবির হোসেন মিয়াজী চেয়ারম্যান হওয়ার আগে ঢাকা কারওয়ান বাজারে তার ছোট্ট একটি কাঁচামালের দোকান শুধু ছিল। কিন্তু চেয়ারম্যান হওয়ার পর তিনি যেনো আলাদিনের চেরাগ পেয়ে গেলেন। ঢাকার কাজলায় পাঁচ কাঠা জমির উপর নয় তলা বিশিষ্ট অত্যাধুনিক বাড়ি, নিজস্ব করোলা টয়োটা গাড়ি, যাত্রাবাড়িতে বিভিন্ন নামে কয়েকটি ফ্ল্যাট আছে চেয়ারম্যান কবির হোসেন মিয়াজীর। চেয়ারম্যান থাকাকালীন অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিত্তের মালিক হয়েছেন তিনি। সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হচ্ছে- তিনি নৌকা নিয়ে পাস করলেও নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার পর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ দলীয় কারো সাথে তার কোনো সম্পর্ক থাকে না। তার এসব অন্যায়, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও আত্মীয়করণের সংবাদ ইতিপূর্বে কয়েকবার চাঁদপুর জেলার স্থানীয় বিভিন্ন পত্রিকাসহ জাতীয় মিডিয়ায়ও এসেছে। ৬নং বড়কুল পূর্ব ইউনিয়ন আওয়ামী লীগসহ সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের একটাই দাবি, দুর্নীতিবাজ এবং আদর্শহীন কবির হোসেন মিয়াজীকে যেনো কোনোভাবেই আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক দেয়া না হয়। এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য মহান মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীরোত্তম এবং ইউনিয়নসহ উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন দলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা।
এসব অভিযোগ দৃঢ়তার সাথে অস্বীকার করে চেয়ারম্যান কবির হোসেন মিয়াজী বলেন, আমি আমার মেয়াদে কারো কাছ থেকে দশ টাকা নিয়েছি এমন প্রমাণ কেউ দেখাতে পারলে আমি রাজনীতি ছেড়ে দেবো। এসব কিছু ষড়যন্ত্রকারীর প্রপাগান্ডা বলে তিনি দাবি করেন। এবারো তিনি দলের মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ছাত্রলীগ দিয়ে আমার রাজনৈতিক জীবন শুরু। ২০০৪ সাল থেকে অদ্যাবধি আমি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সেক্রেটারী। এরপরও নৌকা যে পাবে তার জন্যে তিনি কাজ করবেন বলে জানান।

 

সর্বাধিক পঠিত