• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

অস্বচ্ছল ১০ শিক্ষার্থীর দায়িত্ব নিলো ইউথ বাংলা অ্যাসোসিয়েশন

প্রকাশ:  ১৫ নভেম্বর ২০১৮, ১০:৩৭
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

ফরিদগঞ্জ উপজেলার কড়ৈতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির নির্বাচনী পরীক্ষায় প্রথম হওয়া শিক্ষার্থী শাকিল শেখ। তার বৃদ্ধ বাবা শফিক শেখ ঢাকার একটি বহুতল ভবনের নাইটগার্ড হিসেবে কাজ করে। চার ভাই-বোনের মধ্যে শাকিল ৩য়। নাইটগার্ডের সামান্য আয়ে চার সন্তানের পরিবার চালাতে হিমশিম খেলেও শফিক শেখের ঘরে জন্ম নিয়েছে অদম্য মেধাবী শাকিল শেখ। ছাত্রজীবনে সর্বদাই প্রথম হয়ে আসা শাকিল ২০১৯ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী। স্কুলের নির্বাচনী পরীক্ষার ফলাফলের দিন তার সহপাঠীদের মুখে হাসি থাকলেও মেধা তালিকায় প্রথম হয়েও হাসি ফোটেনি শাকিল শেখের মুখে। কারণ সে নিশ্চিত ছিলো স্কুলের ফরম ফিলাপের টাকা যোগান দিতে পারবেন না তার হতদরিদ্র বাবা। তাই অনেকটাই হাল ছেড়ে দিয়েছে আসন্ন এসএসসি পরীক্ষার। যে মেধাবী শিক্ষার্থী পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত থাকার কথা সে যখন দিন পার করছিলো বিষণœতায়। তখনই তার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো ফরিদগঞ্জের তরুণদের নিয়ে গঠিত স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন ‘ইউথ বাংলা অ্যাসোসিয়েশন’। শাকিলকে জানান দিলো শুধু তার ফরম ফিলাপই নয়, এসএসসি পরীক্ষা দেয়া পর্যন্ত যা কিছু প্রয়োজন তার সবকিছুই বহন করবে সংগঠনটি। শাকিলের ফরম ফিলাপের দায়িত্ব নিয়ে স্কুলে গেলে সংগঠনের সদস্যরা জানতে পারে একই বিদ্যালয়ে আরও ৫ জন হতদরিদ্র শিক্ষার্থী রয়েছে। যারা নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও ফরম ফিলাপের অর্থ সংগ্রহের অভাবে এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছে। ইউথ বাংলা অ্যাসোসিয়েশন বাকি ৫ শিক্ষার্থীসহ একই বিদ্যালয়ের মোট ৬ শিক্ষার্থীর ফরম ফিলাপের দায়িত্ব নেয়।
সংগঠনের সদস্যরা নিজেদের টিউশনির টাকা থেকে টাকা জমিয়ে তৈরি করলো বড় একটি ফান্ড। যা দিয়ে গত ২৫ অক্টোবর কড়ৈতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ শিক্ষার্থীর ফরম ফিলাপ সম্পন্ন করে হাসি ফোটালো হতদরিদ্র এই কিশোর-কিশোরীদের মুখে। তাদের মৃতপ্রায় শিক্ষাজীবন যেনো নতুন করে প্রাণ ফিরে পেলো। সংগঠনের তরুণরা একই সাথে খোঁজ পেলো পার্শ্ববর্তী কড়ৈতলী কে.এ. আলিম সিনিয়র মাদ্রাসার ৪ শিক্ষার্থীর যারা আথিক সঙ্কটে দাখিল পরীক্ষার ফরম ফিলাপ করতে পারছে না। তাদেরও দায়িত্ব নিলো সংগঠনটি। শুধু ফরম ফিলাপই নয়, দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে বাছাই করা ১৫ জন দরিদ্র শিক্ষার্থীর হাতে দিলো আগামী এক বছরের শিক্ষা উপকরণ। যারা প্রত্যেকেই মেধাবী। একটু আলোর দেখা পেলেই যারা বিকশিত হতে পারবে আপন গ-িতে। তাইতো তাদের সেই আগামীদিনের আলোর পথ দেখালো ইউথ বাংলা অ্যাসোসিয়েশন নামক স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠনটি।  
নিজ সন্তানের ফরম ফিলাপ হয়েছে জানতে পেরে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন দরিদ্র পরিবারগুলো। একঝাঁক তরুণের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন ফরিদগঞ্জের বিভিন্ন সামাজিক নেতৃবৃন্দ। সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে তরুণদের মাদক, জঙ্গিবাদ, বাল্যবিবাহসহ সামাজিক অবক্ষয় থেকে তরুণদের দূরে রাখতে একাধিক সামাজিক কর্মসূচিগ্রহণ করেছে। ইউথ বাংলা অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাহিদুল ইসলাম মাহি চাঁদপুর কণ্ঠকে বলেন, সংগঠনটি দরিদ্র, অসহায় এবং সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সমাজের বিত্তবান ও সমাজসেবকগণ যদি সংগঠনটির পাশে এসে দাঁড়ায় তবে আমরা ভবিষ্যতে এভাবে দরিদ্র মেধাবীদের খুঁজে বের করে তাদের আলোকিত শিক্ষাজীবন নিশ্চিত করতে পারবো। আমরা সকলের দোয়া ও সমর্থন প্রত্যাশা করছি। আগামীতে ওদের জন্যে আরও ভালো কিছু করতে পারবো বলে আশা ব্যক্ত করছি।
অর্থাভাবে শিক্ষাজীবন টিকে থাকবে কি থাকবে না এমন দোটানায় থাকা ১০ শিক্ষার্থীর মুখে হাসি ফুটিয়ে ইউথ বাংলা অ্যাসোসিয়েশন জানান দিলো, মানুষ মানুষের জন্যে। সমাজের স্বচ্ছল ব্যক্তিগণ সকলে সংগঠনের এ তরুণদের পথে হাঁটলেই ধনী-গরিবের বৈষম্য কমে আসার পাশাপাশি আমরা গড়তে পারবো একটি স্বপ্নসুখের বাংলাদেশ।

সর্বাধিক পঠিত