• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
  • ||
  • আর্কাইভ

চরদুঃখিয়া ইউনিয়নে পুরুষ শূন্য পরিবারের ওপর বর্বরোচিত হামলা

শিশুরা বালু নিয়ে খেলেছে, তাই মা-দাদি রক্তাক্ত জখম!

প্রকাশ:  ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:১৭ | আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:১৯
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

যুথির বয়স সাড়ে তিন বছর আর রাফির ২ বছর। তাদের ঘরের পাশেই রাখা বালু নিয়ে খেলা করছিলো তারা। গায়ে বালু মাখাতে তাদের মা হাওয়া বেগম ছেলে-মেয়েকে বকা দেন এবং বালুর পাশেই পানি দিয়ে ছেলেকে গোসল করান। বালুর স্তূপগুলো ছিলো পাশের ঘরের বিল্লাল মোল্লাদের। তাদের বালু কেনো ভিজালেন এটা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে হয় তুমুল ঝগড়া। এক পর্যায়ে বিল্লাল মোল্লার ছেলেরা কয়েক দফায় হাওয়া বেগম (২৮), তার ননদ রুমা আক্তার (২১) এবং শাশুড়ি বৃদ্ধা ফাতেমা বেগম (৬০)কে মারধর করে। জোরপূর্বক তারা হাওয়া বেগমের ঘরে প্রবেশ করে তাদের ওপর অত্যাচার চালায়।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হাওয়া বেগম বাদী হয়ে চাঁদপুর কোর্টে মামলা দায়ের করেন। মামলায় বিবাদী করা হয় মাসুদ মোল্লা, শরীফ মোল্লা (পিতা- বিল্লাল মোল্লা), বিল্লাল মোল্লা (পিতা মৃত আহমদ উল্যাহ মোল্লা), জান্নাত বেগম (পিতা- বিল্লাল মোল্লা) ও মনুফা বেগম (পতি বিল্লাল মোল্লা)।
মামলার আরজি মোতাবেক জানা যায়, ১২ ফেব্রুয়ারি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পূর্বের ভূমি সংক্রান্তের জের ধরে বাদিনী এবং তার স্বজনদের পুরুষ শূন্য অবস্থায় পেয়ে মেরে মারাত্মক জখম করে। পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক হাতে রড, বাঁশের লাঠিসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বাদীর বসত ঘরে অনধিকার প্রবেশ করে। এ সময় তার কোলে থাকা ৪ মাস বয়সি বাচ্চাকে ছুড়ে ফেলে বাদিনী হাওয়া বেগমকে এলোপাতাড়ি মারধর করে। বিল্লাল মোল্লা তার হাতের রড দিয়ে হাওয়ার মাথা লক্ষ্য করে সজোরে আঘাত করে। আঘাত পেয়ে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে মাসুদ মোল্লা হাওয়া বেগমের ৪ মাস পূর্বে সিজার করা স্থানে লাথি দিয়ে মারাত্মক আঘাত করে। শরীফ তার হাতে থাকা রড দিয়ে হাওয়া বেগমকে বাম বাহুতে আঘাত করে। হাওয়া বেগমের ডাক-চিৎকারে সেখানে ছুটে আসে তার শাশুড়ি ফাতেমা বেগম এবং ননদ রুমা আক্তার। তাদেরকেও ছাড়েনি মাসুদ আর শরীফ। বৃদ্ধা ফাতেমা বেগমকে (৬০) আঘাত করে আধমরা করে রাখে। বাঁশ দিয়ে ফাতেমা বেগমের পিঠে আঘাত করা হয়। এ সময় তারা রুমা বেগমকে গলা টিপে ধরে শ^াসরোধ করে হত্যা করার চেষ্টা করে। এছাড়া তারা তরুণী রুমার তল পেটেও লাথি মারে। এ সময় তারা ঘরে ভাংচুর এবং লুটপাট করে এবং রুমার গলায় থাকা ১ ভরি স্বর্ণের চেইন, আলমিরার ড্রয়ার থেকে নগদ ৩৫ হাজার টাকা নিয়ে যায়। ভবিষ্যতে বাড়াবাড়ি করলে হাওয়া বেগম গংকে জানে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। মারামারির এক পর্যায়ে অবস্থা খারাপ দেখে বাড়ির লোকজন তাদের উদ্ধার করে প্রথমে ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিতে গেলে হামলাকারীরা বাধা সৃষ্টি করে। উপায় না পেয়ে তারা চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা নেয়। তারা ১২ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি ছিলো। চিকিৎসার কারণে কোর্টে মামলা করতে দেরি হয়েছে বলে আরজিতে উল্লেখ করা হয়। মারামারির একাধিক ভিডিও ঘটনার সত্যতা প্রমাণ করে।
ঘটনাস্থলে গেলে কাতরাতে কাতরাতে বৃদ্ধা ফাতেমা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, বাবা ওরা আমাকে বাঁশ দিয়ে পিঠে বাড়ি দিয়েছে। আমার পুতের বৌ আর আমার মেয়েকেও মেরেছে।
মামলার বাদী হাওয়া বেগম সাংবাদিকদের বলেন, আমার আর আমার ননদের ছোট ছোট বাচ্চাগুলো ওদের বালি নিয়ে খেলতে গিয়ে নিজেদের শরীর বালু দিয়ে ভরে পেলে। আমি তাদের বকা দিয়ে ওইখানে পানি নিয়ে তাদের গোসল করাই। গোসলের পানি তাদের বালুতে কেন গেলো সেজন্য ওরা আমাদের ঘরে প্রবেশ করে আমাদের মেরেছে। আমার ৪ মাসের সন্তানকে আমার কোল থেকে কেড়ে নিয়ে ছুড়ে মেরে ফেলে দিয়েছে। তারপর রড দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করলে আমি মাটিয়ে লুটিয়ে পড়ি। এ সময় তারা আমার সিজারের জায়গায় লাথি মারে।
ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযুক্ত পুরুষদের কাউকে পাওয়া যায়নি। তাদের মোবাইল নাম্বার চাওয়ার পর তাদের স্ত্রীরাও পালিয়ে যায়। পরে ৫নং আসামী বিল্লাল মোল্লার স্ত্রী মনুফা বেগম (৫০)-এর কাছে জানতে চাওয়া হয় ১২ ফেব্রুয়ারি কী হয়েছিলো। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আমাদের জায়গায় বালু রাখছি। তাদের বাচ্চারা আমাদের বালু নষ্ট করে দিছে। পানি ঢেলে দিয়েছে। আমরা বাচ্চাদের বকা দিলে তারা উল্টো আমাদের গালি দিয়েছে। ‘তাদের ঘরে গিয়ে কেন মারলো আপনার সন্তানরা’ এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওদের মুখ খারাপ। আমার স্বামীর দাড়ি ছিঁড়ে ফেলছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা ঢাকায় আছে।