• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

কঠিন চ্যালেঞ্জ নিয়ে চাঁদপুর পৌরসভার দায়িত্ব নিচ্ছেন নবনির্বাচিত মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল

আগস্ট পর্যন্ত বিদ্যুৎ খাতে বকেয়া ২৫ কোটি ৩০ লাখ স্টাফ বেতন বকেয়া পাঁচ মাস

প্রকাশ:  ১৪ অক্টোবর ২০২০, ১০:৫৫
এএইচএম আহসান উল্লাহ
প্রিন্ট

কঠিন এক চ্যালেঞ্জের মুখে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন চাঁদপুর পৌরসভার নবনির্বাচিত মেয়র অ্যাডঃ মোঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল। প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার দেনার বোঝা এ পৌরসভাটির ঘাড়ের উপর রেখে যাচ্ছেন বর্তমান পৌর পরিষদ। শুধুমাত্র বিদ্যুৎ খাতেই আগস্ট পর্যন্ত বকেয়া ২৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা। আর স্টাফ বেতন বকেয়া আছে পাঁচ মাসের। সম্পূর্ণ জনসেবামূলক এ প্রতিষ্ঠানটিকে দেনায় জর্জরিত করে ফেললেও পৌরসভার বিভিন্ন পর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী অবৈধভাবে বিত্ত-বৈভবের মালিক হয়েছেন। অথচ জনসেবামূলক এ প্রতিষ্ঠানটি থেকে প্রকৃত সেবা বঞ্চিত হয়েছে পৌরবাসী। জনগণকে নূ্যনতম সেবা দিতে গিয়েও করা হয়েছে অস্বাভাবিক দুর্নীতি। বলতে গেলে এ পৌরসভাকে ঘিরে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছে একটি সিন্ডিকেট। আর এ সিন্ডিকেটের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত পৌরসভার দুর্নীতিবাজ কিছু কর্মকর্তা। সিন্ডিকেটের কাছেই এ পৌরসভার শত শত কোটি টাকার বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প ছিলো জিম্মি। এরা এসব উন্নয়নমূলক কাজ করতে গিয়ে মারাত্মক দুর্নীতির আশ্রয় নেন। ফলে উন্নয়ন কাজগুলোর কোনো কোনোটি এক অর্থ বছরেও টিকেনি। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে চাঁদপুর শহরের সড়কগুলোর উন্নয়ন কাজ। একটি বর্ষাও যায় না। শহরের সকল রাস্তা আবার আগের অবস্থায় চলে আসে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা এবং জলাবদ্ধতার অবস্থাও শোচনীয়। এমন এক কঠিন বাস্তবতায় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা এবং অশুভ সিন্ডিকেট দ্বারা বেষ্টিত চাঁদপুর পৌরসভার মেয়রের দায়িত্ব নিচ্ছেন নবনির্বাচিত পৌরপিতা অ্যাডঃ মোঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল। আর এটাই প্রথম কোনো জনপ্রতিনিধি হিসেবে তাঁর দায়িত্ব গ্রহণ।

১২৫ বছরের এ পৌরসভার আয়তন এখন ২২ বর্গকিলোমিটার। ৯ বর্গকিলোমিটার থেকে এটি ২২ বর্গকিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। ওয়ার্ড সংখ্যা পাঁচ থেকে বেড়ে ১৫টি। অনেক বড় আয়তনের এ পৌরসভায় সেবার খাতগুলোর পরিধিও বেড়েছে অনেক। বিদ্যুৎ খাত, পানির খাতসহ আরো নানা সেক্টরে ভোক্তা বেড়েছে কয়েকগুণ বেশি। তেমনি পৌরসভার জনবল এক যুগ আগে যা ছিলো, তা থেকে বেড়েছে অনেক। বাড়েনি শুধু পৌরবাসীর কাঙ্ক্ষিত সেবার মান। বরং সেবা পাওয়ার খাতগুলো দেনার দায়ে জর্জরিত।

পৌরসভার ব্যয়ের সবচেয়ে বড় দুটি খাত বিদ্যুৎ এবং স্টাফ বেতন। এ দুটি খাতের বর্তমান অবস্থা জানলেই বুঝা যায় এ পৌরসভার ঘাড়ে দেনার বোঝা কেমন। চাঁদপুর পিডিবি সূত্রে জানা যায়, চাঁদপুর পৌরসভা থেকে বিদ্যুৎ বিভাগ পাওনা ২৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা। তাও এটি আগস্ট মাস পর্যন্ত হিসেব। এর সাথে সেপ্টেম্বরের হিসেব যোগ হলে বকেয়ার পরিমাণ আরো বাড়বে। চাঁদপুর বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিক্রয় ও বিতরণ) সূত্রে আরো জানা যায়, বিদ্যুৎ খাতে প্রতি মাসে চাঁদপুর পৌরসভার বিল আসে ৪০ লক্ষাধিক টাকা। এর মধ্যে চারটি সাপ্লাইর পানির প্লান্টের বিলই মাসে আসে ৩০ লাখ ৮০ হাজার টাকা। চাঁদপুর পিডিবির সহকারী প্রকৌশলী শাহাদাত হোসেন জানান, পৌর কর্তৃপক্ষ চারটি প্লান্টের বিদ্যুৎ বিল বাবদ এ পর্যন্ত একটি টাকাও দেয়নি। সেজন্যে বকেয়ার পরিমাণ প্রতি মাসেই বাড়ছে। অথচ পৌরসভার গ্রাহকদের থেকে পৌর কর্তৃপক্ষ পানির বিল তেমন একটা পাওনা নেই। সহকারী প্রকৌশলী শাহাদাত হোসেন আরো জানান, এই বকেয়া দীর্ঘদিনের।

পৌরসভার নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জানা গেছে, এ পৌরসভার স্টাফ বেতন বর্তমানে প্রতি মাসে আসে ১ কোটি ১১ লাখ ৫৪ হাজার ২শ' ৪৬ টাকা। এই পরিমাণ বেতনের হিসাব এপ্রিল মাসের। মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসের স্টাফ বেতন বকেয়া পড়েছে। এ খাতে পাঁচ মাসের বকেয়া হচ্ছে ৫ কোটি ৫৭ লাখ ৭১ হাজার ২শ' ৩০ টাকা।

বিদ্যুৎ এবং স্টাফ বেতন শুধু এই দুটি খাতেই যদি অক্টোবর পর্যন্ত বকেয়া ধরা হয়, তাহলে বকেয়ার পরিমাণ ৩২ কোটি টাকায় গিয়ে পেঁৗছবে। এছাড়া এ পৌরসভার আরো যেসব খাত রয়েছে, সেগুলোর হিসেব ধরলে বকেয়ার পরিমাণ আরো বাড়বে। সব মিলিয়ে দেনার খাত অর্ধশত কোটি টাকার মতো হবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে।

এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাওয়া হয় চাঁদপুর পৌরসভার সচিব আবুল কালাম ভূঁইয়ার কাছে। তিনি বিদ্যুৎ বিলের বকেয়ার বিষয়ে বলেন, এই বকেয়া ধারাবাহিকভাবে চলে আসছে। ইউছুফ গাজী সাহেব দায়িত্ব ছাড়ার সময়ও বকেয়া ছিলো। এরপর শফিকুর রহমান ভূঁইয়া সাহেব যখন দায়িত্ব ছাড়েন তখন বিদ্যুৎ বিল তিনি ৮ কোটি টাকা বকেয়া রেখে যান। আমাদের বর্তমান মেয়র মহোদয় নাছির উদ্দিন আহমেদ সাহেব দায়িত্ব নেয়ার পর তাঁর মেয়াদকালে ওই বকেয়া পরিশোধ করেন। তবে সারচার্জ মওকুফের বিষয়ে তৎকালীন জেলা প্রশাসকসহ সিদ্ধান্ত নিয়ে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিলো। পরে যখন রানিং বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়ে গেলো, তখন পূর্বের সারচার্জ এর সাথে যোগ হয়। তিনি জানান, রানিং বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়ে ১৩ কোটি টাকার কিছু বেশি। এই বকেয়ার সারচার্জ এবং পূর্বের সারচার্জ সব এক হয়েই মূলত এই বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়েছে। রানিং বিল বকেয়া পড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আসলে মেয়র সাহেব উন্নয়নমূলক কাজের দিকে নজর দিতে গিয়ে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়ে গেছে। ওনার খেয়াল ছিলো এবার মনোনয়ন পেলে পুনরায় নির্বাচিত হয়ে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পরিশোধ করে দিবেন। কিন্তু সে সুযোগ তো আর হলো না। তারপরও পৌরসভার বিভিন্ন মার্কেটের দোকান ও প্লট বিক্রি করেও দেনা পরিশোধ করা যাবে। স্টাফদের বেতন পাঁচ মাসের বকেয়া পড়ে যাওয়ার বিষয়টিও তিনি স্বীকার করেন।

সর্বাধিক পঠিত