• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

নাঈমের সেঞ্চুরির পরও ঢাকার হার, রোমাঞ্চকর জয়ে প্লে-অফে বরিশাল

প্রকাশ:  ১৩ ডিসেম্বর ২০২০, ১১:০৩
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

শেষ মুহূর্তে কেঁপে উঠেছিল ফরচুন বরিশাল শিবির। ১৯৩ রানের বিশাল সংগ্রহের পরও কি তবে হেরে যেতে হবে? মোহাম্মদ নাঈম শেখ নামে এক তরুণের অসাধারণ সেঞ্চুরিতে ঢাকা জয় প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল; কিন্তু শেষ মুহূর্তে ঢাকার সেই নিশ্চিত জয় কেড়ে নিলো বরিশাল। অসাধারণ এক লড়াই শেষে মাত্র ২ রানের রোমাঞ্চকর জয়ে প্লে-অফ নিশ্চিত করে ফেললো ফরচুন বরিশাল।

বরিশালের সামনে সমীকরণ ছিল সহজ। যে কোন ব্যবধানে জিতলেই পেয়ে যাবে সেরা চারের টিকিট। আর হেরে গেলে মেলাতে হতো অনেক সমীকরণ। সেই পথে যেতে হয়নি বরিশালকে। বেক্সিমকো ঢাকার বিপক্ষে ২ রানের জয়ে সরাসরি প্লে-অফে পৌঁছে গেছে তামিম ইকবালের দল। একমাত্র দল হিসেবে পাঁচ দলের টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিলো মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহী।

বাঁচা-মরার লড়াইয়ে আগে ব্যাট করে তৌহিদ হৃদয় ও আফিফ হোসেন ধ্রুবর ঝড়ো ফিফটিতে ১৯৩ রানের বড় সংগ্রহ দাঁড় করিয়েছিল বরিশাল। জবাবে নাঈম শেখের সেঞ্চুরিতে জবাবটাও দারুণ দিচ্ছিল ঢাকা। কিন্তু শেষদিকে আর পারেনি তারা। শেষপর্যন্ত ম্যাচ হেরেছে মাত্র ২ রানের জন্য। ফলে তৃতীয় অবস্থানে থেকেই লিগ শেষ করল ঢাকা।

রান তাড়া করতে নেমে শুরুটা প্রত্যাশামাফিকই করেন দুই ওপেনার সাব্বির রহমান ও নাঈম শেখ। পাওয়ার প্লে'তে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৫২ রান করে ঢাকা। পাওয়ার প্লে শেষ হতেই ঢাকার ইনিংসে আসে সোহরাওয়ার্দি শুভর হামলা। নিজের প্রথম ওভারের প্রথম বলেই ফিরিয়ে দেন ১১ বলে ১৯ রান করা সাব্বির রহমানকে। পরের ওভারে নেন জোড়া উইকেট, আউট করেন মুশফিকুর রহীম (৭ বলে ৫) ও আলআমিন জুনিয়রকে (২ বলে ০)।

ইনিংসের নবম ওভারের মধ্যে মাত্র ৬২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় ঢাকা। তবে সেখান থেকে তাদেরকে উদ্ধার করেন দুই তরুণ নাঈম শেখ ও ইয়াসির রাব্বি। যেখানে স্বাভাবিকভাবেই আগ্রাসী ছিলেন নাঈম, হাঁকান ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। তিনি অবশ্য পেয়েছেন ভাগ্যের ছোঁয়া। ব্যক্তিগত ফিফটি হওয়ার আগেই সাজঘরে ফিরতে পারতেন তিনি, কিন্তু ক্যাচ ফেলে দেন পারভেজ হোসেন ইমন।

ব্যক্তিগত ৪২ বলে ৪৯ রানের সময় জীবন পান নাঈম, ফলে ৪৩ বলে ৫০ পূরণ হয় তার। ফিফটি করতে ৪ চারের সঙ্গে ২টি ছক্কা হাঁকান তিনি। এরপরই আগুনে মূর্তি ধারণ করেন নাঈম। পরের ১৭ বলে ৪টি চারের সঙ্গে ৫টি ছক্কা মেরে সেঞ্চুরি করেন তিনি। অর্থাৎ ১৭ বলেই করেন নিজের দ্বিতীয় ফিফটি। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে এটিই তার প্রথম সেঞ্চুরি।

তবে সেঞ্চুরির পর বেশিদূর যেতে পারেননি নাঈম। আউট হয়েছেন ব্যক্তিগত ১০৫ রানে, ৬৪ বলের ইনিংসটি সাজান ৮ চার ও ৭ ছয়ের মারে। নাঈমের বিদায়ে ভাঙে ইয়াসিরের সঙ্গে গড়া ১১০ রানের চতুর্থ উইকেট জুটি। একপর্যায়ে ১৩ ওভার শেষে ঢাকার সংগ্রহ ছিল ৯৭ রান। সেখান থেকে ১৮.২ ওভারে আউট হওয়ার দলকে ১৭২ রানে পৌঁছে দেন নাঈম।

শেষ দুই ওভারে জয়ের জন্য ২৩ রান বাকি ছিল ঢাকার। সুমন খানের ১৯তম ওভারে নাঈম আউট হওয়ার পাশাপাশি আসে মাত্র ৬ রান, ফলে শেষ ওভারে জয়ের জন্য সমীকরণ দাঁড়ায় ১৭ রান। কামরুল রাব্বির করা এই ওভারে দুইটি ছক্কা মারলেও ১৪ রানের বেশি নিতে পারেনি ঢাকা। ফলে মাত্র ২ রানের জয়ে প্লে-অফের টিকিট নিশ্চিত করে বরিশাল।

এর আগে দুই দলের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটিতে টস জিতে আগে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন ঢাকার অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে দলকে ভালো সূচনা এনে দেন বরিশালের দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও সাইফ হাসান। তাদের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে প্রথম পাওয়ার প্লে'তেই ৫০ রান পেয়ে যায় বরিশাল। যেখানে সিংহভাগ অবদান ছিল সাইফের।

ইনিংসের অষ্টম ওভারে ভাঙে উদ্বোধনী জুটি। দলীয় ৫৯ রানের মাথায় আলআমিন জুনিয়রের বলে লংঅফে সাব্বির রহমানের হাতে ধরা পড়েন বরিশাল অধিনায়ক তামিম ইকবাল। তার ব্যাট থেকে আসে ২ চারের মারে ১৭ বলে ১৯ রান। তিন নম্বরে নেমে আজ ব্যর্থ হন টুর্নামেন্টের রেকর্ড সেঞ্চুরিয়ান পারভেজ হোসেন ইমন। দলীয় ৮২ রানের সময় মুক্তার আলির বলে আউট হওয়ার আগে করেন ১৩ বলে ১৩ রান।

অপরপ্রান্তে জোড়া উইকেট পড়লেও রয়েসয়ে খেলে ফিফটি তুলে নেন সাইফ হাসান। তবে পঞ্চাশের পর বেশিদূর এগুতে পারেননি সাইফ। রুবেল হোসেনের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে থামে সাইফের ৮ চারের মারে খেলা ৪৩ বলে ৫০ রানের ইনিংস। এরপর ঢাকার বোলারদের ওপর রীতিমতো স্টিম রোলার চালান দুই তরুণ ব্যাটসম্যান তৌহিদ হৃদয় ও আফিফ হোসেন ধ্রুব। দুজনের অবিচ্ছিন্ন চতুর্থ উইকেট জুটিতে মাত্র ৩৮ বলে আসে ৯১ রান।

এতে অবশ্য বড় অবদান ছিল ঢাকার ফিল্ডারদেরও। ব্যক্তিগত ১১ রানে শফিকুল ইসলাম ও ১২ রানে রবিউল ইসলাম রবির হাতে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান আফিফ। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাননি আফিফ। একের পর এক ছয়ের মারে মাত্র ২৫ বলে পূরণ করেন নিজের ফিফটি। শেষপর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ১ চার ও ৫ ছয়ের মারে ৫০ রান করে।

আফিফের চেয়েও বেশি বিধ্বংসী ছিলেন তৌহিদ হৃদয়। ঢাকার বোলারদের কচুকাটা করে খেলেছেন দৃষ্টিনন্দন সব শট। তিনি ফিফটি করেন মাত্র ২২ বলে। ইনিংসের শেষ বলে বুদ্ধিদীপ্ত স্কুপ শটে পূরণ হয় তৌহিদের ফিফটি। তিনি অপরাজিত থাকেন ২২ বলে ২ চার ও ৪ ছয়ের ৫১ রান করে।

নিজের ৪ ওভারে ২৮ রান খরচায় ১ উইকেট নেন রুবেল। এছাড়া ঢাকার বোলারদের মধ্যে খরুচে ছিলেন প্রায় সবাই। রবিউল রবি ৪ ওভারে দেন ৪০, শফিকুলের ৪ ওভারে আসে ৫১ রান, মুক্তার আলি ৪ ওভারে খরচ করেন ৪৮ রান।

সর্বাধিক পঠিত