• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

সঞ্চয়পত্রে আবারো কমবে সুদহার

প্রকাশ:  ২১ জুলাই ২০২২, ১০:০৬
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

সাধারণ মানুষের কাছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি পর্যায়ক্রমে কমিয়ে আনার পরিকল্পনা করেছে অর্থ বিভাগ। আগামী তিন বছরে কমপক্ষে ১০ হাজার কোটি টাকা বিক্রি কাটছাঁট করা হবে। এ খাতে সুদহারও হ্রাস করা হচ্ছে। সঞ্চয়পত্রের সুদ পরিশোধ ব্যয় কমাতে এ সিদ্ধান্তের দিকে যাচ্ছে সরকার। তবে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন মধ্যবিত্তরা। কারণ নিরাপদ বিনিয়োগ ও মুনাফার জন্যে অধিকাংশ মধ্যবিত্ত পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ও ব্যাংকে রাখার পরিবর্তে সঞ্চয়পত্র কিনে থাকেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।
সংশ্লিষ্টদের মতে, কবে নাগাদ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসবে, সেটি অনিশ্চিত। অব্যাহত আছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। বিনিয়োগের উৎস ব্যাংক থাকলেও সেখানে আমানতের সুদহার কম। অনিরাপদ হয়ে উঠছে অস্থিতিশীল পুঁজিবাজারও। এর মধ্যে মধ্যবিত্তদের একমাত্র ভরসা হচ্ছে সঞ্চয়পত্র খাত। বৃহত্তম একটি জনগোষ্ঠী উপকৃত হচ্ছে এখানে বিনিয়োগ করে। সামাজিক সুরক্ষার আওতা হিসাবে এটি কাজ করছে। কিন্তু এখানে বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে আনলে বড় একটি শ্রেণি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাদের মতে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয় খেলাপি ঋণের অঙ্ক বেড়েই চলছে। ব্যাংকগুলো নিজেই স্বীকার করে নিচ্ছে খেলাপি ঋণই এখন তাদের গলার কাঁটা। এ ঋণের কারণে ব্যাংকের ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ছে। তবে এই খেলাপি ঋণ রাষ্ট্রের যেভাবে ব্যয় বাড়াচ্ছে, সেটি সঞ্চয়পত্রের বিপরীতে সাধারণ মানুষকে দেওয়া সুদের তুলনায় অনেক বেশি। কিন্তু খেলাপি ঋণ আদায়ের হার খুব বেশি নয়। চলতি অর্থবছরে যেখানে সঞ্চয়পত্রের বিপরীতে সুদ দিতে সরকারের ব্যয় হবে ৩৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। অপরদিকে গত জুন পর্যন্ত দেশে খেলাপি ঋণের অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের খেলাপি ঋণসংক্রান্ত হালনাগাদ প্রতিবেদনে গত জানুয়ারি থেকে মার্চ-এই তিন মাসে রাষ্ট্রের খেলাপি ঋণের অঙ্ক বেড়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা। ঋণখেলাপিরা হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করছে খুব অল্প সময়ে। এসব অর্থ জনগণের।
সাবেক সিনিয়র অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ বলেন, সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার সীমা কমানো হলে বিক্রি কমবে। এতে মধ্যবিত্ত মানুষের জন্যে সমস্যা হবে। কারণ মধ্যবিত্ত মানুষগুলো এ সঞ্চয়পত্রের মুনাফা দিয়ে অনেকে সংসার পরিচালনা করছেন।
যাদের হাতে পুরোনো সঞ্চয়পত্র থাকবে, তারা উচ্চ সুদ পাবে, নতুনরা কিনতেও পারবে না। অর্থ বিভাগের মধ্যমেয়াদী অর্থনৈতিক পরিকল্পনা মতে, আগামী ২০২২-২৩ থেকে ২০২৪-২৫ পর্যন্ত এ তিন অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ঋণ নেয়া ৯ হাজার ৭২০ কোটি টাকা কমিয়ে আনবে সরকার। ঋণ গ্রহণ কমানোর অর্থ সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা কমবে। এর মধ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ খাত থেকে ঋণ (সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি) নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এরপর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমিয়ে ২৭ হাজার ৫শ’ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হবে। অর্থাৎ দ্বিতীয় বছরে সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। পরবর্তী অর্থাৎ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আরও ২ হাজার ২২০ কোটি টাকা কমিয়ে ২৫ হাজার ২৮০ কোটি টাকা সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।
সুদহার প্রসঙ্গে বলা হয়, আগামী অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ ঋণের (ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্র খাত) গড় অন্তর্নিহিত সুদহার ৭ দশমিক ৯ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রাক্কলন করা হয়েছে। মধ্যমেয়াদে সার্বিক সুদহার ৬ শতাংশের নিচে আনা হবে। এতে সঞ্চয়পত্র খাতে বড় ধরনের সুদহার কমানো হবে।
প্রতিবেদক : মিজান চৌধুরী। স্বত্ব : যুগান্তর।

 

সর্বাধিক পঠিত