• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

কাঠালিয়ায় সুপারি বিক্রির ধুম, রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও

প্রকাশ:  ০৮ অক্টোবর ২০১৭, ১৬:৪৩
ঝালকাঠি সংবাদদাতা
প্রিন্ট

ঝালকাঠির কাঠালিয়া উপজেলার ঐহিত্যবাহি জমাদ্দার হাটে সুপারি কেনাবেচার হাট জমে উঠেছে। এছাড়াও বটতলা বাজার ও তালতলা বাজারে প্রতিদিন জেলা ও জেলার বাইরে থেকে ভীড় জমাচ্ছেন শত শত পাইকার। বিনা খরচে ও পরিচর্যায় উৎপাদিত এ সুপারি প্রতিদিন কেনা-বেচা চলছে লাখ লাখ টাকার।

কাঠালিয়ার ৬ ইউনিয়নেই এবার সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে। স্থানীয় বাজারগুলোতে এ বছর সুপারির দামও ভালো। ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় খুশি চাষিরা। কাঠালিয়ায় উৎপাদিত সুপারি জেলার চাহিদা মিটিয়ে বস্তায় প্যাকিং করে ট্রাকে করে পাঠানো হচ্ছে দেশের নানা প্রান্তে এমনকি রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও। সুপারি কিনতে দূর-দূরান্তের পাইকাররা এখন স্থানীয় বাজারগুলোতে ভিড় জমাচ্ছেন।

সুপারি চাষিরা জানিয়েছেন, একবার এ গাছ লাগালে তেমন কোনো পরিচর্যা ছাড়াই ৩০-৩৫ বছর ফলন দেয়। এতে আয় হয় ধানের চেয়ে তিন-চারগুন বেশি। তাই এ অঞ্চলের কৃষকরা সুপারি চাষের দিকে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। তা ছাড়া সুপারি বাগানে অনায়াশে লেবু, হলুদসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করা যায়।

কাঠালিয়া উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর কাঠালিয়া উপজেলার ৫৪ টি গ্রামের ৩৮৫ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা সুপারির বাগানে বাম্পার ফলন হয়েছে। অনেকে আবার বাড়ির পাশে সুপারি গাছ লাগিয়েও ভালো ফলন পেয়েছেন। গত এক যুগের মধ্যে এ বছর সবচেয়ে বেশি ফলন হয়েছে বলে দাবি করছে কৃষি বিভাগ। বর্তমানে স্থানীয় বাজারগুলোতে সুপারির দামও বেশ ভালো থাকায় সুপারি বাগান মালিকরা বেশ লাভবান হচ্ছেন। বাজারগুলোতে স্থানীয় হিসাব মতে প্রতি কুড়ি (২১০টি সুপারিতে এককুড়ি) সুপারির মূল্য ২শ’ থেকে ৩শ’ ৫০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় বাজার ও বাগানগুলো থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকাররা এসে সুপারি কিনে নিচ্ছেন। তাদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্নস্থানে চলে যাচ্ছে কাঠালিয়ার সুপারি। দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে কাঠালিয়ার সুপারির সুখ্যাতি থাকায় পাইকারদের হাত ঘুরে বড়জাতের সুপারি দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি হচ্ছে।

কাঠালিয়ার দক্ষিণ চেচঁরি জমাদ্দার হাট এলাকার সুপারির বাগান মালিক (অবসর প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক) আলহাজ্ব রেজাউল করিম বলেন, বিগত এক যুগের চেয়ে এ বছর ফলন হয়েছে তিনগুন। আর সুপারির আকারও হয়েছে অনেক বড়। এ বছর বৃষ্টির কারণে সুপারির ফলন ভাল হয়েছে। কোনো পোকার আক্রমণও নেই এ বছর আমি লক্ষাধিক টাকার সুপারি বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছি। 

কাঠালিয়ার আনইলবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা মাওলানা মুহিববুললাহ বলেন, আমার বাপ দাদার আমলের সুপারির বাগান। এ বছরের মত এত ফলন আগে দেখিনি। আমাদের বাগানের সুপারি বাজারে বিক্রির জন্য নেয়া লাগে না। পাইকাররা বাগান থেকেই সুপারি কিনে নেন।

কাঠালিয়ার জমাদ্দার হাটে সুপারি নিয়ে আসা বিক্রেতা মোঃ রবিউল ইসলাম জমাদ্দার বলেন, ৫ বস্তা সুপারি ৮ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। এগুলো পাইকাররা কিনে ঢাকা, খুলনা ও চট্টগ্রামের বাজারে বিক্রি করেন। 

কাঠালিয়ার পশ্চিশ আউড়া থেকে সুপারি কিনতে আসা পাইকার নুরুন নবী তালুকদার বলেন, আমরা এখান থেকে সুপারি কিনে আড়তে নিয়ে যাই। সেখানে গিয়ে আড়তে সুপারির আকার নির্ধারণ করে বড় সাইজগুলো বিদেশে রফতানির জন্য মজুদ করি। অন্যান্য সুপারিগুলো দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চালান করছি।

কাঠালিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এ বছর সুপারি চাষের জন্য অনুকূল আবহাওয়া সৃষ্টি হওয়ায় এ অঞ্চলে সুপারির ফলন অত্যাধিক ভালো হয়েছে। যা দেখে এলাকার মানুষ সুপারি চাষে আরো উৎসাহী হবে। সুপারি বাগান মালিকরা প্রতি বছরই সুপারি বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন। 

ঝালকাঠি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শেখ আবুবকর সিদ্দিক জানান, জেলায় চলতি মৌসুমে ৫০০ হেক্টর জমিতে সুপারির আবাদ হয়েছে। লাভজনক হওয়ায় এ ফসলটি গ্রামীণ অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখছে।

সর্বাধিক পঠিত