• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

করোনাভাইরাস : খাদ্যসামগ্রী কীভাবে মুক্ত করবেন

ড. লতিফুল বারী

প্রকাশ:  ২৭ এপ্রিল ২০২০, ১০:২১
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব রোধে লকডাউনসহ নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। একজন মানুষ থেকে অন্যের শরীরে বিস্তার রোধে সোশ্যাল ডিস্টেন্স, পিপিই, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হোম-কোয়ারেনটাইন, আইসোলেশন ইত্যাদি পরামর্শ দিয়েছেন সরকারের স্বাস্থ্য অধিদফতরসহ স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন অর্গানাইজেশন। কিন্তু বিভিন্ন গবেষণার বরাতে জানা যায়, এই মহামারী করোনাভাইরাস পানি ও যে কোনো খাদ্যসামগ্রীর মাধ্যমেও ছড়াতে পারে। বিজ্ঞানীরা প্লাস্টিক, স্টেইনলেস স্টিল, তামা এবং কাঠবোর্ডে ভাইরাসগুলো প্রতিরক্ষা করে দেখতে পান যে সার্চ-সিওভ-২ দুটি থেকে তিন দিন প্লাস্টিক এবং স্টেইনলেস স্টিলের পৃষ্ঠগুলোতে সক্রিয় রয়েছে। এটি কাঠবোর্ডে ২৪ ঘণ্টা এবং তামাতে ৪ ঘণ্টা পর্যন্ত সংক্রামক ছিল। এই অনুসন্ধানটি নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ প্রকাশিত হয়। সুতরাং খাদ্য ও খাদ্য পৃষ্ঠতল পরিষ্কার ও স্যানিটাইজ করে জীবাণু বিস্তার রোধ করে মানুষকে সুরক্ষার জন্য পরিবার পর্যায়ে বা খাদ্যসামগ্রীর ব্যবহারের জন্য সংক্রামক প্রতিরোধক হিসেবে স্যানিটাইজার ব্যবহার করা জরুরি। যেহেতু নিত্যদিনের প্রয়োজনের তাগিদে মানুষকে বাজারে যেতেই হচ্ছে, কোনোভাবেই সরকার এটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। যার ফলশ্রুতিতে বাজারগুলোতে প্রতিদিনই মানুষের অস্বাভাবিক ভিড় হচ্ছে। বাজার থেকে প্রতিদিনই মাছ, মাংস, শাকসবজি, ফলমূল, চাল-ডালসহ নানাবিধ খাদ্যসামগ্রী ক্রয় করছি, যা কোনো না কোনোভাবেই মানুষের সংস্পর্শে আসছে। যদি কোনো খাদ্যপণ্য, কোনো কভিড-১৯ সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসে, যার কারণে মানুষের সংস্পর্শ ছাড়াই বাজার থেকে ক্রয়কৃত খাদ্যসামগ্রীর মাধ্যমেও মানবদেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিমধ্যেই দেশি-বিদেশি ডাক্তার, গবেষক তাদের মতামত ব্যক্ত করেছেন যে, খাদ্যসামগ্রী যদি কোনো করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসে, তাহলে সেটার মাধ্যমেও মানবদেহে ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে। তাই আমি মনে করি দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে মানুষের খাদ্য সুরক্ষার বিষয় বিবেচনা করে সব খাদ্যসামগ্রী থেকে করোনাভাইরাসসহ অন্যান্য ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকমুক্ত করে খাবারকে স্বাস্থ্যসম্মত করতে আমাদের গবেষণা ভিত্তিক ‘Agro-wash’ ব্যবহার করতে পারবে। সরকারি/বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের সহযোগিতা পেলে আমরা প্রযুক্তিগত সহায়তা দিতে পারব।

তাহলে Agro-wash কি?

Agro-wash একটি সাদা পাউডার, যা বর্জ্য শেল থেকে উৎপাদিত বা বর্জ্য শেলের মিশ্রণকে ২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সেদ্ধ করে তারপর ১০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পাইরলাইসিস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই পাউডার তৈরি করা হয়। এটি পানির সঙ্গে যুক্ত হলে ক্ষারযুক্ত দ্রবণ তৈরি করে, যা ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক নিমিষেই ধ্বংস করে। ডিম ও ঝিনুকের খোসা, কাঁকড়ার খোসার মিশ্রণ কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হয়।

Agro-wash ব্যবহার বিধি কি?

এক লিটার পানির মধ্যে এক চা চামচের চার ভাগের এক ভাগ দিয়ে কৃষিপণ্যগুলোকে ৪০ সেকেন্ড/ ১ মিনিট ভিজিয়ে রাখলে নিমিষেই কৃষিপণ্যগুলো ভাইরাসমুক্ত হয়ে যাবে। তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে রান্না করতে হবে।

বাজারে কি কোনো জীবাণুনাশক এবং খাদ্যসামগ্রীর সংক্রামক প্রতিরোধক নেই?

হ্যাঁ, বাজারে অনেক রাসায়নিক স্যানিটাইজার পাওয়া যায়, তবে তাদের বেশিরভাগ ক্লোরিন ভিত্তিক এবং ক্লোরিন মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সাধারণত ফ্লোর ওয়াশ, টয়লেট ওয়াশ ইত্যাদি কাজে এটি বাংলাদেশে ব্যবহার করে কিন্তু এগুলো খাদ্যসামগ্রী বা কৃষিপণ্যগুলোকে পরিষ্কার করার জন্য এবং স্যানিটাইজড করার জন্য ব্যবহার করা হয় না। যদি ক্লোরিন ভিত্তিক স্যানিটাইজার ব্যবহার করা হয়, তবে এটি খাদ্যসামগ্রী বা কৃষিপণ্যের সঙ্গে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে trihalomethane (CHX4) তৈরি করে, যা ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। এ জন্যই ইউরোপীয় ইউনিয়ন ১৯৯৭ সাল থেকে সব ক্লোরিন ভিত্তিক স্যানিটাইজার খাদ্যদ্রব্যে ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছে। অন্যান্য রাসায়নিক স্যানিটাইজার যেমন হাইড্রোজেন পার অক্সাইড (H202), Peroxy acetic acid (PPA), ওজন (03), অর্গানিক এসিডসহ অনেক ধরনের স্যানিটাইজার ব্যবহার করা যায়। কিন্তু এ সব স্যানিটাইজার ঘনমিশ্রণ  (concentrated) আকারে বিক্রি হয় ফলে, পারিবারিক পর্যায়ে বা খাদ্যসামগ্রীতে ব্যবহার করলে চরম ঝুঁকি থাকে। এ জন্যই ন্যাচারাল, দূষণমুক্ত, ঝুঁকিমুক্ত সংক্রমণ প্রতিরোধক তৈরি করা জরুরি ছিল। আমরা অনেক ডিসএনফেকটেন্ট disinfectant)/সংক্রমণ প্রতিরোধক নিয়ে গবেষণায় দেখতে পাই যে ৩টি সংক্রমণ প্রতিরোধক/disinfectant খুবই কার্যকর উদাহরণ স্বরূপ হাইড্রোজেন পার অক্সাইড (H202), Peroxy acetic acid (PPA), Ges Calcinated calciuml এই ৩টির মধ্যে আবার Agro-wash (Calcinated calcium) খুবই কার্যকর। বিঃ দ্রঃ Agro-wash দিয়ে খাদ্যসামগ্রী পরিষ্কার করার পর যদি কোনো তলানি জমা থাকে আর সেটা খেলেও স্বাস্থ্যের কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু বাজারে বিক্রীত কেমিক্যাল সংক্রমণ প্রতিরোধকগুলোর অবশিষ্ট অংশ মানুষ খায় বা দেহে প্রবেশ করে তাহলে মানুষ অসুস্থ হতে পারে।

Agro-wash ব্যবহারের সুবিধাগুলো :

ক) এটার খরচ খুবই কম, যার কারণে সমাজের ধনী, গরিব মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকবে।

খ) এটা প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি, পরিবেশবান্ধব।

গ) খুব অল্প সময়ে অর্থাৎ ৪০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিটের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী থেকে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসমুক্ত করে খাদ্যসামগ্রীকে স্বাস্থ্যকর করতে পারে।

ঘ) Agro-wash ব্যবহারের কারণে খাদ্যসামগ্রীর স্বাদ বা গন্ধের কোনো পরিবর্তন হবে না। এর কোনো পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া নেই।

ঙ) এটি জাপানিজ টেকনোলজিতে দেশীয় কাঁচামালে বাংলাদেশে তৈরি করা যাবে।

চ) এটি পাউডার ও তরল আকারে তৈরি করে গ্রাহকদের দেওয়া যাবে। তবে পাউডার আকারে তৈরি করাই ভালো তাতে মেয়াদ বেশি দিন থাকবে।

Frequently Asked Questions (FAQ) - কিছু প্রশ্ন আসতে পারে, যেমন

১) শুনেছি খাদ্যসামগ্রী রান্না করলে যে কোনো ক্ষতিকর ভাইরাস ধ্বংস হয়ে যায়, এ বিষয়ে আপনার মতামত কি?

হ্যাঁ রান্না সমস্ত ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে, তবে আমরা রান্না করার আগের কথা বলছি, একজন ব্যক্তি সংক্রামিত হতে পারে। তাই রান্না করার আগে খাদ্যসামগ্রী পরিষ্কার বা স্যানিটাইজেশন প্রয়োজন।

২) আপনার এই Agro-wash দিয়ে খাদ্যসামগ্রী ওয়াশ করলে করোনাভাইরাস দূর হবে এটার কোনো উদাহরণ, ব্যাখ্যা বা প্রমাণ আছে? হ্যাঁ, আমরা ভাইরাস করোনাভাইরাস, হেপাটাইটিস ভাইরাস, ইবোলা ভাইরাস নির্মূল করার বিষয়ে নিশ্চিত, কিন্তু যেহেতু করোনার ভাইরাসটি নতুন তাই আমাদের নিশ্চিত হওয়ার আগে এ বিষয়ে কাজ করা দরকার। তবে এই ভাইরাসের বৈশিষ্ট্য বিবেচনা করে আমরা বলতে পারি যে, এটি করোনার জন্য কার্যকর হবে।

লেখক : প্রধান বৈজ্ঞানিক এবং বিভাগীয় প্রধান, ফুড অ্যানালাইসিস অ্যান্ড রিসার্চ ল্যাবরেটরি সেন্টার ফর অ্যাডভান্স রিসার্চ ইন সাইয়েন্সেস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

সর্বাধিক পঠিত