• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

হাঁটতে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠছেন?

প্রকাশ:  ১০ জুন ২০১৯, ০২:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

সহজে হাঁপিয়ে উঠা বা পরিশ্রান্ত হওয়ার প্রধান কারণ হৃদরোগ। যাদের বয়স ৪০ বছর বা তার বেশি তারা যদি অল্প পরিশ্রমে হাঁপিয়ে উঠেন তবে শতকরা নব্বই ভাগ ক্ষেত্রেই তা হৃদরোগের কারণে ঘটে থাকে। বাকি দশ ভাগ কারণ হচ্ছে রক্তশূন্যতা, কিডনি ফেইলুর, অতিমাত্রায় বাতব্যথা জনিত অসুস্থতা, ফুসফুসের অসুস্থতা, লিভার ফেইলুর, ক্যান্সার জাতীয় অসুস্থতা এবং ক্যান্সার চিকিৎসায় গৃহীত ক্যামোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি ইত্যাদিই প্রধান কারণ এবং এর মধ্যে সবগুলো অসুস্থতাই জটিল অবস্থায় হার্ট ফেইলুর সৃষ্টি করে। তাই কেউ সহজে হাঁপিয়ে উঠলে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করাই প্রাথমিক করণীয়।

মানুষ কেন হাঁপিয়ে উঠে? এর কারণ একটিই ব্যক্তি পরিশ্রম করার জন্য তার শরীরে অক্সিজেনের প্রয়োজন, বিশ্রামকালীন সময়ের চেয়ে অনেকগুণ বৃদ্ধি পায়। মানে একজন ব্যক্তি বিশ্রামকালীন সময়ে যতুটুকু অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়, পরিশ্রমকালীন সময়ে সেই অক্সিজেনের চাহিদা পরিশ্রমের মাত্রার ওপর ভিত্তি করে ৫ গুণ ১০ গুণ ২০ গুণ অথবা ক্ষেত্র বিশেষে ৩০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়ে থাকে (খেলোয়াড়দের), অক্সিজেনের এরূপ বর্ধিত চাহিদা মেটাতে হার্টকে আনুপাতিক হারে ৩০ গুণ পর্যন্ত রক্ত পাম্প করতে হয়। হার্ট যখন চাহিদা মোতাবেক রক্ত পাম্প করতে অসমর্থ হয় তখন ব্যক্তি হাঁপিয়ে উঠেন। কাজেই সহজভাবে বলা যেতে পারে যে, যদি কারও হার্ট দুর্বল হয়ে যায়, তবে ব্যক্তি অল্প পরিশ্রমে হাঁপিয়ে উঠবেন এটাই স্বাভাবিক। তবে বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে আপনার হার্ট সবল রাখার পরও আপনি সহজে হাঁপিয়ে উঠতে পারেন যেমন- অতিমাত্রায় রক্ত শূন্যতা, হাইপার থাইরয়েডিজম বা থাইরয়েড হরমোনের আধিক্যতা।

অনেকেই সহজে হাঁপিয়ে উঠার সঙ্গে সঙ্গে আরও কিছু অসুবিধায় আক্রান্ত হয়ে পড়েন যেমন- পরিশ্রমকালীন সময়ে শরীর অত্যাধিক ঘেঁমে যাওয়া, কখনো কখনো মাথা ঘোঁরাতে পারে, হাত-পা অবস হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে। কারও কারও পরিশ্রমকালীন সময়ে বুকের মাঝখানে অথবা বাম পাশে ব্যথা বা চাপ অনুভূত হতে পারে। কখনো কখনো এ ধরনের চাপ বা ব্যথা গলা, চোয়াল, বাহু, হাত, পিঠ ও পেটের উপরিভাগ ছড়িয়ে যেতে পারে। কারও কারও হাঁপিয়ে উঠাকালীন সময়ে হৃদকম্পন বা বুক ধড়ফড় করতে পারে। আবার কেউ কেউ এ সময়ে তৃষ্ণার্থ হয়ে যেতে পারেন বা মুখ শুকিয়ে উঠতে পারে। অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী অথবা জটিল হয়ে গেলে পেট ফাঁপা দেখা দিতে পারে, বদহজম হতে পারে এবং পেটে প্রচুর গ্যাস উৎপন্ন হতে পারে। জটিল ক্ষেত্রে হাত, পা ও মুখ ফোলে যেতে পারে। খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ কমে যেতে পারে বা অল্প খেলেই পেট ভরা ভরা ভাব দেখা দিতে পারে, খাবারে অরুচি দেখা দিয়ে থাকে। ফুরফু

রে মেজাজ, আরামদায়ক আবহাওয়ায় খালি পেটে হাঁপিয়ে উঠার প্রবণতা কম হয়ে থাকে এবং ভরা পেটে, টেনশন ও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত অবস্থায়, বৈরী আবহাওয়ায় হাঁপিয়ে উঠার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। এসব রোগীরা একবার হাঁপিয়ে উঠলে আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে অনেক বেশি সময় বিশ্রাম গ্রহণ করার প্রয়োজন হয়ে থাকে। রোগীর অবস্থা আরও বেশি জটিল হলে খুব অল্প পরিশ্রমে মানে অজু, গোসল, ড্রেস পরিবর্তনকালীন সময়েও রোগী অস্থির হয়ে পড়েন। হাঁপিয়ে উঠার সঙ্গে শারীরিক দুর্বলতা, মাংসপেশীতে ব্যথা, কাজকর্মে অনীহা, অত্যাধিক অলসতা ইত্যাদি লক্ষণ অনেকের মধ্যে পরিলক্ষিত হতে পারে।

ডা. এম শমশের আলী (কার্ডিওলজিস্ট) সিনিয়র কনসালটেন্ট (প্রা.), ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা।

সর্বাধিক পঠিত