• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

কলেজের শিক্ষার্থী না হয়েও প্রতিষ্ঠানটির সাথে রয়েছে আমার নাড়ির সম্পর্ক : শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি

বাঁধভাঙ্গা উল্লাসে শেষ হলো চাঁদপুর সরকারি কলেজের ৭৫ বছর পূর্তি উৎসব

প্রকাশ:  ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১০:১৪ | আপডেট : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১০:১৬
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

অনাবিল আনন্দ আর  বাঁধভাঙ্গা  উচ্ছ্বাসে শেষ হলো চাঁদপুর সরকারি কলেজের ৭৫ বছর পূর্তি উৎসব ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান তথা প্লাটিনাম জুবিলি। চাঁদপুর স্টেডিয়ামের বিশাল জায়গা জুড়ে ব্যাপক সাজসজ্জা ও সৌন্দর্যের উৎকর্ষতায় আয়োজিত উৎসবটি নবীন-প্রবীণদের ব্যাপক উপস্থিতিতে চাঁদপুরে স্মরণাতীতকালের সর্বোচ্চ মিলন মেলায় পরিণত হয়। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার প্রাক্তন শিক্ষার্থী চলে আসেন ইতিহাস ঐতিহ্য আর সমৃদ্ধির জেলা চাঁদপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে আয়োজিত জেলার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের  জমকালো এ উৎসবে। অংশগ্রহণকারী প্রত্যেকে উৎসবের প্রতিটি পর্ব উপভোগ করেন  হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি হাতড়ানোর মধ্য দিয়ে। খুঁজে বেড়ান কলেজের  পুরানো বন্ধুদেরকে, যারা জীবিকার তাগিদে দেশের বিভিন্ন স্থানে  ও দেশের বাইরে অবস্থান নেয়ায় শত ব্যস্ততার মাঝেও  দীর্ঘদিন তাদের সান্নিধ্য পাওয়া সম্ভব হয়ে উঠেনি। উৎসবে এসে এই বন্ধুদের কাছে পেয়ে অনেকেই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। একে অপরকে জড়িয়ে ধরে হৃদয়ের বিশ্বাস আর গভীর ভালোবাসা দিয়ে। এ সময় অনেকেই রবীন্দ্রনাথের সেই গানের পংক্তি আওড়ান স্ফুট-অস্ফুট স্বরে--‘পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কিরে হায়, ও সে চোখের দেখা, প্রাণের কথা, সে কি ভুলা যায়! আয় আরেকটিবার আয়রে সখা, প্রাণের মাঝে আয়। মোরা সুখে-দুঃখের কথা কব, প্রাণ জুড়াব আয়, আয় আরেকটিবার প্রাণের মাঝে আয়’। আগত প্রবীণ-নবীনের হৃদয়ের আবেগ, অনুভূতি, আনন্দ, উল্লাস আর বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাসে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে পুরো উৎসব প্রাঙ্গণ।
সফলতার পরিপূর্ণতা চোখে পড়ে আয়োজকদের সকল আয়োজনে। চাঁদপুরের গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে গত  কয়েক মাসের ব্যাপক প্রচেষ্টায় গত ২৪ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার শুরু হয় ২ দিনব্যাপী উৎসব তথা প্লাটিনাম জুবিলি, গতকাল ২৫ ফেব্রুয়ারি শনিবার ছিল যার শেষদিন।  এদিনই ছিলো মূল পর্ব। এদিন সকাল ১০টায় শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপির উপস্থিতিতে চাঁদপুর সরকারি কলেজ মাঠ থেকে নবীন, প্রবীণ, ছাত্র-ছাত্রী আর আমন্ত্রিত অতিথিবর্গের ব্যাপক অংশগ্রহণে বিশাল বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়। বাদ্য-বাজনার তালে তালে আনন্দ-তরঙ্গে চাঁদপুর  শহরের প্রধান প্রধান সড়ক অতিক্রম শেষে শোভাযাত্রাটি চাঁদপুর স্টেডিয়ামে এসে শেষ হয়। সকাল ১১টা ৫৫ মিনিটে শান্তির পায়রা উড়িয়ে বহুল প্রতীক্ষিত পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি। এর পূর্বে ৭৫ বছরপূর্তি অনুষ্ঠানকে স্মরণীয় ও বরণীয় করে রাখার লক্ষ্যে ৭৫ জন স্থানীয় শিল্পী শ্রদ্ধাভরে একযোগে পরিবেশন করেন জাতীয় সংগীত। পরে আগত অতিথিসহ শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানিয়ে চাঁদপুরের সকল সাংস্কৃতিক সংগঠনের চৌকষ শিল্পীদের পরিবেশনায় অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ নৃত্যানুষ্ঠান ।  অনুষ্ঠানের সর্বাগ্রে পবিত্র কোরআান তেলাওয়াত করেন প্রাক্তন ছাত্র মোঃ ওয়ালিউল্লা, পবিত্র গীতা থেকে পাঠ করেন কলেজের প্রাক্তন ছাত্র তমাল কুমার ঘোষ, পবিত্র ত্রিপিটক থেকে পাঠ করেন বিশিষ্ট চিকিৎসক, লেখক ও ছড়াকার ডাঃ পীযুষ কান্তি বড়ুয়া। কলেজের দীর্ঘ ৭৫ বছরে  যারা ইতোমধ্যে পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেছেন তাদের রুহের মাগফেরাত ও  আত্মার  শান্তি কামনায় দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সকাল সোয়া ১২টায়  তুমুল করতালির মধ্য দিয়ে উৎসবের মূল পর্বের সফলতা কামনা করে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন প্রধান অতিথি চাঁদপুর-৩  আসনের সংসদ সদস্য শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান, শ্রদ্ধা জানান জাতীয় চার নেতাসহ যারা দেশমাতৃকার সেবায় নিজেদের জীবন বিসর্জন দিয়েছেন সেই বীর শহীদের প্রতি। তিনি চাঁদপুরবাসীর প্রতি অনেক ঋণ রয়েছে উল্লেখ করে বলেন, আপনারা চাঁদপুরবাসী যদি আমাকে ভোট না দিতেন এবং নির্বাচিত না করতেন তাহলে আজকের দীপু মনির এ স্থানে এভাবে এখানে আসা সম্ভব হতো না। আপনাদের কাছে আমি অনেক অনেক ঋণী। তিনি বলেন, চাঁদপুর সরকারি কলেজের অনেক ইতিহাস, ঐতিহ্য রয়েছে। রয়েছে দেশ বিদেশে তার অগণিত শিক্ষার্থী। যারা দীর্ঘসময় ধরে  দেশ-বিদেশে দেশের সুনাম রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছেন। আজ এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ৭৫ বছর পূর্তি উৎসব ও পুনর্মিলনী। আমি এই কলেজের ছাত্রী না হলেও আমার মা ছিলেন এই কলেজের ছাত্রী। তাই এই কলেজের সাথে রয়েছে আমার নাড়ির টান ও আত্মার সম্পর্ক। কলেজটি তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে যাবে এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি সর্বক্ষণ। কলেজটির বর্তমান বৈশিষ্ট্য হলো, এই কলেজসহ সরকারি মহিলা কলেজ, পুরানবাজার ডিগ্রি কলেজ ও বাবুরহাট স্কুল এন্ড কলেজে বর্তমানে যারা অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন তারা সকলেই এই কলেজের প্রাক্তন ছাত্র। কলেজটি কেবল শিক্ষার ক্ষেত্রেই নয়, রাজনীতি, ক্রীড়া ও সংস্কৃতিতেও সমানভাবে আলো ছড়িয়েছে এই নদীমাতৃক অঞ্চলে, যা কখনো ভোলার নয়, যা চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি কলেজের প্রবীণ-নবীন শিক্ষার্থীসহ সকলের উত্তরোত্তর সফলতা কামনা করেন।
অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে অনুভূতি ব্যক্ত করে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন কলেজের প্রাক্তন ছাত্র বুয়েটের ভিসি সত্যপ্রসাদ মজুমদার, নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান, একুশে পদকপ্রাপ্ত অণুজীব বিজ্ঞানী সমীর কুমার সাহা, শিশু ও মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব হাসানুজ্জামান কল্লোল, দেশখ্যাত ছড়াকার ও অবসরপ্রাপ্ত সচিব ফারুক হোসেন, জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান, বিএলএফ কমান্ডার সৈয়দ আবেদ মনসুর, কলেজের প্রাক্তন ছাত্র প্রবীণ ব্যক্তিত্ব সফিউদ্দিন আহমেদ। বক্তাগণ কলেজটিকে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ দেয়ার জন্যে প্রধান অতিথি শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপির সুদৃষ্টি কামনা করেন। অনুষ্ঠানের  শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র ও পুনর্মিলনী উদ্যাপন পরিষদের সদস্য সচিব জিল্লুর রহমান জুয়েল এবং সবশেষে সভাপ্রধানের বক্তব্য রাখেন কলেজের অধ্যক্ষ ও পুনর্মিলনী উদ্যাপন পরিষদের আহ্বায়ক প্রফেসর অসিত বরণ দাশ।  অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন কলেজের প্রাক্তন ছাত্র, খ্যাতিমান বিতার্কিক সাব্বির আজম। অনুষ্ঠান চলাকালীন তুমুল করতালিতে স্মারকগ্রন্থ ও তথ্যপঞ্জির মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধান অতিথি শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি।
উদ্বোধনের  প্রতিটি পর্ব ছিলো মনোমুগ্ধকর ও দর্শনীয়। যা সকলেই অধীর আগ্রহের সাথে উপভোগ করেন মনের একাগ্রতা নিয়ে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান মঞ্চে ২১শে পদকপ্রাপ্ত সিভাসুর সাবেক ভিসি গৌতম বুদ্ধ দাশ, ৬ বারের জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত গীতিকার কবির বকুল, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী, দেশের প্রখ্যাত ফুট সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডাঃ জেআর ওয়াদুদ টিপু, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি এএইচএম আহসান উল্লাহসহ কীর্তিমান প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
মধ্যাহ্নভোজ, বিকেলে স্মৃতিচারণ এবং সন্ধ্যায় শুরু হওয়া সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে অধিক রাত পর্যন্ত অব্যাহত থাকে চাঁদপুর কলেজের গৌরবের ৭৫বছর পূর্তি ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের নানা আয়োজন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ ছিলো ভারত থেকে আগত উপমহাদেশের প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী নচিকেতা চক্রবর্তী।

 

সর্বাধিক পঠিত