• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

হাজীগঞ্জের সেই অপচিকিৎসকের ৩ লাখ টাকায় শিশুর পরিবারের সাথে রফা!

প্রকাশ:  ২৫ জানুয়ারি ২০২২, ১৩:০৯
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

 বাক্ প্রতিবন্ধী ছেলের ভাঙ্গা হাতের অপচিকিৎসা দিতে গিয়ে পচন ধরার কারণে শিশু আরাফাত হোসেন (১৩) পরিবারের সাথে ৩ লাখ টাকায় রফা করে পার পাচ্ছেন কথিত সেই অপচিকিৎসক আলাউদ্দিন।
গত রোববার শিশুটির পরিবারকে এই টাকা বুঝিয়ে দেয়া হয় বলে জানা গেছে। সমঝোতা বৈঠকে শিশুর বাবা হাছান মিয়া, ফারুক হোসেন, ডিপ্লোমা চিকিৎসক আলাউদ্দিন, অভিজিৎ পোদ্দার, কামরুজ্জামান কায়েসসহ ফার্মেসীর পরিচালক ফারুক হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে শিশুটির বাবা হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কাছে আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন। ঘটনার ক’দিন পর এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের প্রিন্ট ও অনলাইন ভার্সনে প্রকাশ হয়। মূলত প্রকাশিত সংবাদের পর থেকেই শিশুর পরিবারের সাথে সমঝোতার জন্য আগ্রহী হন সেই চিকিৎসক মোঃ আলাউদ্দিন। আরাফাত হোসেন ফরিদগঞ্জ উপজেলার পূর্ব গুপ্টি ইউনিয়নের মানুরী গ্রামের নোয়া বাড়ির হাছান মিয়ার ছেলে। আলাউদ্দিন চেম্বার করেন হাজীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ সড়কের একটি ফার্মেসীতে।
সমঝোতার বিষয়টি নিশ্চিত করে শিশুটির বাবা হাছান মিয়া সংবাদকর্মীদের জানান, ডাক্তারের পরিবারের পক্ষ থেকে ৩ লাখ টাকা পেয়েছি। এই টাকা দিয়ে আমার ছেলের (আরাফাত) চিকিৎসা করাবো। বর্তমানে সে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। আপনারা আমার সন্তানের জন্যে দোয়া করবেন।
এ বিষয়ে সেই চিকিৎসক মোঃ আলাউদ্দিন বলেন, শিশু আরাফাতাকে আর্থিক সহযোগিতা করে এবং তার পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পেরে আমি কৃতজ্ঞ।
উল্লেখ্য, গত ৩ ডিসেম্বর ২০২১ খ্রিঃ প্রতিবন্ধী শিশু আরাফাত হোসেন খেলতে গিয়ে তার ডান হাতের কনুই ভেঙ্গে যায়। এরপর হাজীগঞ্জ বাজারে ডাক্তার পদবী ব্যবহারকারী মোঃ আলাউদ্দিন ও চাঁদপুুর সদর উপজেলার মৈশাদী গ্রামে এক কবিরাজের অপ-চিকিৎসায় শিশুটির হাতে পচন ধরে। ইতিমধ্যে তার হাতের দুটি আঙ্গুল কেটে ফেলেছে চিকিৎসকরা। এরপরে হাতের অপারেশনও সফল হয়েছে।
এ ঘটনায় শিশুটির বাবা মোঃ হাছান মিয়া কথিত চিকিৎসক মোঃ আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ এসএম সোয়েব আহমেদ চিশতীর কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। তবে তিনি ওই অভিযোগে কবিরাজের কথা উল্লেখ করেন নি।
শিশুটির ব্যবস্থাপত্রে (প্রেসক্রিপশনে) দেখা যায়, মোঃ আলাউদ্দিন ডাক্তার পরিচয়ে হাজীগঞ্জ বাজারের ডিগ্রি কলেজ রোডস্থ একটি ফার্মেসীতে প্রতিদিনি সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত (সোমবার বন্ধ) রোগী দেখেন। তিনি তার যোগ্যতা হিসেবে ডিএমএফ (ঢাকা), বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ, এক্সএফটি (জেনারেল হাসপাতাল, কুমিল্লা), জেনারেল ফিজিসিয়ান, বিএমএন্ডডিসি রেজিস্ট্রেশন নং- ডি-২০৭৩৯ উল্লেখ করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, শিশু আরাফাত একজন বিশেষায়িত প্রতিবন্ধী। গত ৩ ডিসেম্বর অসাবধানতবশত তার হাত ভেঙ্গে যায়। আর্থিক সমস্যার কারণে হাসপাতালে না নিয়ে মোঃ আলাউদ্দিনের কাছে নিয়ে আসে তার বাবা। আলাউদ্দিন শিশুটির হাত প্লাস্টার করে ব্যবস্থাপত্র দিয়ে বিদায় করেন। এর দু’দিন পর অসহ্য ব্যথার কারণে ৫ ডিসেম্বর ব্যান্ডেজ খুলে দেন তার চাচাতো ভাই কামরুজ্জামান কায়েসসহ শিশুর পরিবারের লোকজন। এরপর তাকে মৈশাদী এক কবিরাজের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে শিশুর অবস্থার অবনতি হলে তাকে ৯ ডিসেম্বর বাড়িতে আনার পর ওই দিনই রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপতালে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানান কামরুজ্জামান কায়েস।

 

সর্বাধিক পঠিত