• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
  • ||
  • আর্কাইভ

মুখের আলসার

প্রকাশ:  ০২ জুন ২০১৯, ২২:২১
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

টুথপেস্টের গায়ে সবুজ রঙের চারকোনা চিহ্ন থাকলে বুঝতে হবে এটি ন্যাচারাল টুথপেস্ট। সবুজ রঙের চিহ্নযুক্ত টুথপেস্ট মুখের আলসার রোগীদের জন্য সবচেয়ে ভালো। কারণ এটি ব্যবহারের ফলে সাধারণত কোনো অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া হয় না।

মানসিক চাপ ও চলমান সামাজিক অস্থিরতার কারণে মুখের আলসার প্রতিরোধ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। কারণ মুখের সবগুলো আলসারের প্রকৃত কারণ এখনো অজানা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এবং জেনেটিক কারণে মুখের আলসার হয়ে থাকে। অনেক সময় দেখা যায়, উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার পরও রোগীর মুখে আলসার বা ঘা বারবার দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে আমরা একবারও ভাবি না বা লক্ষ করি না কোন টুথপেস্ট রোগী ব্যবহার করছে। কারণ টুথপেস্টের রসায়নের কারণে মুখের আলসার ভালো নাও হতে পারে। টুথপেস্টের মন্দ রাসায়নিক উপাদানের একটি হলো সোডিয়াম লরিল সালফেট, যা দেখতে সাদা বা ক্রিম রঙের হয়ে থাকে।

সোডিয়াম লরিল সালফেট বা এসএলএস একটি ডিটারজেন্ট যা টুথপেস্ট, সেভিং ক্রিম, শ্যাম্পু, হেয়ার কন্ডিশনার, বডিওয়াশ ইত্যাদি প্রসাধনসামগ্রীতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এসএলএসের কারণেই টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করার সময় ফেনা উৎপন্ন হয়ে থাকে। এসএলএসকে টুথপেস্টের ফোমিং এজেন্টও বলা হয়। টুথপেস্টের অতিরিক্ত ফেনা দেখে আনন্দিত হওয়ার কিছুই নেই। এসএলএস ত্বকে অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে থাকে। এর সঙ্গে কারো যদি অ্যালার্জি থাকে তা হলে অ্যালার্জিক মুখের আলসার দেখা দিয়ে থাকে। আপনার দাঁত ও ওরাল মিউকোসার ধরন দেখেই নির্ধারণ করতে হবে কোন টুথপেস্ট আপনার জন্য ভালো। টুথপেস্টের গায়ে সাংকেতিক চিহ্ন এবং উপাদান দেখে টুথপেস্ট ব্যবহার করা উচিত। টুথপেস্ট কীভাবে তৈরি করা হয়েছে, তা বোঝা যায় টুথপেস্টের গায়ে নিচের দিকে চারকোনা চিহ্নের রং দেখে।

(ক) লাল রং : টুথপেস্টে লাল রঙের চারকোনা চিহ্ন থাকলে বুঝতে হবে সে টুথপেস্টটি প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হলেও তাতে রাসায়নিক উপাদান রয়েছে।

(খ) নীল রং : টুথপেস্টে নিচের দিকে নীল রঙের চারকোনা চিহ্ন থাকলে বুঝতে হবে ওই টুথপেস্ট ন্যাচারালের পাশাপাশি ওষুধ হিসেবেও ব্যবহারযোগ্য। উদাহরণস্বরূপ লাল মাশরুম দিয়ে তৈরি গ্যানোফ্রেশ টুথপেস্ট সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে তৈরি। আবার এ টুথপেস্ট কারো মাথা ধরলে বাম হিসেবে ব্যবহার করা যায়। যাদের টুথপেস্টে অ্যালার্জি রয়েছে তারা নীল রঙের চিহ্নযুক্ত টুথপেস্ট প্রাথমিকভাবে ব্যবহার করতে পারেন।

(গ) সবুজ রং : টুথপেস্টের গায়ে সবুজ রঙের চারকোনা চিহ্ন থাকলে বুঝতে হবে এটি ন্যাচারাল টুথপেস্ট। সবুজ রঙের চিহ্নযুক্ত টুথপেস্ট মুখের আলসার রোগীদের জন্য সবচেয়ে ভালো। কারণ এটি ব্যবহারের ফলে সাধারণত কোনো অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া হয় না।

(ঘ) কালো রং : টুথপেস্টের গায়ে কালো রঙের চারকোনা চিহ্ন থাকলে বুঝতে হবে টুথপেস্টটি সম্পূর্ণভাবে রাসায়নিক পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়েছে। যাদের মুখে বারবার আলসার হয়ে থাকে তাদের কালো চিহ্নযুক্ত টুথপেস্ট ব্যবহার না করাই ভালো।

দাঁতের শিরশিরভাব বা অতি সংবেদনশীল দূর করার জন্য আমরা বিভিন্ন টুথপেস্ট ব্যবহার করে থাকি। তবে এসব টুথপেস্ট দীর্ঘ মেয়াদে ব্যবহার করার ঠিক নয়। এসব টুথপেস্টের উপাদানের মধ্যে থাকে পটাশিয়াম নাইট্রেট, স্ট্রোনটিয়াম ক্লোরাইড এবং অন্যান্য উপাদান, যা দাঁতের নার্ভের ব্যথার নির্দেশনা বাধাগ্রস্ত করে থাকে। পটাশিয়াম নাইট্রেট তুলনামূলকভাবে নিরাপদ উপাদান, যা ব্যবহার করা যায়। স্ট্রোনটিয়াম ক্লোরাইড জাপান সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কারণ এটি কসমেটিকে ব্যবহারের জন্য নিরাপদ নয়। তাই এ ক্ষেত্রে আমরা এসএলএসমুক্ত পটাশিয়াম নাইট্রেটযুক্ত টুথপেস্ট একটি সীমিত সময়ের জন্য ব্যবহার করতে পারি।

দাঁতের অতিসংবেদনশীলতার জন্য ব্যবহৃত টুথপেস্টগুলো দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহার করা যায় না। দীর্ঘমেয়াদে এসব টুথপেস্ট ব্যবহার করলে দাঁতের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়। এ ছাড়া মুখের অভ্যন্তরে মিউকাস মেমব্রেনের ক্ষতি হতে পারে। টুথপেস্ট ছাড়াও আমরা বিভিন্ন নামিদামি মাউথওয়াশ ব্যবহার করে থাকি। এমনকি সুগন্ধিযুক্ত মাউথওয়াশ ব্যবহার করে আত্মতৃপ্তি লাভ করে থাকি। সবার অবগতির জন্য জানা প্রয়োজন, এসব মাউথওয়াশ ব্যবহারের কারণে যাদের বারবার মুখে আলসার হয়ে থাকে তাদের আলসার কখনোই ভালো হতে চায় না। কারণ এর কিছু উপাদান আলসার সারানোর ক্ষেত্রে বিঘœ সৃষ্টি করে থাকে। তবে হ্যাঁ, এসব মাউথওয়াশ কিছু নিয়মকানুনের মাধ্যমে ব্যবহার করলে তেমন ক্ষতি হয় না। তবে ব্যবহার না করে থাকতে পারলেই ভালো।

অতএব, মুখের আলসারের চিকিৎসার জন্য মলম, ভিটামিন, মাউথওয়াশ কোনো সমাধান তো দেবেই না বরং সাময়িকভাবে আলসার ভালো হতে পারে; কিন্তু পরে মুখের আলসার ব্যাপকভাবে দেখা দেয়, যা ভালো হতে সময় নেয় এমনকি যথাযথ উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার পরও। তাই মুখের চিকিৎসার ক্ষেত্রে যতœবান হতে হবে এবং সুস্থ স্বাভাবিক সরল জীবনযাপন করতে হবে।

লেখক : মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ।