• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৪ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

ভাড়ায় ‘নিরাপত্তা’ নিয়েছে বাংলাদেশ

প্রকাশ:  ১০ মে ২০১৯, ২৩:৪৬
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

মিনহাজুল আবেদীন অবাক আবার অবাক না। দৈনিক এক হাজার ৬০০ ইউরোতে সিকিউরিটি টিম ভাড়া করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। মোট চারজন নিরাপত্তাকর্মীর সে বহর দুই দিন হলো দলের সঙ্গে যাতায়াত করছে। কিন্তু কারো সঙ্গেই কোনো অস্ত্র নেই, যা দেখে দলের ম্যানেজারের মৃদু রসিকতা, ‘তাহলে ওদের আর আমার মাঝে পার্থক্য কী?’ পার্থক্য আছে। অন্তত গতকাল হোটেল থেকে ম্যালাহাইড ক্রিকেট গ্রাউন্ডে যাওয়ার পথে দুজনের পাইলট বাইক আর একটা মিনি ভ্যান যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ দলের গাড়িবহরে। আয়ারল্যান্ডে যা যথেষ্ট বলেই মনে করছেন মিনহাজুল।

নিরাপত্তা এখন অনেক বড় একটা ইস্যু। সব শেষ নিউজিল্যান্ড সফরে ক্রাইস্টচার্চে নির্মম সন্ত্রাসী হামলার প্রত্যক্ষদর্শী বাংলাদেশ দল তাই ডাবলিনের মতো ছিমছাম শহরেও নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে সতর্ক। তবে আইরিশ নিরাপত্তা সিস্টেমেই ভিআইপি প্রটোকল দেওয়ার রেওয়াজ নেই। ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার সতর্ক প্রহরা আছে। তাই বলে ভিআইপির জন্য সশস্ত্র নিরাপত্তার ঘেরাটোপ নেই। সেদিন ফিনিক্স পার্কের পাশে দেশটির প্রেসিডেন্টের বাড়ির সামনেও কোনো নিরাপত্তা বেষ্টনী দেখিনি। তাহলে একজন ক্রীড়াবিদের জন্য কেন সশস্ত্র পাহারা দিতে হবে—আইরিশদের মনোভাবটা এমনই। বার দুয়েক আয়ারল্যান্ড সফর করে মিনহাজুলও জেনে গেছেন, ‘এখানে কোথাও কি আপনার নিরাপত্তা ঝুঁকি মনে হচ্ছে? এরা তো ভাবতেও পারে না যে এখানে সন্ত্রাসী হামলা হতে পারে।’

তিনি ভুল বলেননি। ডাবলিনে বাংলাদেশ দলের ঠিকানা ক্যাসলনক হোটেল, ক্লনটার্ফ কিংবা ম্যালাহাইড ক্রিকেট ক্লাব মাঠ—কোথাও নিরাপত্তার বাড়াবাড়ি যেমন নেই, ঝুঁকিও চোখে পড়েনি। এমনকি ব্যস্তসমস্ত সিটি সেন্টারেও মুহূর্তের জন্য অনিরাপদ মনে হওয়ার কোনো কারণ নেই। ইদানীং ইংল্যান্ড থেকেও যে কিছু প্রবাসী ডাবলিনে আসছেন, তার প্রধান কারণ ডাবলিনের শ্রেয়তর আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তা। লন্ডনে একটি টিভি চ্যানেলের স্ট্রিংগার হিসেবে কর্মরত মাহিদুল ইসলাম সবুজ বলছিলেন, ‘আমি, আমার স্ত্রী, তিন সন্তান আর শ্বশুর-শাশুড়ি নিয়ে এ শহরে আছি অনেক দিন হলো। এত নির্ঝঞ্ঝাট নগরজীবন কোথায় পাবেন? এখানে উপার্জন যা হয়, তাতেই সুখে-শান্তিতে বসবাস করা যায়। কোনো হুড়োহুড়ি নেই।’ ডাবলিন কার্যত শহর তবে চেহারায় আর দশটা ইংলিশ গ্রামের মতো, শান্ত নিরিবিলি পরিবেশ। বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড ম্যাচের ভেন্যু ম্যালাহাইড ক্রিকেট ক্লাব মাঠের অন্য নামও ‘দ্য ভিলেজ’। গতকাল জানলাম ডাবলিন শহরের কথিত গ্রামগুলোর মতো ম্যালাহাইডও অভিজাতদের জনপদ।

যাক, ক্রাইস্টচার্চও তো ছবির মতো সুন্দর, ভয়াবহ ভূমিকম্পের আশঙ্কা বাদ দিলে ডাবলিনের মতোই শান্তিপূর্ণ। কে ভেবেছিল, সে শহরেই একজন বন্দুকধারী পঞ্চাশ প্রাণ কেড়ে নেবে! পরিবর্তিত বিশ্বের হাওয়া হয়তো এখনো গায়ে নিচ্ছে না আয়ারল্যান্ড। ক্রিকেট আয়ারল্যান্ডের আর্থিক অবস্থাও মুমূর্ষু, এদের চুলাই জ্বলে বাংলাদেশি একটি কম্পানির বিপণন দক্ষতার ওপর। তাই ক্রিকেট আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে ‘এমওইউ’ স্বাক্ষরের সময় নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে বেশি গাঁইগুঁই করেনি বিসিবি। তবে একেবারে অরক্ষিত ছেড়েও দেয়নি ক্রিকেটারদের। নিজেদের অর্থে নিরাপত্তা দল ভাড়া করে দেওয়া হয়েছে, চারজন রক্ষীর জন্য দৈনিক এক হাজার ৬০০ ইউরো মানে বাংলাদেশি টাকায় প্রায় দেড় লাখ। শুধু সেই কমব্যাট ড্রেস আর অটোমেটিক গান-টান নেই আর কি! তবে আর কোনো দল নয়, শুধু বাংলাদেশ দলেই এ সুবিধা যোগ হয়েছে গত পরশু থেকে, নিজস্ব ব্যবস্থাপনায়।

নিজেদের আরো কিছু কাজ করতে হচ্ছে বাংলাদেশ দলকে। এক শহরেই সব ম্যাচ, তবু প্রতিদিনই ম্যাচ কিংবা প্র্যাকটিসের পর কফিন টানাটানি করতে হচ্ছে মাশরাফি বিন মর্তুজাদের। কেন? ‘ওরা একেক দিন একেক বাস দিচ্ছে। তাই হোটেল থেকে মাঠে আসা-যাওয়ার পথে ব্যাগ টানাটানি করতে হচ্ছে’—বলার সময় মিনহাজুল নিজেও হাসছেন। অথচ বাংলাদেশে যেকোনো সিরিজের সময় একই বাসে যাতায়াত করে সব দল। ভেন্যু পরিবর্তন না হলে একবার টিম বাসে ক্রিকেট সরঞ্জামাদির ব্যাগ (কফিন) তুলে দিলেই হয়। আবার সেটুকু কাজ করার জন্যও থাকে ব্যাগেজ মাস্টার। এখানে সেসবের আশা নিয়ে আসেনি বাংলাদেশ, বিদেশে ব্যাগ টানাটানির অভ্যাস হয়ে গেছে তাঁদের। তাই বলে একই শহরে খেলা হওয়া সত্ত্বেও প্রতিদিন দুইবার করে কফিন টানতে হবে কেন? টানতে হচ্ছে কারণ আইরিশ ক্রিকেট বোর্ডের ভাণ্ডারের নির্ধারিত বাসের জন্য ভাড়া গোনার সামর্থ্য নেই। তাই তাত্ক্ষণিক সমস্যার সমাধান তারা করছে একেক দিন একেক কম্পানির এবং একেক রঙের বাস ভাড়া করে।

বাংলাদেশে যাঁরা টিম লজিস্টিকস দেখভাল করেন, তাঁরা শুনে নিশ্চয়ই হাসবেন, মিনহাজুলও বলার সময় হাসছিলেন। তবে সে হাসিতে কোনো তাচ্ছিল্য নেই। বরং বেশ স্নেহপরবশই মনে হলো জাতীয় দলের সাবেক এ অধিনায়ককে। আইরিশ ক্রিকেট বোর্ডের অভাব অনটনের সংসারের খবর জানলে তেমনটাই মনে হওয়ার কথা।

সর্বাধিক পঠিত