• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

মনোনয়ন পেতে ৩০ প্রার্থীর লড়াই

আজ নির্ধারিত হবে ফরিদগঞ্জ ও কচুয়া পৌরসভা নির্বাচনে নৌকার মাঝি

প্রকাশ:  ১৩ জানুয়ারি ২০২১, ০৮:৫০
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

কে হচ্ছেন ফরিদগঞ্জ ও কচুয়া পৌরসভার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকার মাঝি? এই নিয়ে চলছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। আজ বুধবার আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ৪র্থ দফা পৌর নির্বাচনের দলীয় মনোনয়ন নির্ধারণের জন্যে স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভা হওয়ার কথা রয়েছে। সেই বৈঠকেই নির্ধারিত হবে চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ ও কচুয়া পৌরসভার আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী।

জেলার বিগত পৌরসভা নির্বাচনের দিকে তাকালে দেখা যাবে, চাঁদপুর পৌরসভা নির্বাচনে টানা দু'বারের বিজয়ী মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদের পরিবর্তে বাদ দিয়ে তরুণ প্রজন্মের জিল্লুর রহমান জুয়েলকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড। তিনি বিজয়ী হয়ে আস্থা রাখেন।

আগামী ৩০ জানুয়ারি ৩য় দফার পৌর নির্বাচনে হাজীগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড বর্তমান মেয়র মাহবুবুল আলম লিপনের উপর আস্থা রাখেন। ফলে দু'টি পৌরসভা নির্বাচনে দু'রকম মনোনয়ন দেয়ায় আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য ৪র্থ দফার পৌর নির্বাচনে জেলার ফরিদগঞ্জ ও কচুয়া পৌরসভায় কে মনোনয়ন পাবেন তা নিয়ে সকলের কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে। সকল প্রার্থীই শেষ মুহূর্তের তদবির নিয়ে ঢাকায় অবস্থান করছেন। প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টায় আসছে নতুন খবর। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সয়লাব নেতা-কর্মীদের চটকদার মন্তব্য ও লেখায়। কিন্তু কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না, আমিই পাবো। কারণ একটাই, মনোনয়ন বোর্ডের প্রধান দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিগত দিনে দেখা গেছে সর্বস্থান থেকে দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত থাকলেও দলীয় মনোনয়ন তালিকা প্রকাশের পর দেখা গেছে গণেশ উল্টে গেছে। এবারও কি সে এই পরিণতির দিকে দুই পৌরবাসীর যাচ্ছে কি না, তা দেখার বিষয়।

বিশাল জনসংখ্যা অধ্যুষিত ফরিদগঞ্জ উপজেলার কেন্দ্রস্থল ১৯.৭৫ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে ২০০৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর ফরিদগঞ্জ পৌরসভা যাত্রা শুরু করে। ৯টি ওয়ার্ডের সমন্বয়ে গঠিত পৌরসভার সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ভোটার সংখ্যা ৩১ হাজার ৮৪ জন। প্রতিষ্ঠাকালে এটি 'গ' শ্রেণির হলেও ২০১৬ সালে ২০ জুন এটিকে 'খ' শ্রেণিকে উন্নীত করা হয়। সাবেক ১৩নং ফরিদগঞ্জ উত্তর ইউনিয়নের পুরো অংশ, ৯নং গোবিন্দপুর উত্তর ইউনিয়নের সাবেক ৯নং ওয়ার্ড এবং ৮নং পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের একটি গ্রামের কিছু অংশ নিয়ে পৌরসভাটি গঠিত হয়।

আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের দিনে ফরিদগঞ্জ পৌরবাসী তাদের নতুন পৌর মেয়র নির্বাচনের জন্যে ভোট প্রদান করবেন। ব্যালট ভোটে নির্বাচনের লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে রাজনীতির মাঠের বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মেয়র পদের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ব্যস্ত দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্যে।

পৌর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় এবং চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের কাছে কমপক্ষে ২০ জনের আবেদন জমা পড়ে। জেলা আওয়ামী লীগও ঝামেলা এড়াতে আবেদনকারী সকল প্রার্থীর তালিকা পাঠিয়ে দেয় কেন্দ্রে। সেই অনুযায়ী এই পর্যন্ত ফরিদগঞ্জ পৌরসভার মেয়র পদে মেয়র পদে নৌকার মাঝি হতে দলীয় মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ২০ জন প্রার্থী। অর্থাৎ এক নৌকার মাঝি হতে লড়ছেন ২০ প্রার্থী।

এরা হলেন : পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান মেয়র মাহফুজুল হক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের পাটওয়ারী, সহ-সভাপতি লোকমান তালুকদার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান ওয়াহিদুর রহমান রানা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম পাটওয়ারী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন মিয়াজী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন মিয়াজী, জেলা পরিষদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমান মিটু, জেলা পরিষদ সদস্য ও পৌর আওয়ামী লীগের একাংশের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম রিপন, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) ও কাউন্সিলর মজিবুর রহমান পাটওয়ারী, পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও কাউন্সিলর মোঃ খলিলুর রহমান, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও যুবলীগের সাবেক সদস্য ইসমাইল হোসেন পাটওয়ারী, পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদ চাঁদপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হাজী কামরুল হাসান সাউদ, পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক আকবর হোসেন মনির, উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান শাহীন, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হেলাল উদ্দিন আহমেদ ও পৌর যুবলীগের সভাপতি আব্দুল গাফ্ফার সজিব। এছাড়া নারী প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী সেলিনা আক্তার শেলী, উপজেলা মহিলা লীগের সভাপতি অ্যাডঃ নাজমুন নাহার অনি ও পৌর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমুর বেগম।

২০০৫ সালে ফরিদগঞ্জ পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত হন মেয়র মোঃ মঞ্জিল হোসেন। এরপরে ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিজয়ী হন বর্তমান মেয়র মাহফুজুল হক। সেই নির্বাচনে পরাজিত হন ওই সময়ের মেয়র মঞ্জিল হোসেন। ওই সময়ে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন দুজন। আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মেয়র পদে ২০ প্রার্থীর মধ্যে কে নৌকার মাঝি হচ্ছেন, তা নিয়ে চলছে বিচার-বিশ্লেষণ। সর্বশেষ তথ্যমতে, ২০ জনের তালিকা অনেকটা ছোট হয়ে এসেছে। সম্ভবত শীর্ষ ৫ জনে এসে দাঁড়িয়েছে। এখন শুধু অপেক্ষার পালা কার ভাগ্যের চাকা ঘুরে।

এদিকে তফসিল ঘোষণার পর জেলার আরেক উপজেলা কচুয়া পৌর শহরেও নির্বাচনের আমেজ জমে উঠেছে। সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীদের ব্যানার-ফেস্টুন ও তোরণে ছেয়ে গেছে পুরো এলাকা। সেখানেও প্রশ্ন কে হচ্ছেন কচুয়া পৌরসভার আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী? নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ জনগণের মধ্যেও বিষয়টি নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে। মেয়র পদের প্রার্থীরা বর্তমান এমপি ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ ও এনবিআরের সাবেক সচিব গোলাম হোসেনের আস্থাভাজন হওয়ার পরিচয় দিয়ে ব্যাপক নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চলেছে এতদিন। কিন্তু এখন সকল প্রার্থীই শেষ সময়ের তদবিরে ব্যস্ত।

বর্তমান মেয়রসহ আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন ১০ জন। চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের নির্দেশে দলীয় সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে ৩ জনের নামের তালিকা পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হলেও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভা ডেকে ৩ জনের নাম নির্ধারণ করতে ব্যর্থ হয়ে ১০ জনের নাম তালিকা জেলায় প্রেরণ করেছে। জেলা আওয়ামী লীগও সকলের নামই কেন্দ্রে পাঠায় বলে জানায়। ওই ১০ জনের মধ্যে ইতিমধ্যেই ৮ জন দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তারা হচ্ছেন : বর্তমান মেয়র উপজেলা যুবলীগের সভাপতি নাজমুল আলম স্বপন, কচুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ আব্দুল জব্বার বাহার, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আকতার হোসেন সোহেল ভূঁইয়া, সহ-সভাপতি জাবরুল হাসান শাহীন, সাংগঠনিক সম্পাদক জামাল হোসেন, পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক মঞ্জুর আহমেদ সুজন, আওয়ামী লীগ নেতা আহসান হাবীব প্রানজল, আওয়ামী লীগ নেতা ও পৌর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ।

কচুয়া পৌরসভাতেও কে পাচ্ছেন দলীয় মনোনয়ন, তা নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা।

আজ বুধবার আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন বোর্ড সভা করে দলীয় প্রার্থী নির্ধারণ করে দিলেই মিটবে দীর্ঘ প্রতীক্ষার।