• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

ঈদ উল ফিতর উদযাপনে জেলা প্রশাসনের প্রস্তুতি সভায় জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ

ঈদ জামাতে উস্কানিমূলক বক্তব্য যাতে না হয় সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে

প্রকাশ:  ০৭ মে ২০২১, ২০:৩৭
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

আসন্ন ঈদ উল ফিতর উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ। জেলা প্রশাসক তাঁর বক্তব্যে বলেন, মহামারি করোনার এ দ্বিতীয় ঢেউয়ে আমরা ঈদ উল ফিতর উদ্যাপন করতে যাচ্ছি। এ উপলক্ষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে কিছু নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হচ্ছে : ঈদের নামাজ কোনো ঈদগাহ বা খোলা মাঠে-ময়দানে করা যাবে না। মসজিদের মধ্যেই নামাজ আদায় করতে হবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে। তিনি বলেন, ঈদের নামাজে যদি মসজিদে মুসলি্লর ভিড় বেশি হয়, তাহলে একাধিক ঈদের জামাত আয়োজন করা যাবে। কোনোভাবেই মসজিদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করা যাবে না। সবাইকে ঈদের জামাতে মাস্ক পরে যেতে হবে। মসজিদকে জীবাণুমুক্ত ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ঈদের নামাজের সময় মুসলি্লরা জায়নামাজ সাথে নিতে হবে, মসজিদে কার্পেট বিছানো যাবে না।


এ ব্যাপারে তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ঈদের জামাতের বিষয়ে ইমাম সাহেব, মসজিদ কমিটি এবং ঈদের জামাতের সাথে জড়িতসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনাপূর্বক প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, ঈদের জামাতে কোনো ধরনের উস্কানিমূলক বক্তব্য কিংবা জঙ্গিবাদী কোনো তৎপরতা যেনো না চলে সে বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। এছাড়া যিনি বা যারা নামাজ পড়াবেন তার ব্যাপারেও খোঁজখবর নিতে হবে। রাষ্ট্র, সমাজ কাঠামো এবং প্রকৃত ইসলামের মধ্যে না থেকে যারা ধর্মের অপব্যাখ্যা দিবেন, এ রকম ইমাম দ্বারা নামাজ পড়ানো যাবে না। এ বিষয়ে কোনো ব্যত্যয় যেনো না ঘটে। স্বাস্থ্যবিধি ও সতর্কতার বিষয়গুলো তুলে ধরে তিনি তথ্য অফিস ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে মাইকে প্রচার করার জন্যে আহ্বান জানান।

 


জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ঈদের সময় পাড়া-মহল্লায় কোনো রকম সাউন্ড সিস্টেম বা মাইক ব্যবহার করা যাবে না। এ ব্যাপারে তিনি পুলিশ প্রশাসন ছাড়াও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি বলেন, অতিমারিতে এ ঈদ উদ্যাপন আমরা অবশ্যই করবো। যেখানে আনন্দ থাকবে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, আমরা সেই আগের ঈদগুলোর মতো উদ্যাপনের অবস্থায় নেই।

 


জেলা প্রশাসক বলেন, চাঁদপুরের পর্যটন এলাকাগুলো সমাগম এড়ানোর জন্যে বন্ধ থাকবে। এছাড়া নদীতে নৌকায় করে আনন্দযাত্রা করা যাবে না। স্পিডবোট চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে। তিনি নদী এলাকায় নিরাপত্তা প্রদানের বিষয়ে নৌ-পুলিশকে অনুরোধ জানান। এছাড়াও ঈদ উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আরও বেশি সক্রিয় ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানান।

 


জেলা প্রশাসক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই বন্ধের সময় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিস বন্ধ থাকলেও কর্মস্থল ত্যাগ করতে পারবেন না, এই মর্মে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা থাকলেও তা অনেকে মানছেন না বা তারা কর্মস্থলে থাকছেন না। এ ব্যাপারে তিনি ডিডি এনএসআইকে এ ধরনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তালিকা তৈরির জন্যে অনুরোধ জানান। এছাড়া তিনি বলেন, ঈদে আমরা লক্ষ্য রাখবো কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী যাতে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কর্মস্থল ত্যাগ করতে না পারেন।

 


নৌ-পুলিশ সুপার মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, ঈদ উপলক্ষে নদী এলাকায় অপরাধ বা নদীতে যাতে গণনৌযান না চলে সেজন্যে আমরা সতর্ক রয়েছি। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) কাজী আবদুর রহীম বলেন, আমাদের নিয়মিত কাজের পাশাপাশি ঈদ উপলক্ষে বরাবরই বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তবে লোকবল কম হওয়ায় পুলিশের পাশাপাশি সচেতন সুশীলগণ এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিগণকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।

 


সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ সাখাওয়াত উল্যাহ বলেন, চাঁদপুরে বর্তমানে করোনা আক্রান্ত কম হওয়া সত্ত্বেও জাতীয় পর্যায়ের চেয়ে আমাদের এখানে আক্রান্তের হার বেশি। এই হার যাতে ঈদকে কেন্দ্র করে বাড়তে না পারে এবং আক্রান্তের হার যাতে নিম্নে পেঁৗছে সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, সতর্ক থাকতে হবে।

 


জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল বলেন, ঈদ এলেই আমাদের এখানে মাদকদ্রব্য বিক্রি ও সেবন বেড়ে যায়। এ ব্যাপারে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। প্রেসক্লাব সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী বলেন, পাড়া-মহল্লাগুলোতে উঠতি বয়সী ছেলে বা কিশোর গ্যাং সদস্যদের উৎপাত বেড়ে যায় ঈদের সময়ে। যার ফলে কিশোর অপরাধসহ বিভিন্ন মারাত্মক অপরাধ সংঘটিত হয়। এই ঈদেও এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে, যা শহর ছাড়িয়ে গ্রামাঞ্চলেও ঘটে। তাই এ ধরনের বিষয় আমলে নিয়ে ঈদের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সচেতন মহলকে সতর্ক থাকতে হবে।

 


সভায় আরও বক্তব্য রাখেন এনএসআইয়ের উপ-পরিচালক শেখ আরমান। তিনি বলেন, ঈদ উপলক্ষে আমরা চোখ-কান খোলা রেখেছি, যেনো সীমান্ত পাড়ি দিয়ে কেউ দেশে ঢুকতে না পারে। ইতোমধ্যে আমরা খবর পেয়েছি যে, হাজীগঞ্জে এ রকম একজন ঢুকেছেন। তার বিষয়ে আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি।

 


সভা পরিচালনা করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান। সভায় উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সানজিদা শাহনাজসহ বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাগণ।

সর্বাধিক পঠিত