• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
  • ||
  • আর্কাইভ

বগুড়ায় তুফানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র

প্রকাশ:  ১০ অক্টোবর ২০১৭, ২০:০৮ | আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০১৭, ২০:১২
বগুড়া প্রতিনিধি
প্রিন্ট

বগুড়ায় কলেজে ভর্তির আশ্বাস দিয়ে শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ ও পরে তাকেসহ তার মাকে নির্যাতন করে মাথা ন্যাড়া করার বহুল আলোচিত ঘটনায় দায়ের হওয়া দুটি মামলার তদন্ত শেষে বগুড়ার শহর শ্রমিক লীগের বহিষ্কৃত আহ্বায়ক তুফান সরকারসহ ১৩জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেছে পুলিশ। মামলা দায়েরের দুই মাস ১২ দিন পর তদন্ত শেষে আদালতে এ অভিযোগপত্র দাখিল করল পুলিশ।

মামলা দু’টির তদন্ত কর্মকর্তা বগুড়া সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) আবুল কালাম আজাদ মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় জেলার কোর্ট ইন্সপেক্টর শাজাহানের কাছে তুফান সরকারসহ ১৩জনের বিরুদ্ধে দুটি মামলারই চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে ধর্ষণ ও মা-মেয়ে নির্যাতনের ঘটনায় ১৩জনের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।

যাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে তারা হলেন বহিষ্কৃত শহর শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকার, তার স্ত্রী আশা খাতুন, স্ত্রীর বড় বোন বগুড়া পৌরসভার সংরক্ষিত ৪,৫,৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মার্জিয়া হাসান রুমকি, শাশুড়ি রুমি খাতুন, শ্বশুর জামিলুর রহমান রুনু, তুফান বাহিনীর সদস্য আতিক, মুন্না, আলী আজম দিপু, রূপম, শিমুল, জিতু ও নাপিত জীবন রবিদাস। এদের মধ্যে শিমুল পলাতক রয়েছে। বাকি সকল আসামীকেই পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। নাপিত জীবন ও রুনু এজাহারভুক্ত আসামি ছিলেন না।

আসামীদের মধ্যে তুফান বগুড়া জেলে মাদক সেবন করায় তাকে কাশিমপুর কারাগারের হাইসিকিউরিটি সেলে পাঠানো হয়েছে। তার শ্বশুর রুনু একটি মামলায় জামিন পেলেও অপরটিতে জামিন পাননি। ফলে রুনুসহ ৯জন বগুড়া কারাগারে আছেন।

অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে যে, প্রধান আসামী তুফানের সহযোগি আতিক, দিপু এবং  নাপিত জীবন আদালতে মা ও মেয়েকে ন্যাড়া এবং নির্যাতনের কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে ছাত্রীও আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। এছাড়াও বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের ডাক্তারি পরীক্ষার রিপোর্টে ছাত্রীকে ধর্ষণের প্রমাণ পাওয়ার কথা উল্লেখসহ ঘটনার শিকার শিক্ষার্থীকে নাবালিকা উল্লেখ করা হয়েছে।

মামলার অভিযোগপত্রে মোট ১৬ জন সাক্ষী রাখা হয়েছে। এছাড়াও আলামত হিসেবে তুফানের প্রাইভেট কার, দুটি ক্ষুর, দুটি কাঁচি, ভিকটিমদের স্বাক্ষর নেওয়া কাউন্সিলর রুমকির পৌরসভার প্যাডের পাতা, নির্যাতনের এসএস পাইপ, মা ও মেয়ের কেটে ফেলা চুল।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ চার্জশিট দাখিলের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, দুটি মামলায় তুফানসহ ১৩জনের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে। যাদের সকলের বিরুদ্ধেই আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। পলাতক আসামি শিমুলকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এজাহারে নাম না থাকলেও ঘটনায় সম্পৃক্ততার প্রমাণ থাকায় তুফানের শ্বশুর ও নাপিত জীবন রবিদাসকে চাজর্শিটে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।

তিনি জানান, নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে দায়ের কমা মামলায় ১০জন আসামীর মধ্যে ১০জনকেই এবং মা ও মেয়ে নির্যাতন মামলায় ১০ আসামীর সঙ্গে আরও তিনজনকে যুক্ত করে মোট ১৩ জনকে আসামী করে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে।

বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী আদালতে চার্জশিট দাখিলের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, তদন্ত শেষে দুটি মামলায় ১৩ জনকে আসামী করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, সদ্য এসএসসি পাশ এক শিক্ষার্থীকে বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজে ভর্তি করে দেওয়ার গত ১৭জুলাই তাকে কৌশলে বাড়িতে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ ওঠে শ্রমিক লীগের বহিষ্কৃত নেতা তুফান সরকারের বিরুদ্ধে।

এদিকে, ঘটনা জানতে পেরে তুফানের স্ত্রী আশা স্বামীকে দায়ী না করে ঘটনার জন্য ভিকটিমকেই  দায়ী করে। এরপর আশা তার বোন সংরক্ষিত আসনের স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনার মার্জিয়া হাসান রুমকির মাধ্যমে ২৮জুলাই ভিকটিম ও তার মাকে কাউন্সিলরের বাসায় ডেকে নেয়। সেখানে তাদের মারধরের পর মাথার চুল কেটে দেয়। তারা যাতে আদালতের আশ্রয় নিতে না পারে সে জন্য তাদের কাছ থেকে পৌরসভার প্যাডে স্বাক্ষর নেওয়া হয়। প্রতিবেশীর সহায়তায় তারা হাসপাতালে ভর্তি হলে ঘটনা প্রকাশ পায়।

পুলিশ ঘটনার রাতেই তুফানসহ তার তিন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে। ২৯জুলাই তুফানসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনায় পৃথক ২টি মামলা করেন নির্যাতনের শিকার ওই শিক্ষার্থীর মা। পরে পুলিশ ১জন ছাড়া বাকি সকল আসামিদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। শ্রমিকলীগ থেকে তুফানকে বহিস্কার করা হয়। বর্তমানে নির্যাতিত মা-মেয়ে আদালতের নির্দেশে রাজশাহীর সেফহোম এবং ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে আছেন।

সর্বাধিক পঠিত