• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
  • ||
  • আর্কাইভ

চাঁদপুর জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের গণঅবস্থানে বক্তাগণ

এই দেশ এই মাটি আমার, তাহলে কেনো আমাদের উপর এতো নির্যাতন?

প্রকাশ:  ২৪ অক্টোবর ২০২১, ১৩:৪১ | আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০২১, ১০:৫৯
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট


দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন নিপীড়ন এবং মঠ, মন্দির, উপসনালয়, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, বাড়ি-ঘরসহ নারী-পুরুষের উপর হামলার ঘটনার তদন্তপূর্বক দোষীদের বিচার দাবি করে চাঁদপুর জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়েছে গণঅবস্থান।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বৃহৎ শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাষ্টমী পূজার দিন কুমিল্লায় নানুয়া দিঘির পাড়ে অনুষ্ঠিত পূজা ম-পে পবিত্র কোরআন শরীফ অবমাননার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা ভাংচুরের প্রতিবাদে সারাদেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে গণঅবস্থান ও বিক্ষোভ মিছিল। বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটি এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে তারই অংশ হিসেবে গতকাল ২৩ অক্টোবর শনিবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত চাঁদপুর শহরস্থ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চাঁদপুর জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ পালন করে গণঅনশন, গণঅবস্থান ও বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি। কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে খ- খ- মিছিল সহকারে গণঅবস্থান সমাবেশে জড়ো হতে থাকে জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদ, পুরাণবাজার হরিসভা মন্দির কমপ্লেক্স, জাতীয় হিন্দু মহাজোট, পুরাণবাজার দাসপাড়া সার্বজনীন দুর্গা মন্দির কমিটি, শারদাঞ্জলী ফোরাম, গীতা স্কুল পরিচালনা পরিষদ, জাগো হিন্দু পরিষদ, শ্রী শ্রী রামচন্দ্র স্মরণী পরিষদ, হিন্দু ছাত্র ফোরাম, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ছাত্র ঐক্য পরিষদ, বেদবাণী সংঘ, সনাতনী কল্যাণ সোসাইটি, রামকানন, পুরানবাজার সার্বজনীন জগন্নাথ মন্দির, বাংলাদেশ ব্রাহ্মণ সংসদসহ বিভিন্ন মঠ মন্দির ও উপজেলা পর্যায়ে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ। তাদের সমবেত শ্লোগানে তারা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর বিগত দিনসহ বর্তমান সময় পর্যন্ত ঘটে যাওয়া ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত বিচারের দাবি জানান।
চাঁদপুর জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অ্যাডঃ বিনয় ভূষণ মজুমদারের সভাপ্রধানে এবং সাধারণ সম্পাদক ও চাঁদপুর জেলা জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডঃ রনজিৎ কুমার রায় চৌধুরীর উপস্থাপনায় বক্তব্য রাখেন বংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ চাঁদপুর জেলা সভাপতি সুভাষ চন্দ্র রায়, জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের উপদেষ্টা সন্তোষ চন্দ্র রায়, অজয় কুমার ভৌমিক, রাধা গোবিন্দ গোপ, পরেশ চন্দ্র মালাকার, জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি নরেন্দ্র নারায়ণ চক্রবর্তী, সাধারণ সম্পাদক তমাল কুমার ঘোষ, সদস্য দুলাল চন্দ্র দাস, জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ নেতা গোপাল চন্দ্র সাহা, সুশিল সাহা, লক্ষ্মণ চন্দ্র সূত্রধর, মুক্তিযোদ্ধা বাসুদেব মজুমদার, রঞ্জিত সাহা মুন্না, অ্যাডঃ ভাস্কর দাস, অ্যাডঃ প্রভাস সাহা, মনিন্দ্র বর্মন, অপু বিশ^াস, অতনু সাহা, বৈভব মজুমদার, ইসকন চাঁদপুরের অধ্যক্ষ প-িত জগদানন্দ মহারাজ, শব্দসৈনিক মুক্তিযোদ্ধা পদকপ্রাপ্ত কৃষ্ণা সাহা, সপ্তসূর সংগীত একাডেমীর অধ্যক্ষ কণ্ঠশিল্পী রূপালী চম্পকসহ বিভিন্ন উপজেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। সভায় সংহতি জ্ঞাপন পূর্বক বক্তব্য রাখেন জেলা বাসদের সমম্বয়ক শাহজাহান তালুকদার ও জেলা জাসদ ছাত্রলীগের সভাপতি মিঠুন বিশ^াস।
বক্তারা গত ১৩ অক্টোবর অষ্টমীপূজার দিন কুমিল্লায় ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রেক্ষিতে দেশের বিভিন্নস্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়ি-ঘরে হামলা, নারী-পুরুষের উপর নির্যাতন নিপীড়ন, দেবালয় ভাংচুরসহ সাধু, পুরোহিতদের উপর বর্বরোচিত হামলাসহ হত্যার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। তারা বলেন, স্বাধীনতার ৫০বছর পর আমাদের নিরাপত্তার জন্যে রাস্তায় নামতে হয়, সম্প্রীতির সমাবেশ করতে হয় কেন? তার জবাব আমরা খুঁজে পাচ্ছি না। আমরা ভাবতে পাচ্ছি না আমরা কোন্ বাংলায় বসবাস করছি। এটা কি মজিবের বাংলা না অন্য কোনো বাংলা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এমন দেশ চান নি। তিনি চেয়েছিলেন সকল ধর্মের মানুষের সহবস্থান, তিনি চেয়েছিলেন অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। তাহলে কেনো বার বার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের উপর হামলা হচ্ছে। কেনো আমাদের দেবালয় ভুলুন্ঠিত হচ্ছে। কেনো আমাদের মা-বোনের সম্ভ্রমহানী হচ্ছে। কেনো আমার সম্প্রদায়ের মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। কারা করছে এ হীন ন্যাক্করজনক কাজ, কে দিবে আমাদের এই প্রশ্নের উত্তর। আমরা আজ শংকিত, উদ্বিগ্ন, চিন্তিত। স্বাধীনতার স্বপক্ষ শক্তি ক্ষমতার মসনদে থাকা অবস্থায় যদি আমাদের এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়, তাহলে আগামীতে আমাদের কী হতে পারে তা আমরা ভাবতে পারছি না। তারা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে আরো বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি আমাদের সকলের প্রধান। তাহলে একের পর এক আমাদের উপর এ হামলা কেন? আমরা এর বিচার চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমরা বলতে চাই, যারা একাজ করেছে তাদের লক্ষ্য শুধু দেবালয় ভাঙ্গাই নয়, তাদের লক্ষ্য হলো দেশে বিরাজমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করা। দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করা। তাই আপনাকেই সর্বাগ্রে ব্যবস্থা নিতে হবে। যদি তা না করা হয় তাহলে আপনার সকল অর্জন মাটিতে মিশে যাবে। বক্তারা আরো বলেন, আজ একটি দল এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মায়াকান্না করছে। আমাদের মনে আছে তাদের শাসনামলে কী ঘটেছিলো। তাদের সাম্প্রদায়িক কার্যকলাপে আমাদের অনেককেই দেশত্যাগ করতে হয়েছে। আমরা আর দেশত্যাগ করতে চাই না, এই দেশ এই মাটি আমাদের। এদেশের স্বাধীনতা অর্জনে আমাদেরও ভূমিকা রয়েছে। আমরাও দেশের স্বাধীনতা অর্জনে রক্ত দিয়েছি। সম্ভ্রম হারিয়েছে আমার মা-বোন। তাই আজকের এই সমাবেশ থেকে জানাতে চাই, যারা আমার দেবালয় ভাংচুর করে, আমার বাড়ি ঘরে হামলা চালায়, তারা সাবধান হয়ে যান। ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চেষ্টা করবেন না। যদি করেন তাহলে এদেশের অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষজনই আপনাদেরকে কঠিন জবাব দিবে। আমরা বিশ^াস করি গুঁটি কয়েক মানুষের জন্যে সকল মুসলিম ভাইয়ের বদনাম হতে পারে না। আমরা জানি ইসলাম শান্তির ধর্ম। তাহলে যারা ইসলামের নাম ভাঙ্গিয়ে মন্দির, দেবালয়সহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়ি-ঘরে হামলা করেছে তারা কারা। তারা কোনো মুসলমান হতে পারে না। এদেশের শান্তিকামী কোটি কোটি মুসলমান ভাই কখনো এ ধরনের ইসলাম বিরোধী কার্যকলাপ মেনে নিতে পারবে না বা এ ধরনের অনৈতিক কাজে সহায়তা করতে পারে না। তাই আমরা প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাই বিচারের নামে কোনো প্রহসন করবেন না। আমরা ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। আমরা মনে করি যারা দেশকে ভালোবাসে না, দেশের উন্নয়ন চায় না তারাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। বক্তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ ব্যক্ত করে আরো বলেন, গত কয়েকদিন যাবত ঘটে যাওয়া ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না হলে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে আমরা আগামীতে কোনো ধর্মীয় উৎসব করবো কী করবো না তা ভেবে দেখব। আমাদের পীঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আমরা জানাতে চাই আমাদেরকে কঠিন পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিবেন না। মনে রাখবেন আমরা এদেশের নাগরিক। আমাদেরকে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা প্রদানের দায়িত্ব রয়েছে রাষ্ট্রের। যদি রাষ্ট্র তা দিতে না পারে তাহলে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা কাঠামো ভেঙ্গে পড়বে। আর সুবিধাবাদীরা সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে সন্ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে সকলের শান্তি বিঘœ করে তুলবে। বক্তারা সরকারের প্রতি সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠনের জোর দাবি জানান।
আইন-শৃঙ্খলার কথা বিবেচনা করে গণঅবস্থান শেষে নেতৃবৃন্দ শেষ পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল পরিহার