• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

মৈশাদী ইউপি নির্বাচন : ভোটারদের মাঝে নেই নির্বাচনী আমেজ

চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন চাচা-ভাতিজাসহ ৪ জন

প্রকাশ:  ২৬ অক্টোবর ২০২১, ১৬:১৯
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

 আগামী ১১ নভেম্বর দেশের বিভিন্ন জেলায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বিতীয় ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে এ ধাপে নির্বাচন হবে। সদর উপজেলার ৬নং মৈশাদী ইউনিয়নও এর মধ্যে রয়েছে। তবে এ ইউনিয়নে সাধারণ ভোটারদের মাঝে এখনো পর্যন্ত নির্বাচনের তেমন কোনো আমেজ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। ভোটারদের মাঝে ভোট নিয়ে তেমন কোনো ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া না থাকলেও প্রার্থীরা চষে বেড়াচ্ছেন মাঠ, চলে যাচ্ছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। চায়ের দোকান, হাটবাজার তথা নির্বাচনী মাঠে নির্বাচনের তেমন কোনো আমেজ না থাকলেও আলোচনা একটাই-আপন চাচা-ভাতিজা চেয়ারম্যান প্রার্থী। এ নিয়ে বেশ ক’জনের সাথে আলাপ করলে তারা জানান, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে চাচা-ভাতিজার মধ্যেই লড়াই হবে। ইতোমধ্যে প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। হাতেগোণা কয়েকজন বাদে প্রায় সকল প্রার্থীরই মনোনয়নপত্র বৈধ বলে নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করেছে। মৈশাদী ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৪ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন এবং সকলেরই মনোনয়ন বৈধ বলে ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রার্থীরা এখন রয়েছেন তাদের পছন্দমতো প্রতীকে সবুজ সংকেতের অপেক্ষায়। দ্বিতীয় ধাপের এই নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেয়ায় দলীয় প্রতীকে কেবল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং ইসলামী আন্দোলন নির্বাচন করছে।
মৈশাদী ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ইতোমধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ও যাদের প্রার্থিতা বৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে তারা হচ্ছেন : স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ মনিরুজ্জামান পাটোয়ারী মানিক, আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে চাঁদপুর জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য ও মৈশাদী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মোঃ নূরুল ইসলাম পাটোয়ারী, স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান আবু জাফর সালেহ মোহাম্মদ আলী পাটোয়ারী ও ইসলামী আন্দোলন হাতপাখায় নির্বাচন করছেন মোঃ আজহারুল ইসলাম।
আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরজমিনে গিয়ে কথা হয় বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ মনিরুজ্জামান মানিকের সাথে। বিগত নির্বাচনে তিনি বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করলেও এ নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। এ বিষয়ে তিনি জানান, কেন্দ্রীয়ভাবে বিএনপি নির্বাচনের পক্ষে না, বর্তমান ইউপি নির্বাচনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে দল। কিন্তু এই ইউনিয়নে যেহেতু আমি এখনো চেয়ারম্যান পদে বহাল রয়েছি, জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা আমার প্রতি রয়েছে, সেদিক বিবেচনায় দল নির্বাচনের বিপক্ষে অবস্থান নিলেও জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার কারণে আমি মনোনয়নপত্র উত্তোলন করি ও জমা দিই এবং ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন আমার মনোনয়নপত্রটি বৈধ বলে ঘোষণা দিয়েছে।
তিনি জানান, গত নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তিনি কাজ করে গেছেন। ইউনিয়ন পরিষদকে ডিজিটালাইজেশন করেছেন। ইউনিয়ন পরিষদকে সিসি ক্যামেরার আওতাভুক্ত করেছেন। ই-লাইব্রেরি ও স্টুডেন্ট কর্নার প্রতিষ্ঠা করেছেন। সনাক ও টিআইবির মাধ্যমে উন্মুক্ত বাজেট ঘোষণা ও বাস্তবায়ন করেছেন। এজন্যে ২০১৬ সালে জেলার শ্রেষ্ঠ চেয়ারম্যান হিসেবেও পুরস্কৃত হয়েছেন বলে তিনি জানান। করোনাকালে তিনি জনগণের পাশে ছিলেন বলে জানান। সরকারের ত্রাণ সহায়তা ছাড়াও ব্যক্তিগতভাবেও করেছেন অনেক সহযোগিতা। দাঁড়িয়েছিলেন ক্ষুধার্ত মানুষের পাশে। এছাড়াও তিনি করোনাকালে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ন্যায্যমূল্যে সততা স্টোর নামেও তার ব্যাপক সুনাম রয়েছে বলে তিনি জানান। গত নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে তার ঘোষিত নির্বাচনী ইশতেহারের ৯০ ভাগ কার্যাদি সম্পন্ন করেছেন বলে তিনি জানান। দল থেকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর এমন কোনো সিদ্ধান্ত না নিলে নির্বাচনে বিজয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী বলেও তিনি মতামত ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে নৌকা প্রতীকে মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও মৈশাদী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মোঃ নূরুল ইসলাম পাটোয়ারী। বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ মনিরুজ্জামান পাটোয়ারী হচ্ছেন তাঁর আপন ভাতিজা। ভাতিজা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
তিনি জানান, এটা আমার চতুর্থ নির্বাচন। আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এ ইউনিয়নে আমরা ৪ জন প্রার্থী। একজনও আমার প্রতিদ্বন্দ্বী না। বিগত প্রায় প্রতি নির্বাচনে হানাহানি হয়েছে। এবার আমি বিজয়ী না হলেও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। আমি নির্বাচিত হলে মাদক, সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত ইউনিয়ন গড়বো।
তিনি বলেন, আমার ইউনিয়নে ৮০ ভাগ উন্নয়ন কাজ ইতোমধ্যে হয়েছে। ২০ ভাগ উন্নয়নমূলক কাজ বাকি আছে। আমার লক্ষ্য হবে, গরিব ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের বৃত্তির আওতায় এনে তাদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করা। এছাড়াও এ ইউনিয়নে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেগুলোতে এখনও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আধুনিক ও ডিজিটাল পদ্ধতিতে পাঠদান ও উন্নত প্রযুক্তি যুক্ত করার মাধ্যমে ইউনিয়নকে আধুনিকায়ন করা। কেননা আমি মনে করি, আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ার মাধ্যমে আধুনিক শিক্ষিত সমাজ ও আধুনিক ইউনিয়ন গড়ে তোলা সম্ভব।
এদিকে বিএনপির আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ মনোনয়নপত্র উত্তোলন ও জমা দিয়েছেন। তার মনোনয়নপত্রটি নির্বাচন কমিশন বৈধ বলে ঘোষণা করেছে। তবে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া ছাড়া নির্বাচনের মাঠে তার তেমন কোনো নির্বাচনী কার্যাবলি নেই বলে ভোটাররা জানান। এ বিষয়ে তাঁর সাথে মুঠোফোনে আলাপ করলে তিনি পরে কথা বলবেন বলে চাঁদপুর কণ্ঠের প্রতিনিধিকে এড়িয়ে যান।
বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখা প্রতীকে প্রার্থী হয়েছেন আজহারুল ইসলাম। আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইউনিয়নে এ প্রার্থীর তেমন কোনো প্রচারণা বা গণসংযোগ নেই বললেই চলে। ভোটারদের কাছে তিনি পরিচিতও নন। সাংগঠনিকভাবেও এই দল থেকে ইউনিয়নে তেমন সক্রিয় নয় বলেও জানা যায়। এই প্রার্থীর সাথে মুঠোফোনে আলাকালে তিনি জানান, সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার জন্যে মানুষদের ইসলামের পথে চলার ও ইসলামী শাসন কায়েমের জন্যে তিনি এ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন।
এদিকে প্রশাসন ও সকল প্রার্থীর কাছে ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ আগামী ১১ নভেম্বর একটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জোর দাবি জানান। ভোটারা যাতে নির্বিঘেœ ভোটকেন্দ্রে যেতে পারে এজন্যেও সকল প্রার্থী প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

সর্বাধিক পঠিত