• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

দায়িত্ব নিয়েই প্রথমদিন অফিস করলেন চাঁদপুর পৌরসভার নবনির্বাচিত মেয়র

নাছির ভাইয়ের রেখে যাওয়া কাজের হাত ধরেই আমরা এগিয়ে যাবো : মেয়র অ্যাডঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল

আনন্দ-বেদনা মিশ্রিত দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে : বিদায়ী মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদ

প্রকাশ:  ২৬ অক্টোবর ২০২০, ১০:১৪
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নিয়েছেন চাঁদপুর পৌরসভার নবনির্বাচিত মেয়র অ্যাডঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল। গতকাল ২৫ অক্টোবর রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় তিনি পৌরসভা ভবনে নিজ কার্যালয়ে মেয়রের চেয়ারে বসে অফিস করেন। এর আগে বিদায়ী মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদের কাছ থেকে তিনি দায়িত্ব বুঝে নেন। তিনি পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারী ও কাউন্সিলরদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এবং গুরুত্বপূর্ণ দু-একটি ফাইলপত্র দেখেন। নবাগত মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল রাজনৈতিক মতপার্থক্য ভুলে একযোগে কাজ করতে কাউন্সিলর ও পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি আহ্বান জানান।


এদিন আগে থেকেই নতুন মেয়রকে বরণ করে নিতে উদগ্রীব ছিলেন পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। মেয়র যখন পৌর ভবনে ঢুকেন তখন প্রধান গেট থেকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা করতালির মাধ্যমে তাদের প্রিয় নতুন মেয়রকে স্বাগত জানান। এরপর বিদায়ী মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদের আগমনে সেখানে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে দায়িত্বভার হস্তান্তর করা হয়।

 


আগে থেকেই দুই মেয়রের জন্যে দুটি চেয়ার পাশাপাশি রাখা ছিল। সেই চেয়ারের একটিতে বসেন বিদায়ী মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদ ও অপরটিতে বসেন নতুন মেয়র অ্যাডঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল। এরপর শুরু হয় পৌরসভার দায়িত্ব হস্তান্তরের কার্যক্রম। পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী এইচএম শামসুদ্দোহা, একাউন্টস অফিসার মোঃ মশিউর রহমান, টাউন প্লানার সাজ্জাদ হোসেনসহ সংরক্ষিত ৫টি ওয়ার্ডের নির্বাচিত নারী কাউন্সিলর এবং ১৫টি ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলরগণ এবং পৌরসভার অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

 


বিদায়-বরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিদায়ী মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ, নবনির্বাচিত মেয়র অ্যাডঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল, পৌরসভার সচিব আবুল কালাম ভূঁইয়া, কাউন্সিলরদের মধ্যে আয়েশা রহমান ও অ্যাডঃ হেলাল উদ্দিন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন পৌর প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোঃ মফিজ উদ্দিন হাওলাদার।

 


বিদায়ী মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ তাঁর বক্তব্যে বলেন, আমি আমার দায়িত্বকালীন সময়ে সর্বোচ্চ দিয়ে পৌরসভার উন্নয়নে কাজ করেছি। এ পৌরসভার স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করেছি। প্রতি মাসে পরিষদের সবাইকে নিয়ে সভা করেছি। প্রয়োজনে একমাসে দুটি সভাও করা হয়েছে।

এর আগে এমন চর্চা ছিলো না। আমাদের পৌরসভার টাকা পয়সার লেনদেন এখন আর হাতে হয় না। সবকিছু অনলাইনে ব্যাংকের মাধ্যমে হয়। পৌরকর, ট্যাঙ্ ও ভাড়া আদায় থেকে শুরু করে সকল টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে নেয়া হয়। এতে করে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়েছে। পৌরসভায় এখন আর দুর্নীতি নেই বললেই চলে। বাংলাদেশে এটি একটি উদাহরণ। তাই এটাকে ধরে রাখতে হবে। যেহেতু ভালোর কোনো শেষ নেই, তাই আরো ভালো করতে হবে। পৌরবাসীর সেবার মান আরো উচ্চতায় নিয়ে যেতে হবে।

তিনি আরো বলেন, আমি যখন দায়িত্ব নিয়েছি তখন এ পৌরসভার আয় ছিলো মাত্র সাড়ে তিন কোটি টাকা। এবারের বাজেটে আয় ধরা হয়েছে ৩০ কোটি টাকা। অর্থাৎ পৌরসভার সকল ব্যয়ভার বহন করার পরেও পৌরসভার নিজস্ব ফান্ড থেকে বছরে ৭/৮ কোটি টাকার কাজ করা হয়। এটাকে আরো উন্নতি করতে হবে।

আবেগাপ্লুত কণ্ঠে নাছির উদ্দিন আহমেদ আরো বলেন, প্রত্যেক মানুষের জীবনে আনন্দ এবং বেদনার দিন আসে। আজকের দিনটি আমার জন্যে আনন্দের এবং বেদনা মিশ্রিত। কারণ, আজকে আমার বিদায়ের দিন। এটি বেদনার হলেও এটিই নিয়ম। আর আনন্দের হচ্ছে, নতুন মেয়র আমার ছোট ভাই। তিনি আমাদের দলের লোক। অত্যন্ত ভদ্র, মেধাবী এবং ভালো মানুষ। সেজন্যে আমি আনন্দিত। পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বলেছি, আপনারা নতুন মেয়রকে আমার চেয়েও বেশি সহযোগিতা করবেন। তাহলেই আমি আরো বেশি খুশি হবো।

তিনি বলেন, মেয়র হিসেবে আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে চাঁদপুর পৌরসভাকে একটি প্রথম শ্রেণীর পৌরসভায় রূপ দিতে পেরেছি। পৌরসভার উন্নয়নে আমি যে কাজ করেছি, নতুন মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণের পর তার চেয়ে বেশি কাজ করলেই আমি আরো বেশি খুশি হবো।

নবাগত মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল বলেন, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে ৫ বছর অন্তর অন্তর জনপ্রতিনিধিরা আসবেন যাবেন এটাই নিয়ম। কিন্তু প্রতিষ্ঠান থাকবে। এভাবেই একটি প্রতিষ্ঠানের সার্বিক উন্নয়ন ও শ্রীবৃদ্ধি হয়। ১২৪ বছরের চাঁদপুর পৌরসভার বিগত দিনে যাঁরাই দায়িত্বে ছিলেন তাঁরা প্রত্যেকে নিজেদের যোগ্যতা এবং কাজে পৌরসভার উন্নয়নে কিছু না কিছু করে গেছেন। আজকের এই নতুন যাত্রায় নাছির ভাইয়ের রেখে যাওয়া কাজের হাত ধরেই আমরা এগিয়ে যাবো। তিনি বলেন, আমরা পৌরসভার নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে ভোটারদের কাছে যে ইশতেহার দিয়েছি, এখন আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ তা বাস্তবায়ন করা। সেই ইশতেহার বাস্তবায়নে এই পরিষদের সবাইকে একটি পরিবার হয়ে কাজ করতে হবে। বিগত সময়ে যারা পৌরসভার নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের মধ্যে ইউসুফ গাজী ও নাছির ভাই জীবিত আছেন। অন্যরা বেঁচে নেই। আমরা এ দু'জনের কাছ থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাবো। তাদের ভালো কাজগুলো অনুসরণ করবো। কোনো ভেদাভেদ না রেখে আমরা সবাই মিলেমিশে পৌরসভার উন্নয়নে কাজ করবো।

সর্বাধিক পঠিত