• পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
  • আর্কাইভ

পুনরায় রিটের প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলন

একটি সিন্ডিকেট নির্বাচনকে প্রলম্বিত করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে : নৌকার প্রার্থী অ্যাডঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল

প্রকাশ:  ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৮:৪৪
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট

চাঁদপুর পৌরসভা নির্বাচন স্থগিত চেয়ে আরও একটি রিট করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি বরাবর এ রিট আবেদনটি করেছেন চাঁদপুর পৌর এলাকার ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল খায়ের মিজি। তিনি এ নির্বাচনে নিজে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ না থাকার অভিযোগ, করোনার প্রাদুর্ভাব, বৃষ্টি এবং বন্যার কারণ উল্লেখ করেছেন তার রিট আবেদনে।

এদিকে পূর্বে করা দু'টি রিট আবেদন খারিজ হওয়ার পর আবারও নির্বাচন প্রলম্বিত করতে আরও একটি রিট করার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলন করেছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় তাঁর নির্বাচনী কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, চাঁদপুর পৌরসভা নির্বাচনকে প্রলম্বিত করতে একটি সিন্ডিকেট উঠে-পড়ে লেগেছে। তাদের দায়ের করা দু'টি রিট রোববার খারিজ হওয়ার পর পরই ওই সিন্ডিকেটের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে আগে প্রস্তুত থাকা আরও একটি রিট আবেদন করা হয়েছে। পূর্বের রিটকারী ও নতুন রিটকারীরা একই সূত্রে গাঁথা।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে নৌকা প্রতীক দিয়েছেন। নির্বাচন কমিশন ১০ অক্টোবর ভোটগ্রহণের দিন ধার্য করেছে। স্বার্থ সংশ্লিষ্ট একটি সিন্ডিকেট এই নির্বাচনকে প্রলম্বিত করার অপচেষ্টা করছে। আর এই সিন্ডিকেটটি চাঁদপুর পৌরসভার উন্নয়ন কর্মকা-কে ঘিরে তৈরি হওয়া। যেহেতু আমি আমার নির্বাচনী প্রচারণায় দৃঢ়তার সাথে বলেছি আমি ওই অশুভ সিন্ডিকেট ভেঙ্গ দিবো, তাই তাদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। আমি দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই, কোনো অপশক্তি, সিন্ডিকেট ১০ অক্টোবরের নির্বাচনকে প্রলম্বিত করতে পারবে না। নির্বাচন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী নির্ধারিত দিনেই হবে। এ নির্বাচনকে ওই সিন্ডিকেট একদিনও পেছাতে পারবে না।

অ্যাডঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল বলেন, এ নির্বাচনটি ২৯ মার্চ হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর আকস্মিক মৃত্যুতে নির্বাচনটি স্থগিত হয়ে যায়। এরপর করোনা পরিস্থিতির কারণে সারাদেশে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু এখন সে পরিস্থিতি নেই। বহুল প্রত্যাশিত এ পৌর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর দল-মত নির্বিশেষে সকল প্রার্থী আবার তাদের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে প্রচার-প্রচারণায় নির্বাচনের মাঠে নামে।

তিনি বলেন, আপনারা জানেন, পুনঃতফসিল ঘোষণার পর নতুন করে যখন আবার ভোটের আমেজ, উৎসব শুরু হলো, ঠিক তখনই একটি রিট পিটিশন দায়ের করা হয়। যে রিটের উদ্দেশ্য ছিল নির্বাচনকে প্রলম্বিত করা। ওই রিটের পরপরই গোটা চাঁদপুরের মানুষ এই অপচেষ্টাকে সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করে।

তিনি বলেন, মহামান্য হাইকোর্ট ওই রিটকে আইনগত পর্যালোচনাশেষে আজকে (গতকাল) খারিজ করে দিয়েছেন। এই খারিজের সংবাদ যখন চাঁদপুরে আসে তখন পুরো পৌরবাসী আনন্দিত হয়েছিল। কিন্তু পরক্ষণেই আমরা জানতে পারলাম, পূর্বের রিট পিটিশন খারিজ হওয়ার পরই পূর্ব থেকে প্রস্তুত করে রাখা আরেকটি রিট পিটিশন দায়ের করা হয়। আর এই রিট পিটিশনকারী হচ্ছেন পুরাণবাজারের পশ্চিম শ্রীরামদী এলাকার আবুল খায়ের মিজি। তিনি বলেন, এই রিট পিটিশন দায়েরকারী এবং পূর্বের রিটকারীরা একটি নির্দিষ্ট চক্রের মাধ্যমেই নির্বাচনকে প্রলম্বিত করার অপচেষ্টা করে যাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, চাঁদপুর পৌরসভা নির্বাচন ইভিএম পদ্ধতিতে হচ্ছে। এটি একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়া। আমি মনে করি এ পদ্ধতি পৌরবাসীর জন্যে জননেত্রী শেখ হাসিনার একটি উপহার। ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার জন্যে এই পদ্ধতির ব্যবহার করা হচ্ছে।

জিল্লুর রহমান জুয়েল বলেন, চাঁদপুর পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরে ভোটারদের মাঝে প্রচ- আকাঙ্ক্ষা, উৎসাহ থাকার পরও ভোটারদের সকল অনিশ্চয়তা দূর করার জন্যে আমাদের নেতা-কর্মী, সমর্থকরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়েছে এবং তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছে। আমরা তাদেরকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছি ভোট নির্দিষ্ট সময়েই হবে। এই ভোটকেন্দ্রের পরিবেশ সুশৃঙ্খল হবে এবং একটি নিরপেক্ষ প্রক্রিয়ার মধ্যে হবে।

তিনি বলেন, আমরা যখন ভোটারদেরকে এই প্রচেষ্টার মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করছি, এ অবস্থায় আমরা মনে করছি, নৌকা প্রতীক অনেকটাই এগিয়ে ছিল এবং আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত ছিলো। আমি একজন প্রার্থী হিসেবে বলতে চাই, আমার নির্বাচনের ক্যাম্পেইনের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি নির্বাচনের মাঠে ভোটের লড়াইয়ে আমার প্রতীক অত্যন্ত সম্মানজনক, গ্রহণযোগ্য এবং সুনিশ্চিত বিজয়ের পথেই আছি। ঠিক এ অবস্থাতেই এই প্রতীকের পরাজয়কে নিশ্চিত করার জন্যে সেই পুরানো একটি গোষ্ঠি যারা এই পৌরসভার স্বার্থকে ঘিরে, পৌরসভার উন্নয়নকে ঘিরে সিন্ডিকেট তৈরি করেছে, তারা বার বার এ নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার অপচেষ্টা করে যাচ্ছে। এ সিন্ডিকেট সবসময় সক্রিয় ছিল। এই সিন্ডিকেটের কোনো দলীয় পরিচয় নেই। এটি একেবারেই অর্থনৈতিক স্বার্থের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠা সিন্ডিকেট। সে কারণেই আমরা বলছি, নির্বাচনের শুরুতেই আমি ভোটারদেরকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছি, যদি শেখ হাসিনা মনোনীত প্রার্থী হিসেবে আমি মানুষের ম্যান্ডেটে নির্বাচিত হতে পারি, তাহলে পৌরবাসীর আকাঙ্ক্ষার পৌরসভা গড়ে তোলার জন্য আমি প্রথমেই এই সিন্ডিকেটকে ভেঙ্গে দিবো। এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আমি যুদ্ধ ঘোষণা করেছি। এ কারণেই এই সিন্ডিকেট আমার নির্বাচনের মাঠে বারবার বাধাগ্রস্ত করেছে। আমি নির্বাচনে এগিয়ে থাকার বিষয়টি তারা বুঝতে পেরে তা ধ্বংস করতে এবং নির্বাচনকে প্রলম্বিত করার জন্য সক্রিয় রয়েছে। আমি মনে করি তাদের এই চেষ্টা শুধু আমাকে ঠেকানোর জন্যে নয়, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ প্রার্থীকে বাড়তি সুবিধা দেয়ার চেষ্টা করছে সিন্ডিকেট চক্রটি।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডঃ মজিবুর রহমান ভূঁইয়া। উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কাজী শাহাদাত, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গিয়াস উদ্দিন মিলন, সাধারণ সম্পাদক এএইচএম আহসান উল্লাহ, সাবেক সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী, শরীফ চৌধুরী, সহ-সভাপতি রহিম বাদশা, সোহেল রুশদী, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদাত হোসেন শান্ত, মাহবুবুর রহমান সুমন, টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি আল ইমরান শোভন, সাধারণ সম্পাদক রিয়াদ ফেরদৌস, ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, সাধারণ সম্পাদক তালহা জুবায়েরসহ বিভিন্ন পর্যায়ের সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ।

এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাডঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল বলেন, এই ষড়যন্ত্রে দল হিসেবে আওয়ামী লীগ কোনোভাবেই জড়িত নয়। সিন্ডিকেটের একটি পার্ট হিসেবে তারা নির্বাচনকে প্রলম্বিত করতে চাইছে। একটি স্বার্থান্বেষী মহল তাদের স্বার্থের কারণেই নির্বাচনকে প্রলম্বিত করছে। দল হিসেবে আওয়ামী লীগ নেত্রীর সিদ্ধান্তে অনুগত। দল হিসেবে আওয়ামী লীগ এবং তার সকল সহযোগী সংগঠন নির্বাচনের মাঠে আছে।

উল্লেখ্য, এর আগেও করোনার ভুয়া তথ্য দিয়ে এবং ভোটার তালিকায় নাম থাকা ব্যক্তিদের ভোটার না করার মিথ্যা অভিযোগ এনে গত ১৩ সেপ্টেম্বর একটি রিট করেন পৌরসভার বর্তমান মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদের ভাগনে মাহবুব আলম আখন্দ এবং মেয়রের ব্যক্তিগত কর্মকর্তার ভাই মোঃ হাসিবুল হাসান। যদিও রিটকারীরা এ সম্পর্কে জানেন না বলে দাবি করেন।

সর্বাধিক পঠিত