• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
  • ||
  • আর্কাইভ

মশা-মাছির উপদ্রব প্রশমনে পৌরসভার উদ্যোগ চাই

এএসএম শফিকুর রহমান

প্রকাশ:  ৩০ এপ্রিল ২০১৯, ০৮:৪১
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

শুরু করছি কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের লেখা দিয়ে। তিনি ব্যঙ্গাত্মক করে লিখেছিলেন : রাতে মশা দিনে মাছি, এই নিয়ে কোলকাতায় আছি। কবির এই লেখাটি কোলকাতা নিয়ে হলেও আজ সারা বাংলাদেশে শহর-নগরে কবির এ কথাটি প্রযোজ্য। কারণ রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে দেশের এমন কোনো শহর নেই যে শহরে এখন মশার উপদ্রব নেই।
সারাদেশের ন্যায় চাঁদপুর শহরেও মশা এবং মাছির দাপটে আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন এখন ব্যাহত। আকারে ক্ষুদ্র এই কীট পতঙ্গের উৎপাত এবং আক্রমণকে হালকা হিসেবে নেয়ার সুযোগ নেই। এই মশার কামড়ে চিকনগুনিয়া, ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়াসহ বিভিন্ন মরণব্যাধিতে মানুষ আক্রান্ত হয়। ক্ষুদ্র এই কীট পতঙ্গের আক্রমণে নমরুদ পর্যন্ত মারা যায় !
দিনের বেলায় মাছির যন্ত্রণা এবং বিকেল হওয়া মাত্র বাসা-বাড়িতে মশার আনাগোনা বেড়ে যায়। বিকেল বেলা ঘরের দরজা জানালা খোলা রাখা যায় না মশার উৎপাতে। একাধিক কয়েল জ্বালিয়ে মশার উৎপাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায় না। কোনো কোনো সময়ে মশারী টানিয়েও নিরাপদে ঘুমানো যায় না। পড়–য়া ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া ঠিকমতো করতে পারে না মশার উৎপাতে। মসজিদে নামাজের সময় এই মশার উপদ্রব বেশি দেখা যায়। নামাজের সময় মশা মুসল্লিদের কামড় দেয় এবং তাতে নামাজ পড়ায় ব্যাঘাত ঘটে।
মশা-মাছি আকারে ক্ষুদ্র হলেও সুবিধাভোগকারী তথ্য এই যে, একস্থান হতে অন্য স্থানে যেতে এদের কোনো পাসপোর্ট-ভিসা প্রয়োজন হয় না, কারোর অনুমতি লাগে না। এদের জন্যে আকাশ পথ সবসময় খোলা থাকে। আকাশ পথেই সিলেট, খুলনা থেকে এমনকি ঢাকা থেকে আসতে পারে। মশা বিমানবন্দরে যাত্রীদের উপর চড়াও হয় এবং কোনো কোনো সময় নাকি বিমানে উঠে সিঙ্গাপুর, ভারত, সৌদিআরবসহ বিভিন্ন শহরে চলে যায়। আর দিনের ভাগে মাছির উপদ্রব বেশি। মাছবাজারে, চায়ের দোকানে, যেখানে পচা-বাসি আবর্জনা থাকে সেখানেই এদের বিচরণ বেশি। চায়ের দোকানে, মিষ্টির দোকানে মাছির উৎপাতে বসা যায় না।  বাসায় ডাইনিং টেবিলে খেতে বসলেই মাছির উৎপাত দেখা যায়।
পৃথিবীর সব দেশেই কম-বেশি মশা আছে। পবিত্র হজ্বব্রত পালনের সময় খোদ আরাফায় মশার উৎপাত দেখেছি। সেখানে মশা গায়ে বসলে জোরে আওয়াজ করে মারা যায় না। জোরে শব্দ করে মারলে কাফ্ফারা দিতে হয়। শরীরের কোনো জায়গায় মশা বসলে এদের আস্তে আস্তে হাত নেড়ে সরিয়ে দিতে হয়। আবার মশার কামড়ানোর জন্য শরীরের সব অংশে কাপড়ে ঢেকে রাখা নিষেধ। অর্থাৎ শরীরের কিছু খালি স্থান রাখতে হয় যাতে মশা এসে বসতে পারে। তুলনামূলক এই মশা-মাছি আমাদের দেশে বেশি।
মশা মাছির জন্মস্থান হলো জলাশয়, জঙ্গল, পচা, বাসি, ময়লা ও আবর্জনার স্তূপ যেগুলো আমাদের দেশের সকল শহর নগরে দেখা যায়। মশা-মাছির সংখ্যা কত এটা নিরূপণ করা সম্ভব নয়। তবে টেলিভিশন টকশোর আলোচনায় একদিন স্বনামধন্য স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন সাহেবের বক্তব্য থেকে জানলাম যে, প্রতি মানুষের পেছনে নব্বই হাজার মশা থাকে। এই মশার প্রধান খাদ্য মানবদেহের রক্ত। মশারী টানিয়ে শুলে একটু ছিদ্র পেলেই মশারীর ভেতর মশা ঢুকে ভোঁ ভোঁ শব্দ করে এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে কামড়ায়। ফলে আরামে ঘুমানো সম্ভব হয় না। অপরদিকে মাছির জন্য দিনের বেলায় বা রাতেও খাবার টেবিলে বসে ভাত খাওয়া যায় না। চায়ের দোকানে কিংবা হোটেলে এদের উপদ্রব বেশি দৃশ্যমান। এক কথায় মশা-মাছির উপদ্রবে জনজীবন এখন অতিষ্ঠ এবং দুর্বিষহ।
এই দুর্বিষহ অবস্থা থেকে পৌরবাসীর পরিত্রাণ পেতে হলে মশা নিধনের ঔষধ ছিটানো জরুরিভাবে আবশ্যক এবং ডোবা-জলাশয়গুলো পরিষ্কার রাখা প্রয়োজন। আর এই দুটি কাজ সম্ভব কেবল পৌরসভার পক্ষে। এই লেখাটির মূল উদ্দেশ্য চাঁদপুর পৌরসভার মাননীয় মেয়র এবং পৌর কর্তৃপক্ষের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করা। আর পৌরসভার উপর সব ছেড়ে দিলে হবে না। আমরা যারা বাসা-বাড়ির মালিক তাদেরকে অবশ্যই নিজ নিজ বাসার চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। বাড়ির ছাদে কিংবা অন্য কোনো স্থানে ফুলের টব, গাছের টব থাকলে সেগুলোকে সবসময় পরিষ্কার রাখা আমাদের কর্তব্য। বাসা-বাড়ির মালিক নাগরিকদের পৌরসভা সচেতন করার পদক্ষেপ নিবে, যাতে আপন তাগিদে বাড়ির মালিকরা নিজ নিজ বাসা-বাড়ি পরিষ্কার রাখেন। আমরা আনন্দিত এবং গর্বিত যে, মাননীয় মেয়র রাস্তায় ফুটপাত নির্মাণ ও বিভিন্ন স্থানে সড়ক প্রশস্ত করে ইতিমধ্যেই নাগরিক সেবায় নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। সুতরাং মশার উপদ্রবে নাগরিকদের বর্তমান ভোগান্তি লাঘবে এবং প্রশমনে জরুরিভাবে পৌরসভার মাধ্যমে মশার জন্মের স্থানগুলোতে মশা নিধনের ঔষধ ছিটানোর ব্যবস্থা করবেন এবং ডোবাসহ বিভিন্ন জলাশয় পরিষ্কারে উদ্বুদ্ধমূলক কর্মসূচি নিবেন এই প্রত্যাশায় শেষ করছি।