• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

ভ্যাকসিন বেচে এক বছরে ৩২০০ কোটি ডলার আয় করবে ফাইজার-মডার্না

প্রকাশ:  ১৩ ডিসেম্বর ২০২০, ১০:৫৮
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে ফাইজারের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এটিকে বিজ্ঞান, অর্থনীতি, সর্বোপরি মানবতার পক্ষে অনেক বড় ঘটনা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এমন মাইলফলকে দাঁড়িয়ে কোষাগারে অর্থের ঢল নামার স্বপ্ন দেখতেই পারেন উৎপাদকরা। সুখবর তাদের জন্য, সেই স্বপ্ন এবার সত্যি হতে চলেছে।

ওয়াল স্ট্রিটের বিশ্লেষকদের ধারণা, আগামী বছর শুধু করোনা ভ্যাকসিন বেচেই ৩ হাজার ২০০ কোটি (৩২ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার আয় করবে যুক্তরাষ্ট্রের দুই ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি ফাইজার ও মডার্না।

মরগান স্ট্যানলির মতে, ২০২১ সালে ফার্মা জয়ান্ট ফাইজার একাই আয় করবে অন্তত ১ হাজার ৯০০ কোটি ডলার। তবে ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমোদন পেয়ে যাওয়ায় ২০২০ সালের বাকি দিনগুলোতেও তাদের পকেটে ঢুকবে প্রায় ৯৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার।

অবশ্য ফাইজার তাদের লাভের অংক ভাগাভাগি করবে জার্মান বায়োটেকনোলজি কোম্পানি বায়োএনটেকের সঙ্গে। তারা যৌথভাবে তৈরি করেছে করোনারোধী ভ্যাকসিন। গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনের (এফডিএ) বিশেষজ্ঞ প্যানেল ফাইজার-বায়োএনটেকের ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমতি দেয়ার সুপারিশ করে। পরে জরুরি ভিত্তিতে এটি ব্যবহারের অনুমোদন দেয় এফডিএ।

যুক্তরাষ্ট্রের আগেই অবশ্য যুক্তরাজ্য, কানাডা, বাহরাইন ও সৌদি আরব ফাইজারের ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে।

শুধু ২০২১ সাল জুড়েই নয়, পরের দুই বছরেও বিপুল অংকের লাভের আশা করছে ফাইজার কর্তৃপক্ষ। তাদের বিশ্বাস, সারাবিশ্ব করোনার টিকাদান কার্যক্রম চালিয়ে গেলে ২০২২ ও ২০২৩ সালে আরও ৯৩০ কোটি ডলার আয় হবে তাদের।

করোনা ভ্যাকসিন আবিষ্কার আর তা থেকে বিপুল অর্থ আয়ের দ্বারপ্রান্তে থাকলেও ফাইজারের শেয়ারের দর খুব একটা বাড়েনি। কারণ আগে থেকেই তারা দানবাকৃতির প্রতিষ্ঠান। চলতি বছরে তাদের শেয়ারের দর বেড়েছে মাত্র ১২ শতাংশ, যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান শেয়ারবাজার এসঅ্যান্ডপি ৫০০-এর মোট অর্জনের চেয়েও কম।

এরপরও ফাইজার আশা করছে, ২০২১ সালে তাদের সেরা পণ্য বিক্রির আয় ২০১৯ সালের সেরা পণ্যকে ছাড়িয়ে যাবে। গত বছর নিউমোনিয়ার একটি ভ্যাকসিন বিক্রি করে ফাইজার আয় করেছিল প্রায় ৫৮০ কোটি ডলার।

ফাইজারের শেয়ারের দর খুব একটা না বাড়লেও করোনা ভ্যাকসিনে ভর করে বড় লাফ দিয়েছে বায়োএনটেক। যুক্তরাষ্ট্রে তাদের শেয়ারের দর বেড়েছে প্রায় ৩০০ শতাংশ, যার ফলে জার্মান প্রতিষ্ঠানটির বাজারমূল্য দাঁড়িয়েছে তিন হাজার কোটি ডলারের কাছাকাছি।

ঝড় তুলেছে মডার্না

২০২০ সালের আগে যুক্তরাষ্ট্রের নবীন বায়োটেক ফার্ম মডার্নার নামও হয়তো মানুষ খুব একটা শোনেনি। সেই তারাই এখন হয়ে উঠেছে বিশ্বজুড়ে অন্যতম আলোচিত প্রতিষ্ঠান।

২০১৯ সালে যাদের আয় ছিল মাত্র ছয় কোটি ডলার, যারা আগে কখনও কোনও পণ্যের লাইসেন্স পায়নি, স্বল্পপরিচিত সেই মডার্নাই দেখতে দেখতে হয়ে উঠেছে ৬ হাজার ২০০ কোটি ডলার বাজারমূল্যের বিশাল এক শক্তি। চলতি বছর তাদের শেয়ারের দর বেড়েছে ৭০০ শতাংশের বেশি।

গোল্ডম্যান স্যাশের অনুমান, ২০২১ সালে করোনা ভ্যাকসিন বেচে ১ হাজার ৩২০ কোটি ডলার লাভ করতে পারে মডার্না।

মরগ্যান স্ট্যানলির হিসাব আরও আশাব্যঞ্জক। তাদের ধারণা, ২০২১ ও ২০২২ এ দুই বছরই বার্ষিক এক হাজার থেকে দেড় হাজার কোটি ডলার আয় হতে পারে মর্ডানার। ভ্যাকসিন বিক্রি বেশি হলে আয় আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে তাদের।

মানুষের জীবন-মৃত্যু সংকটে অর্থ আয় নিয়ে বিতর্ক

করোনা ভ্যাকসিন বিক্রি করে ফাইজার-মডার্না যখন হাজার কোটি ডলার আয়ের স্বপ্ন দেখছে, তখন এধরনের চিন্তাভাবনা কতটা মানবিক, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।

জনসন অ্যান্ড জনসন, অ্যাস্ট্রাজেনেকার মতো নামী প্রতিষ্ঠানগুলো ইতোমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছে, তারা মহামারির মধ্যে ভ্যাকসিন বিক্রি করে কোনও লাভ করবে না।

অ্যাকাউন্টেবল ইউএস নামে একটি পর্যবেক্ষক সংস্থার মুখপাত্র এলি জুপনিক বলেন, যে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনে এত ভতুর্কি দেয়া এবং মার্কিন করদাতারা এত সমর্থন দিয়েছেন, সেটি নিয়ে ফাইজার-মডার্নার মতো ওষুধ কোম্পানিগুলোর লাভবান হওয়া ও তাদের কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত ভাগ্য তৈরি একেবারেই অনুচিত।

ফাইজার বা মডার্না কেউই এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও মন্তব্য করেনি। তবে গত মাসে ফাইজার বলেছিল, তাদের করোনা ভ্যাকসিন প্রস্তুত ও উৎপাদনের খরচ পুরোটাই নিজস্ব অর্থায়নে হচ্ছে। এর জন্য তারা ঝুঁকি নিয়েই কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে।

অবশ্য ফাইজার যুক্তরাষ্ট্রের করোনা ভ্যাকসিন প্রকল্পের আর্থিক সহায়তা না নিলেও তাদের প্রথম ১০ কোটি ডোজের জন্য ১৯৫ কোটি ডলার দিতে চেয়েছিল দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। তবে মডার্না এই সুবিধা হাতছাড়া করেনি। ভ্যাকসিন তৈরির জন্য সরকারের কাছ থেকে ৯৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার নিয়েছে তারা।

উৎপাদকরা সরকারের কাছ থেকে অর্থ নিক বা না নিক, ভ্যাকসিন বিক্রি করে লাভ করুক বা না করুক, শেষপর্যন্ত গত ১০০ বছরের সবচেয়ে ভয়াবহ মহামারি যে শেষ হতে চলেছে, অনেকের দৃষ্টিতে এটাই সবচেয়ে বড় পাওয়া। তবে ভ্যাকসিনটি ধনী-গরিব সবার হাত যাক, করোনামুক্ত হোক গোটা পৃথিবী, এমনটাই প্রত্যাশা সবার।