• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

বাহরাইনে নিহতদের বাড়িতে শোকের মাতম ॥ লাশ দেশে আনতে সরকারের কাছে দাবি

প্রকাশ:  ১২ অক্টোবর ২০১৮, ০০:২৭
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

 গত ৯ অক্টোরব বাহরাইনের মানামা সিটিতে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ শেষে ধসে পড়া ভবনের দুর্ঘটনায় মারা যান চাঁদপুরের দু’জন। এর মধ্যে জাকির হাজীগঞ্জের কালোচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামের বকাউল বাড়ির আব্দুল রশিদ বকাউলের ছেলে, আর হান্নান কচুয়া উপজেলার কড়ইয়া ইউনিয়নের পরানপুর গ্রামের প্রধানীয়া বাড়ির ফজলুল হক প্রধানীয়ার ছেলে। দুর্ঘটনার পর পর নিহতদের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। এদিকে জাকির কিংবা হান্নানের লাশ ঠিক কবে, কিভাবে দেশে আনা হবে এ বিষয়ে উভয় পরিবারের কেউ কিছু বলতে পারছে না। তবে সরকার উদ্যোগ নিয়ে যদি নিহতের লাশ দেশে আনার ব্যবস্থা করে দেয় তাহলে পরিবারগুলো সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে বলে জানান নিহতের স্বজনরা।
    জানা যায়, বাহরাইনের মানামা সিটির কুমিল্লা হোটেলের বিপরীতে একটি ভবনে বাস করতো কয়েকশ’ বাংলাদেশী। এই ভবনের ২য় তলায় থাকতো হাজীগঞ্জের জাকির আর কচুয়ার হান্নান। গত ৯ অক্টোবর অন্য সকল নিহত বাংলাদেশীর মতো এ দুজনকে ভাগ্য নিয়ে গেছে মৃত্যুর কাছে।
    জানা যায়, জাকির ও তার অপর ভাই জুলহাস থাকতো একই রুমে। ওই দিন সন্ধ্যা রাতে জাকিরকে রুমে রেখে বড় ভাই জুলহাস যান বাজার করতে আর হান্নানের রুমমেটরা পাশের হোটেলে চা খেতে যাওয়ার জন্যে প্রস্তাব করলে হান্নানের শরীর খারাপ বলে তিনি রুমেই থেকে যান। এর কিছু পরেই ঘটে ঐ দুর্ঘটনা। যে দুর্ঘটনা জাকিরের নিঃসন্তান স্ত্রীকে করেছে বিধবা আর হান্নানের ৩ সন্তানকে করেছে পিতৃহারা।
    সরজমিনে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে হাজীগঞ্জের জাকিরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় পরিবারের ছোট ছেলেকে হারিয়ে শোকের মাতম চলছে পুরো পরিবারে। নিঃসস্তান স্ত্রী লিপিকে গতকাল পর্যন্ত জানানো হয়নি যে, ইতিমধ্যে তার স্বামী সকলের মায়া ত্যাগ করে পরপারে পাড়ি জমিয়েছে। লিপিকে সবাই সান্ত¡না দিয়ে রেখেছে, জাকির বাহরাইনে মারাত্মক আহত হয়েছে, সেখানে তার চিকিৎসা চলছে। অপরদিকে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, কচুয়ার হান্নানের ৩ সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে হাজীগঞ্জের একটি কলেজে পড়ে এবং অন্য সন্তানরা ছোট। হান্নান ছিলো এই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। হান্নানকে হারিয়ে পুরো পরিবারটি পথে বসার উপক্রম হয়েছে।
    হাজীগঞ্জের জাকিরের বাবা বয়োবৃদ্ধ আব্দুল বাসার জানান, ৬ ছেলে ১ মেয়ের মধ্যে সবার ছোট  জাকির। প্রায় ১০ বছর হতে চললো ছেলে বিদেশ করছে। প্রায় ৮ বছর পূর্বে হাজীগঞ্জ পৌর এলাকার ধেররা গ্রামের আঃ মালেকের মেয়ে লিপির সাথে তাকে বিয়ে দেয়া হয়। এর মধ্যে বছর তিনেক পূর্বে সে দেশে এসেছে। আসছে নভেম্বরে সে দেশে আশার কথা ছিলো। ছেলের মৃত্যুর খবর বউকে জানানো হয়নি। আমার আরেক ছেলে জুলহাস জাকিরের সাথে একই রুমে ছিলো। জুলহাস বাজার করতে যাওয়ার পরেই এই ঘটনা ঘটে। জুলহাস ইতিমধ্যে জাকিরের কাজগপত্র দূতাবাসে জমা দিয়েছে। কিন্তু লাশ আমরা কবে পাবো বা আদৌ পাবো কি না তার কিছুই আমরা বলতে পারছি না।
    জাকিরের শ^শুর আঃ মালেক জানান, আমাদের ভাগ্যে যা হবার তা তো হয়েই গেছে। এখন সরকারের কাছে একটাই দাবি, সরকার যদি জাকিরের লাশটা দেশে আনার ব্যবস্থা করে দিতো তাহলে আমরা সরকারের কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকতাম।
    কালোচোঁ দক্ষিণ ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা স্বপন বলেন, নিহতের পরিবারের পক্ষে লাশ দেশে আনার কোনো সামর্থ্যই নেই। সরকার লাশ আনার ব্যবস্থা করলে পরিবারটি অন্তত সন্তানের লাশ দেখতে পারতো।

 

সর্বাধিক পঠিত