• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
  • ||
  • আর্কাইভ

চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনা সভায় জেলা প্রশাসক

এদেশে মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি রাজাকারদের তালিকাও প্রয়োজন

প্রকাশ:  ১৫ ডিসেম্বর ২০২১, ১৩:১১
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেছেন, জাতীয় সংগীতের ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ কথাটি শুধু মুখে নয়, অন্তরেও ধারণ করতে হবে। তাহলেই মুক্তিযুদ্ধে বুদ্ধিজীবী, মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্য সকলের আত্মত্যাগে অর্জিত বাংলাদেশের প্রতি ভালোবাসাকে ছাপিয়ে কোনোভাবেই অন্য দেশের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শনের মানসিকতা থাকবে না।
 শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। গতকাল ১৪ ডিসেম্বর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চাঁদপুর আউটার স্টেডিয়ামে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা মঞ্চে আয়োজিত এই সভায় তিনি আরো বলেন, এদেশে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা যেমন প্রয়োজন আছে, তেমনি প্রয়োজন রাজাকারদের তালিকা করা। যারা যুদ্ধাপরাধী তাদের তালিকা করা। আমরা যদি তাদের তালিকা তৈরি করতে না পারি, তাহলে কিন্তু এই রাজাকারদের প্রেতাত্মা আবার এদেশের মানুষের ওপর ভর করবে।
৩০ লক্ষ শহীদকে, ৭১-এর বীর মুক্তিযোদ্ধা ও পাক-হানাদার বাহিনী কর্তৃক ইজ্জত হারানো মা-বোনদেরকে সম্মান জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ অপারেশন সার্চ লাইটে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যে কী ধরনের বর্বরোচিত অত্যাচার করতে পারে, তার জঘন্য নমুনা দেখিয়েছিল। সরকার তাই সেই দিনটিকে জাতীয় গণহত্যা দিবস স্বীকৃতি দেয়াতে আমরা ঐদিনটিকে জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করছি। আমরা তৎকালীন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্যাতন আন্তর্জাতিকভাবে তুলে ধরতে পারিনি বলে আজও আমরা পাকিস্তানিদের নৃশংস অত্যাচার, হত্যা ও বর্বরতার স্বীকৃতি আন্তর্জাতিকভাবে পাইনি। পারিনি জাতিসংঘ থেকে সেই স্বীকৃতি তুলে আনতে। তাই সরকার সেই স্বীকৃতি নেয়ার জন্য সর্বস্তরে কাজ করে যাচ্ছে।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করে প্রধান অতিথি বলেন, যখন পাকিন্তানিরা বুঝতে পারলো যে, তাদের পরাজয় নিশ্চিত, তারা এদেশে টিকতে পারবে না, তখনই তারা তাদের নীল নকশা বাস্তবায়নস্বরূপ ১৪ ডিসেম্বরে দেশের শীর্ষস্থানীয় বুদ্ধিজীবীদের নৃশংসভাবে হত্যা করে। তারা পূর্বের পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশের মেধাবী সন্তানদের মেরে আমাদের দেশটিকে মেধাশূন্য করে রেখে যায়। হত্যা করে দেশের মেধাবী সাংবাদিক, ডাক্তার, চলচ্চিত্রকার থেকে শুরু করে বিভিন্ন ইউনিভার্সিটি ও কলেজের শিক্ষকদেরকে।
জেলা প্রশাসক জনাব অঞ্জনা খান মজলিশ অনুষ্ঠানের শুরুতে পুরানবাজার ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদারের উপস্থাপন করা প্রেজেনটেশনটি জেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপস্থাপন করার জন্য অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, এই প্রেজেনটেশনে উঠে এসেছে পাকিস্তানিরা আমাদের কোন কোন সূর্যসন্তানকে হত্যা করেছে, কীভাবে হত্যা করেছে, কাদের পৃষ্ঠপোষকতায়, কাদের সহায়তায় এদেশে এই বর্বরোচিত হত্যাকা- ঘটেছে। এই বর্বরোচিত হত্যাকা- যদি আমরা আমাদের নতুন প্রজন্মকে না দেখাতে পারি, যদি না চিনাতে পারি পাকিস্তানি রাজাকারদেরকে, না শিখাতে পারি দেশকে ভালোবাসার পথগুলো, তাহলে নতুন প্রজন্মকে ভবিষ্যতে দেশের প্রতি ভালোবাসা থাকবে না।
তিনি প্রসঙ্গক্রমে চাঁদপুর বড় স্টেশন বধ্যভূমিতে জেলা শিল্পকলা একাডেমির পরিবেশ থিয়েটার ‘মধ্যরাতের মোলহেডে’ চিত্রায়িত পাক হানাদারদের নির্মম নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞের বীভৎসতা থেকে বর্তমান প্রজন্মের জেগে ওঠার উপাদান রয়েছে বলে মন্তব্য করেন।
জেলা প্রশাসক বলেন, আমি অনেক সময় বলি, আর হতাশা নয়, আনন্দের কথা হলো, আমাদের দেশ এখন পাকিস্তান, ভারতের চেয়ে অনেক সূচকে এগিয়ে আছে। আমরা নিজেদের উদ্যোগে পদ্মাসেতু করছি, মেট্রো রেল করছি। আমাদের এখন মাতৃ মৃত্যুহার কমে গেছে। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে গেছে। বর্তমানে আমরা অনেক দিক দিয়ে পাশর্^বর্তী দেশ থেকে এগিয়ে আছি। কিন্তু তারপরও আমাদের অতীতের ক্ষতগুলো আমাদের বারবার ব্যথিত করে। আমরা এই সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। কারণ এই সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছে। সরকার পাকিস্তানি প্রেতাত্মাদের কথা না শুনে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে গেছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইমতিয়াজ হেসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন আহম্মেদ,  জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, বিজয় জেলার স্টিয়ারিং কমিটির সভাপতি ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এম. এ. ওয়াদুদ, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী, সাহিত্য একাডেমীর মহাপরিচালক ও দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক কাজী শাহাদাত, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী, কবি ও ছড়াকার ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়–য়া।
সাংবাদিক এম. আর. ইসলাম বাবুর পরিচালনায় শুরুতে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের উপর একটি ডকুমেন্টরী প্রেজেনটেশন উপস্থাপন করেন পুরান বাজার ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদার। এছাড়া শুরুতে পবিত্র কুরআন শরীফ থেকে তেলাওয়াত করেন মুক্তিযোদ্ধা ছানাউল্লাহ খান ও গীতা পাঠ করেন জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের কর্মকর্তা বিমল চন্দ্র দে।