• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

ঢাকায় অগ্নিকান্ডে নিহত অলি ও রাসেলের গ্রামের বাড়ি ফরিদগঞ্জে শোকের মাতম

প্রকাশ:  ২৫ এপ্রিল ২০২১, ১০:৩২
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

মামা অলি উল্যাহ (৫৬) ও ভাগ্নে রাসেল (৩০) ঢাকার আরমানিটোলার মুসা ম্যানসনে একই সাথে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে চাকুরি করতেন। এই মুসা ম্যানসনের অগ্নিকা-ে যে ৪ জন নিহত হন, তাদের মধ্যে এই মামা-ভাগ্নে দুইজন রয়েছেন। তাদের দুজনের বাড়ি ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৮নং পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের খুরুমখালী গ্রামে। একইসাথে চাকুরি করার কারণে তারা বাড়ি আসলে অদল-বদল করে আসতেন। ভাগ্নে রাসেল সর্বশেষ রোজার ১৫/২০ দিন পূর্বে এসে কদিন থেকে চলে যাওয়ার পর মামা অলি উল্যাহ বাড়ি আসেন। তিনিও কয়েকদিন বাড়িতে থেকে রোজা শুরু হওয়ার ৩দিন পূর্বে চাকুরির টানে ঢাকা চলে যান। কিন্তু এখন মামা-ভাগ্নে ফিরলেন এক সাথে, তবে লাশ হয়ে। শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টায় তাদের লাশবাহী গাড়ি গ্রামের বাড়ির খুরুমখালী গ্রামের গনি মেম্বারের বাড়িতে পৌঁছে। পরে রাতেই জানাজা শেষে রাত সাড়ে ১২টার দিকে পারিবারিক কবরস্থানে উভয়কে পাশাপাশি কবরে দাফন করা হয়।
শুক্রবার ভোরে মুসা ম্যানসনের অগ্নিকা-ে ফায়ার সার্ভিস টিম রাসেলের লাশ দ্বিতীয় তলায় পেলেও অলি উল্যার লাশ পেয়েছেন ভবনের ছাদের চিলেকোঠায়।
শনিবার সরজমিনে ওই গ্রামের গনি মেম্বারের বাড়ির অলি উল্লার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় সর্বত্র সুনশান নীরবতা। বাড়ির প্রবেশ পথেই কবরস্থানে দু’টি নতুন কবর। একটি অলিউল্যাহর ও অপরটি তার ভাগ্নে রাসেলের।
অলি উল্যাহ তার বোন নূরজাহান বেগমকে একই বাড়িতে বিয়ে দিলেও বর্তমানে তারা পাশেই আরেকটি বাড়িতে থাকেন।
অলি উল্যাহর ছোট ছেলে সারাফত উল্লাহ রিয়াদ জানান, সর্বশেষ রোজা শুরু হওয়ার সপ্তাহ পূর্বে বাড়ি এসেছিলেন তার বাবা। কদিন থেকে রোজা শুরুর ৩দিন পূর্বে কর্মের টানে ঢাকা চলে যান। শুক্রবার ভোরে সেহরীর সময় অগ্নিকা-ের কিছুক্ষণ পর তারা খবর পান ওই ভবনে আগুন লেগেছে। তার বাবার মুঠোফোনে বারংবার কল করলেও তা রিসিভ করেন নি। তার বাবার লাশ সকলের পরে পাওয়া যায়। তাকে মুসা ম্যানসনের ছাদের একটি কক্ষে কবির নামে একজনের সাথে পোড়া অবস্থায় উদ্ধার করে লোকজন। তিনি বলেন, ছাদে তো আগুন পৌঁছে নি। তার লাশ সেখানে কীভাবে গেল, তা প্রশ্নবোধক। তার বাবার লাশ ভবনের চিলেকোঠায় পাওয়া গেল। অথচ সেই পর্যন্ত আগুন যায় নি।
রিয়াদ জানান, কর্মের টানে তার বাবা অলি উল্লাহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কুয়েতে যান। সেখানে কয়েক বছর চাকুরি করার পর ১৯৯২ সালে ইরাক যুদ্ধের সময় দেশে চলে আসেন। পরে এলাকায় দুইবার দোকান দিলেও ব্যবসায় লোকসান গুনে তা বন্ধ করে দেন। প্রায় ৮/১০ বছর পূর্বে তার বোন জামাই দেলোয়ার ও ভাগ্নে রাসেলের সূত্র ধরে ঢাকার আরমানিটোলার মুসা ম্যানসনে নিরাপত্তা কর্মীর চাকুরি নেন।
নিহত অলি উল্লাহ দুই ছেলে ও তিন মেয়ের জনক ছিলেন। বড় ছেলে মুরাদ সৌদি প্রবাসী। ছোট ছেলে রিয়াদ চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন।
অন্যদিকে অলি উল্লার ভাগ্নে রাসেলও গত গত প্রায় ১১ বছর ধরে মুসা ম্যানসনে নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে চাকুরি করতেন। মামা অলি উল্যা ও ভাগ্নে একই সাথে চাকুরি করার কারণে অদল-বদল করে তারা বাড়ি আসতেন। সর্বশেষ রোজার ১৫/২০ দিন পূর্বে রাসেল বাড়ি আসেন। তখন কয়েকদিন বাড়িতে থেকে কর্মস্থলে চলে যান। ৫ বছর পূর্বে তিনি বিয়ে করেন পাশর্^বর্তী ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকার কেরোয়া গ্রামের পাটওয়ারী বাড়িতে। তার তিন বছর বয়সী রাইসা ও ৬ মাস বয়সী নাফিসা নামে দুই মেয়ে রয়েছে।
রাসেলের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, মৃত্যুর সংবাদ শুনে লোকজন বাড়িতে ভিড় করেছে। রাসেলের মা নূরজাহান বেগম ছেলে রাসেল ও ভাই অলি উল্যাহকে হারিয়ে শোকে কাতর হয়ে পড়েছে। লোকজন দেখলেই তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে।
রাসেলের বাবা দেলোয়ার হোসেন জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে আরমানিটোলার মুসা ম্যানসনের পাশে ছোট দোকান করে ব্যবসা করতেন। তার দোকানের জায়গাটি বিক্রি হওয়ার কারণে তিনি দোকান বন্ধ করতে বাধ্য হন। পরে মুসা ম্যানসন তৈরির পর ১১ বছর পূর্বে তিনি অসুস্থতার কারণে মুসা ম্যানসনের মালিক মোস্তাক আহমেদকে ধরে ছেলে রাসেলকে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে চাকুরি নিয়ে দেন। পরে তিনি এলাকায় এসে নিজে বাড়ির সামনে দোকান দিয়ে বসেন।
তিনি বলেন, তিন বছর বয়সী রাইসা ও ৬ মাস বয়সী নাফিসা জানে না তারা পিতৃহারা। ছোট ছোট শিশু দুটি কীভাবে তাদের বাবার অভাব পূরণ করবে। কীভাবে চলবে আমার সংসার জানি না। আল্লাহ কেনো আমার পরিবারের প্রতি এতো নির্দয় হলেন।
তিনি জানান, মুসা ম্যানসনে আগুন লাগার পর সেখান থেকে কয়েকজন লোক পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে তাকে মুঠোফোনে কল করে আগুনের কথা জানান। পরে তিনি রাসেলের মুঠোফোন কল করলেও কেউ তা রিসিভ করেন নি।
অগ্নিকা-ের ঘটনায় একই পরিবারের দুইজনের মৃত্যুতে দুই বাড়িতে শোকের মাতম বইছে। আত্মীয়-স্বজনরা এসে শান্ত¡নার বাণী দিয়ে গেলেও কীভাবে পরিবারগুলো চলবে সে চিন্তায় অস্থির তারা। গ্রামের লোকজন মামা-ভাগ্নের করুণ মৃত্যুতে শোকাহত। তারা এভাবে নির্মম মৃত্যু বন্ধের দাবি জানিয়ে বলেন, এখন এই দুটি পরিবারের দেখভাল কে করবে। তাদের সংসার চালাবে কে?

 

সর্বাধিক পঠিত