• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

দাঁতে ক্যাভিটির সমস্যা?

প্রকাশ:  ২৮ জুন ২০১৮, ২২:৫০
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

ছোটরা মিষ্টি জিনিস খেতে ভালবাসে, আর তাই ক্যাভিটির সমস্যা বাচ্চাদের মধ্যেই বেশি দেখা যায়। তবে শুধুমাত্র এই একটা কারণেই ক্যাভিটি হয় না। ক্যাভিটি একটা ডায়নামিক প্রসেস। ক্যাভিটি হওয়ার পিছনে তিনটে প্রধান কারণ আছে যেমন– ব্যাক্টেরিয়া, শুগার ও টাইম। আরও ভালভাবে জিফাইন করতে গেলে ব্যাকটেরিয়া+সুগার+টাইম = ক্যাভিটি। আমাদের মুখের মধ্যে ব্যাকটেরিয়া সব সময় উপস্থিত, সেটাকে হয়তো পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব নয়। তবে বাকি দুটো ফ্যাক্টর কিন্তু নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। বাচ্চা কতটা মিষ্টি জাতীয় জিনিস খাচ্ছে, কতক্ষণ ধরে খাচ্ছে বা খাওয়ার কতক্ষণ পর মুখ ধুচ্ছে এগুলো একটু সচেতন হলেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। অনেক বাচ্চার যেমন অভ্যেস আছে ফিডিং বোতল নিয়ে ঘুমিয়ে পড়া। এতে বহুক্ষণ মুখ ধোয়া হয় না। দাঁতে দুধের আস্তরণ পড়ে যায়। এর থেকে নার্সিং বটল কেরিস হতে পারে। সাধারণত দাঁতের পিট ও ফিসার’ণ্ডএ (গর্তে) ব্যাকটেরিয়া আস্তানা গড়ে, কিন্তু নার্সিং বটল কেরিসে দাঁতের স্মুদ সার্ফেসেও ব্যাক্টেরিয়া অনায়াসে ঢুকে পড়ে। এই ধরনের সমস্যা কিন্তু এড়ানো যায়। শুধু খেয়াল রাখতে হবে যেন বাচ্চা মুখে কোনও মিষ্টি জিনিস নিয়ে না ঘুমোয়। ফলে বুঝতে পারছেন, একটু সচেতন থাকলেই ক্যাভিটি হওয়া কিন্তু সহজেই আটকাতে পারবেন।

 

ক্যাভিটির লক্ষণ:

 

 

দাঁতে কালো কালো দাগ হয়।

 

দাঁতের কছুটা অংশ ভেঙ্গে যেতে পারে।

 

দাঁতে ব্যথা হয়। জ্বর আসতে পারে।

 

মিষ্টি খাবার খেলে দাঁত শিরশির করে।

 

ঠাণ্ডা গরমেও দাঁতে ব্যথা হয়।

 

দাঁত ও মাড়ির মধ্যে ব্যাক্টেরিয়া থেকে শরীর খারাপ লাগতে পারে। অস্বস্তি হয়, শরীর আনচান করে।

 

জটিলতা : 
অনেক সময় ক্যাভিটির সময়মতো চিকিৎসা না হলে দাঁতের পলিপ ইনফেকটেড হয়ে যেতে পারে। মাড়ির নিচে অ্যালভিওলার বোণে অ্যাবসেস (পুঁজ জমে যায়) তৈরি হয়। গাল ফুলে যেতে পারে, জ্বর হয়। তখন দাঁত তুলে ফেলে পুঁজ বার করা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকে না।

 

প্রতিরোধ : 
দু’বেলা ব্রাশ করা জরুরি। অনেক বাবা–মাই আবার ক্যাভিটি হওয়ার ভয়ে বাচ্চাকে বেশিরভাগ খাবারই খেতে বারণ করেন। এই অ্যাপ্রোচটা কিন্তু ঠিক নয়। বাচ্চাতো সবকিছু খেতে চাইবেই। শুধু খেয়াল রাখুন বাচ্চা যেন অত্যধিক মিষ্টি খাবার না খায় এবং খাওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে ভল করে মুখ পরিষ্কার করে নেয়।

 

ছয় থেকে বারো বছর বয়সে ছয় ও সাত নম্বর পারমানেন্ট দাঁতের গর্তে ক্ষয় (ডিকে) বেশি হয়। আর ছয় ও সাত নম্বর দাঁত যেহেতু খুব জরুরি তাই এই ক্ষয় প্রতিরোধ করা অত্যন্ত প্রয়োজন।

 

বাচ্চাদের জন্যে ফ্লোরিডেটেড টুথপেস্ট খুব একটা উপযুক্ত নয়। অনেক ক্ষেত্রে ডেন্টিস্টরা ৬ বছর ও ১২ বছর বয়সে দাঁতে ফ্লোরাইড অ্যাপ্লিকেশনের পরামর্শ দেন। ফ্লোরাইড ফোমের ঢাকনা তৈরি করে দাঁতে লাগিয়ে দেওয়া হয়। ২ বছর বয়সে যখন ‘ডেসিডুয়স টিথ’ ওঠে বা কেরিস ডেভেলপ করলে ফ্লোরাইড অ্যাপ্লিকেশন খুব ভাল অপসন।

 

হেলদি এনামেলের জন্যে দাঁত ওঠার আগে থেকেই বাচ্চাকে ভিটামিন এ, ডি, সি– ক্যালশিয়াম, ফসফরাস সমৃদ্ধ খাবার খাওয়াতে পারেন।

 

দই, দুধ, ড্রাই ফ্রুট, স্ট্রবেরি, পাকা আম, পেঁপে, আমলকি, পেয়ারা, ব্রকোলি, লেটুস, বাচ্চার দাঁতের উপকার হয়।

 

দাঁতে ব্যথা হলে ফেলে রাখবেন না। যথাযথ পরামর্শ নিন। একটা দাঁতে ক্যাভিটি হলে খুব তাড়াতাড়ি বাকি দাঁতেও হতে পারে।

 

হোমিওপ্যাথিক প্রতিবিধান : 
দাঁতের ক্যাভিটির সমস্যা নিরাময়ে হোমিওপ্যাথিতে ফলদায়ক ওষুধ আছে। এই রোগে লক্ষণ সাদৃশ্যে নির্দিষ্ট মাত্রায় নিম্নলিখিত ওষুধ ব্যবহারে সম্পূর্ণ আরোগ্য হয়। যথা–

 

১) একোনাইট : 
ঠাণ্ডা লেগে দাঁতের গোড়া ফোলা, বেদনা, কনকন করা ইত্যাদি লক্ষণে প্রথমে এই ওষুধ প্রয়োগে উপকার হয়।

 

২) প্ল্যান্টাগো : 
দাঁতের সহিত কর্ণের বেদনা থাকলে ইহা অধিক ফলপ্রদ।

 

৩) ক্রিয়োজেট : 
শিশুদের ক্ষেত্রে অতিকষ্টে দাঁত ওঠে। দাঁত কালো ও মাড়ি অস্বাস্থ্যকর, মাড়িতে বেদনা, মাড়ি ফোলে (পোঁকা ধরা দাঁত), মাড়ির রঙ ঘোর লাল বা নীলবর্ণ, শিশু অত্যন্ত অস্থির হয় ও কাঁদে। উপসর্গাদি প্রাতঃকাল ৬টা হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত বৃদ্ধি হয়। দাঁত উঠবার সময় প্রথমে দাঁতের উপর একটা কালোবর্ণের দাগ পড়ে। শীঘ্রই সমস্ত দাঁতটা কালো হয়ে যায় ও টুকরো টুকরো হয়ে ভাঙতে আরম্ভ করে। ক্রমশ সমস্ত দাঁতই নষ্ট হয়ে যায়। মাড়ি স্পঞ্জের মত হয়ে ফোলে, সামান্য স্পর্শেও রক্ত পড়ে।

 

৪) এস্টিম ক্রুড : 
ফোকলা দাঁত, পোকায় খাওয়া ও গর্ত পড়া দাঁত– তাতে, বেদনা কিছু খেলে বা ঠাণ্ডা জল লাগলেই যেন প্রাণ বের হয়ে যায়। দাঁত হতে মাড়ি সেরে যায় এবং একটুতেই রক্ত পড়ে লক্ষণ প্রদেয়।

 

৫) ক্যালকেরিয়া ফস : 
দাঁত ক্ষয় রোগে উৎকৃষ্ট ওষুধ। গর্ভবতীদের দন্ত রোগের উপযোগী। দাঁত বেদনা রাত্রিতে অধিক হয় ইত্যাদি লক্ষণে প্রযোজ্য।

 

৬) ক্যালকেরিয়া ফ্লোর : 
যখন কোন খাদ্য দাঁতে লাগলেই চিড়িক মারা ধরে, নড়চড়ে দাঁত, দাঁতের এনামেল অনুজ্জ্বল, শিশুদের দন্ত ক্ষয় রোগে উত্তম ফলদায়ক।

 

৭) হেক্লা–লাভা : 
একটি সর্বোত্তম ওষুধ। দাঁতের মাড়িতে ক্ষত, মাড়িতে স্কোটক, নালী–ঘা, দাঁতে পোকা লেগে দাঁত ক্ষয় হওয়া কিংবা দাঁতের গোড়ার অস্থিতে ত হওয়া, মুখের স্নায়ুশুল বেদনা, মাড়ির চারধারে ফোলাসহ দাতের শুলানি বেদনা, দাঁত তুলে ফেলার পর কিছু অংশ থেকে যাওয়া এবং যন্ত্রণাদায়ক উপসর্গ, শিশুদের দাঁত ওঠাবার সময় ২/৩টি পীড়াতে চমৎকার ফলদায়ক।

 

৮) মার্কুরিয়াস : 
দাঁতের মাড়ি ফোলে, রক্ত পড়ে, ঠাণ্ডা জল সহ্য হয় না, মাড়িতে ঘা, ক্রমশ মাড়ি হতে দাঁত সরে আসে, দাঁত কালোবর্ণ ও আলগা হয়, শেষে পড়ে যায়। পানসে দাঁত একটু স্পর্শ করলে বা চাপে রক্ত পড়ে। মুখে অত্যন্ত দুর্গন্ধ হয় লক্ষণে উত্তম ফলদায়ক।

 

৯) স্ট্যাফিসেগ্রিয়া : 
পূর্ব পুরুষাগত উপদংশ বা প্রমেহ দোষগত সন্তানদের দাঁত শীঘ্রই বিনষ্ট হয়ে যায়। দাঁতে পোঁকা ধরে, দাঁতে কালো দাগ পড়ে, দাঁত ক্ষয়ে যায়, মাড়ি প্রায়ই ফোলে, ব্যথা হয়, একটু আঙুল লাগলে কিম্বা খাদ্যদ্রব্য দাঁতে ঠেকলেই রক্ত পড়ে, এই সমস্ত লক্ষণে এই ওষুধ অধিক উপকারী।

 

১০) কফিয়া ক্রুডা : 
দাঁতে ব্যথায় শীতল জল রাখলে কিঞ্চিত উপশম।

 

১১) ক্যালি সালফ : 
দাঁত ব্যথা গরম গৃহে তীব্র অনুভব হয়, সন্ধ্যার দিকে বৃদ্ধি পায়। আবার খোলা বাতাসে উপশম হয় লক্ষণে উপযোগী।

 

১২) ক্যালিফস : 
ভাব প্রবণ রোগীর স্নায়ুবিক ব্যথাসহ দাঁত বেদনা, যন্ত্রণাদায়ক, মাড়ি লাল প্রদাহিত, দাঁতে মনে হয় ঘা হয়েছে, দাত কড়মড় করে, ক্ষয়প্রাপ্ত দাঁতে তীব্র বেদনা লক্ষণে উপযোগী।

 

১৩) চেনোপেডি গ্লসিয্যাপিস : 
দন্তশুল বেদনা–দাঁত থেকে কানে, রগে, গণ্ডাস্থিতে পর্যন্ত পরিচালিত হয়। কানের ভেতর কামানের মত শব্দ হয়।

 

১৪) পালসেটিলা : 
স্ফীতিলক্ষণ ছাড়া সর্দিপ্রসূত দন্তশূল বেদনা–মুখে কোন ভুক্ত দ্রব্য প্রবেশ মাত্র টনটন বেদনার সূত্রপাত এবং পরক্ষণেই উপশম–বৈকালে পীড়ার বৃদ্ধি লক্ষণে উপযোগী।

 

১৫) কার্বোভেজ : 
দাঁতের মাড়ি স্পঞ্জের মত সচ্ছিদ্র, তাতে বেদনা, মাড়ির মাংস সরে গিয়ে দাঁতের গোড়া বের হয়ে পড়েছে। পানসে দাঁত–চুমকুড়ি দিলে কিম্বা দাঁত পরিষ্কারের জন্য ব্রাশ লাগলেই রক্ত বের হয়ে পড়ে, ক্রমশ দাঁতের গোড়া আলগা হয়, দাঁত পড়ে যাবার উপক্রম লক্ষণে উপযোগী। উপরোক্ত ওষুধ ছাড়া লক্ষণভেদে ক্যামোমিলা, বেলেডোনা, নেট্রাম মিউর, থুজা, মার্কভাই, ক্যালকেরিয়া কার্ব, ইগ্নেসিয়া, নাক্সভম, ক্যাম্পার, সালফার উল্লেখযোগ্য। তারপরেও চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করা উচিত। (সংগৃহীত)

 

সর্বাধিক পঠিত